তারকাদের বিষণ্ণতার গল্প

0
30

তারকা মানেই অনেক জনপ্রিয়তা, বিলাসিতা, নাম, যশ, অর্থবিত্ত এবং আলো ঝলমলে উপস্থিতি। তাই আমরাও ধরে নিই, সুখী হওয়ার সব উপকরণই যখন তাঁদের কাছে আছে তখন বিষণ্ণতা, দুঃখবোধ তাঁদের স্পর্শ করে না। কিন্তু পর্দার বাইরেও তাদের একটা মনুষ্যজীবন আছে, যেখানে অনেকেই বিষণ্ণতার সাথে লড়ছেন। কিন্তু এই বিষণ্ণতা নিয়ে জনসমক্ষে কথা বলার মাধ্যমে তাঁরা এটাই প্রমাণ করেছেন যে, বিষণ্ণতা প্রতিকারযোগ্য এবং যে কেউ বিষণ্ণতা নামক মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে পারেন এবং এটা নিয়ে কথা বলার কিংবা চিকিৎসা করা একদমই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। বিষণ্ণতায় ভোগা এইসব তারকাদের নিয়ে আমাদের এবারের ‘তারকার মন’ পর্বটি সাজিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর চাইল্ড অ্যান্ড এডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি ডা. সাদিয়া আফরিন রেসিডেন্ট এমডি।

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
অস্কার বিজয়ী এই অভিনেত্রী ছিলেন একজন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত কিশোরী। এই বিষণ্ণতার মাত্রা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে সেই সময় নিজের ক্ষতি করা, নিজেকে আঘাত করা এগুলো ছিল নিত্যকার ব্যাপার। এমনকি নিজেকে মেরে ফেলার জন্য নিজেই একজন লোকও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু পরে বিষণ্ণতার এই করাল গ্রাস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি এবং সফলভাবেই তাঁর ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। বিষণ্ণতা মানেই যে জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয় সেটার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলেন তিনি।

মাইকেল ফেল্পস
অনেকেই শুনলে অবাক হবেন যে বিশ্বখ্যাত সাতারু মাইকেল ফেল্পস চরম মাত্রার বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন ২০১২ সালে। যার অর্জন অলম্পিকের ২৮টি মেডেল, যার মধ্যে ২৩টি গোল্ড মেডেল। সেই তিনি নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন যে তিনি আর কিছু করতে পারবেন কিনা। তাঁর মনে হতো সবকিছুই শেষ। নিজেই বলেন ‘আমার মনে হতো, নতুন কোনোদিন আমি আর দেখতে চাই না। এখনই সব শেষ হওয়া উচিত।’ এমনকি নিজের কাছের মানুেষর কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি, মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। অতঃপর ২০১৪ সালে তিনি উপলব্ধি করেন তাঁর সাহায্য দরকার; এটা একটা মানসিক রোগ। তিনি একটা রিহ্যাব ক্লিনিকে  চিকিৎসা নিলেন এবং পুনরায় নিজের ক্যারিয়ার ফিরে আসার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলেন। এ বিষণ্ণতার প্রভাব থেকে বের হওয়ার জন্য তিনি কৃতিত্ব দেন রিহ্যাব সেন্টার আর তাঁর পরিবারকে।

জে কে রাওলিংস
হ্যারি পটার লেখার আগে দারিদ্র্য, বেকারত্বের সাথে লড়াই করে তিনি তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন এবং তিনি ছিলেন সিঙ্গেল মাদার। এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন যে আত্মহত্যার চিন্তা পর্যন্ত করেছিলেন। কিন্তু তিনি এই সমস্যা নিয়ে লুকিয়ে থাকেননি। তিনি কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সিবিটি) নেন এবং তাঁর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পান এবং এরপরই তিনি হ্যারি পটার লিখতে শুরু করেন।

ব্রিটনি স্পেয়ার্স
জনপ্রিয় এই গায়িকা প্রসব পরবর্তী বিষণ্ণতায় ভুগছিলেন এবং ঐ সময় তাঁর বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ায় নানা মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন। এ সময় তিনি মানসিক চিকিৎসা নেন এবং তাঁর পরিবার, দুই পুত্র এবং বিশ্বস্ত বন্ধুরা তাঁকে এই বিষণ্ণতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন। বিষণ্ণতা দূর করার জন্য পরিবার বা কাছের মানুষদেরও সাহায্য দরকার বলে মনে করেন তিনি।

দিপীকা পাড়ুকোন
ক্যারিয়ারের একটি পর্যায়ে দিপীকা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তিনি বলেন ‘প্রথমে ভেবেছিলাম এটা দৈনন্দিন চাপ, এজন্য কাজে আরো বেশি মনযোগী হলাম, মানুেষর মাঝে থাকলাম, সাময়িক মুক্তি পেলাম কিন্তু খারাপ লাগাটা চলে যায়নি, প্রায়ই মনোযোগ থাকত না, ভেঙে পড়তাম সহজেই, তখন বুঝতে পারলাম আমার মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেয়া উচিত। এটা নিজে নিজে দূর করা অনেক কঠিন।’

আনুশকা শর্মা
আনুশকা শর্মা মানসিক সমস্যা নিয়ে খোলামেলা কথা বলার ব্যাপারে অনেক জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মানসিক সমস্যা লুকানোর বা এটা নিয়ে লজ্জা বোধ করার কিছু নেই। আমি অনেক কিছু নিয়েই মানসিক দু:শ্চিন্তা বা চাপে ভুগতাম। আমি মনে করি এটা আমি পারিবারিকভাবে পেয়েছি, এটা একটা সমস্যা এবং আমি এর চিকিৎসা করিয়েছি এবং এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। পেট ব্যথা হলে মানুষ ডাক্তারের কাছে যায় এবং সেটা নিয়ে কেউ লজ্জা পায় না তাহলে এক্ষেত্রে কেন নয়?’

ডী ওয়য়ানে জন্সন দি রক (Dwayne Johnson)
প্রফেশনাল রেসলার এই জনপ্রিয় তারকা বিষণ্ণতার সঙ্গেও সফলতার সাথেই লড়াই করেছেন। তিনি তাঁর ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কেউ যদি অবসাদ বা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয় তাহলে মনে রাখবে তুমি একা নও। কেউ একজন তোমাকে টেনে তুলবে এই অন্ধকার থেকে এবং বলবে সব ঠিক হয়ে যাবে।’ সুতরাং খ্যাতি এবং সৌভাগ্য বিষণ্ণতা নামক মানসিক রোগের প্রতিষেধক নয়। ক্যান্সার, ডায়াবেটিসের মতো বিষণ্ণতাও যে কারো হতে পারে। এটা নিয়ে কথা বলায় বা সাহায্য খোঁজায় কোনো লজ্জা নেই। তারকাদের নিজেদের গল্প আমাদের সেই অনুেপ্ররণাই দেয়।

(মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া)

Previous articleঘুম ভাঙলেই মানুষ স্বপ্ন ভুলে যায় কেন?
Next articleমনের খবর জানুয়ারি সংখ্যা বাজারে এসেছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here