অতিরিক্তি হস্তমৈথুন থেকে মুক্তির উপায়

অতিরিক্তি হস্তমৈথুন থেকে মুক্তির উপায়

হস্তমৈথুন থেকে মারাত্মক ভাবে মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। খেয়াল রাখবেন হস্তমৈথুন যেন নেশায় পরিণত না হয়। হস্তমৈথুন যাদের নেশায় পরিণত হয়েছে এবং তা কমিয়ে দিতে চাইছেন, তাদের জন্য আজকের আলোচনা।

কিভাবে ছাড়বেন হস্তমৈথুন?

পর্ণ কালেকশন পুড়িয়ে ফেলুন: যদি মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন থেকে সত্যিই মুক্তি পেতে চান তাহলে পর্ণ মুভি বা চটির কালেকশন থাকলে সেগুলো এক্ষুনি পুড়িয়ে ফেলুন। হার্ডড্রাইব বা মেমরি থেকে এক্ষুনি ডিলিট করে দিন। ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে ব্রাউজারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল-এ গিয়ে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক করে দিন।

শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করুন: কোন কোন সময় হস্তমৈথুন বেশি করেন, সেই সময়গুলো চিহ্নিত করুন। বাথরুম বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি উত্তেজিত থাকেন, বা হঠাৎ কোন সময়ে যদি এমন ইচ্ছে হয়, তাহলে সাথে সাথে কোন শারীরিক পরিশ্রমের কাজে লাগে যান। যেমন- বুকডাউন বা অন্য কোন ব্যায়াম করতে পারেন। যতক্ষণ না শরীর ক্লান্ত হয়ে যায় অর্থাৎ হস্তমৈথুন করার মত আর শক্তি না থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই কাজ বা ব্যায়াম করুন।

ঠান্ডা পানি দ্বারা গোসল করুন: গোসল করার সময় এমন ইচ্ছে জাগলে শুধু ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন এবং দ্রুত গোসল ছেড়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসুন।

অলসভাবে বসে থাকা থেকে বিরত থাকুন: সব সময় কোন না কোন কাজে ব্যস্ত থাকুন। আগে থেকে সারাদিনের শিডিউল ঠিক করে রাখুন। তারপর একের পর এক কাজ করে যান। হস্তমৈথুনের চিন্তা মাথায় আসবে না।

বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময় কাটান: যারা একা একা সময় বেশি কাটান, যাদের বন্ধুবান্ধব কম, দেখা গেছে তারাই ঘনঘন হস্তমৈথুন বেশি করে। একা একা না থেকে বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটান। একা একা টিভি না দেখে বন্ধুদের সাথে কিছু করুন। বন্ধুবান্ধব না থাকলে ঘরে বসে না থেকে পাবলিক প্লেসে বেশি সময় কাটান।

হস্তমৈথুনে চরম ভাবে এডিক্টেড হলে কখনোই একা থাকবেন না। ঘরে সময় কম কাটাবেন, বাইরে বেশি সময় কাটাবেন। জগিং করতে পারেন, সাইকেল নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। ছাত্র হলে ক্লাসমেটদের সাথে একসাথে পড়াশুনা করতে পারেন। লাইব্রেরি বা কফি শপে গিয়ে সময় কাটাতে পারেন।

সৃষ্টিশীল কাজ করুন: বসে না থেকে সময়টা কাজে লাগান। জীবনকে সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড দিয়ে ভড়িয়ে তুলুন। সব সময় নতুন কিছু করার দিকে ঝোঁক থাকলে হস্তমৈথুনের ব্যাপারটা মাথা থেকে দূর হয়ে যাবে। এই সাথে আরো সব বাজে জিনিসগুলোও জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। নতুন ভাবে জীবনকে উপলব্ধি করতে পারবেন, বেঁচে থাকার নতুন মানে খুঁজে পাবেন।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত খেলাধূলা ও ব্যায়াম করুন। এতে মনে শৃঙ্খলাবোধের সৃষ্টি হবে। নিয়মিত হাঁটতে পারেন, দৌঁড়াতে পারেন, সাঁতার কাটতে পারেন, জিমে গিয়া ব্যায়াম করতে পারেন। বিকেলে ফুটবল, ক্রিকেট- যা ইচ্ছে, কিছু একটা করুন।

শখের কাজে মেতে উঠুন: নতুন কোন শখ বা হবি নিয়ে মেতে উঠুন। বাগান করতে পারেন, নিজের রান্না নিজে করতে পারেন। আপনি যা করতে বেশি পছন্দ করেন, সেটাই করবেন। কিছুদিন পর আবার আরো নতুন কিছু করতে বা জানতে চেষ্টা করুন।

ধৈর্য ধরার অভ্যাস গড়ে তুলুন: ধৈর্য ধরতে হবে। একদিনেই নেশা থেকে মুক্তি পাবেন এমনটা হবে না। একাগ্রতা থাকলে ধীরে ধীরে যে কোন নেশা থেকেই বের হয়ে আসা যায়। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাবে। তখন হতাশ হয়ে সব ছেড়ে দেবেন না। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার আগাতে হবে।

নিজেকে পুরস্কৃত করুন: ভালো কাজ করলে নিজেই নিজেকে পুরস্কৃত করবেন। ভালো কোন জায়গাত ঘুরতে যাবেন। ভালো কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে আসবেন। নিজেকে ছোট ছোট গিফট কিনে দেবেন এবং সেগুলো চোখের সামনে রাখবেন এবং মনে করবেন যে অমুক ভালো কাজের জন্য এই জিনিসটা পেয়েছিলেন।

পর্ণ ব্লকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করুন: কম্পিউটারে পর্ণ ব্লকিং সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিন। আজব একটা পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখেন যাতে পরে ভুল যান। অথবা কোন বন্ধুকে দিয়ে পাসওয়ার্ড দিন। নিজে মনে রাখবেন না।

খারাপ বন্ধু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন: যারা বাজে বিষয় বা মেয়েদের নিয়ে অথবা পর্ণ মুভি বা চটি নিয়ে বেশি আলোচনা করে, তাদেরকে এড়িয়ে চলুন।

ঘুমানোর উত্তম নিয়ম মানুন: ঘুমানোর সময় ইসলামী আদবগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন। যেমন- ঘুমানোর দোয়াগুলো পড়া, ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শোয়া, পেটের উপর ভর দিয়ে না ঘুমানো

হস্তমৈথুন থেকে বিরত থাকার আরও কিছু কৌশল-

উপুর হয়ে ঘুমাবেন না, ফোনসেক্স এড়িয়ে চলুন, যতটা সম্ভব নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, বাড়িতে বা রুমে কখনো একা থাকবেন না, বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবার সাথে বেশি সময় কাটান, বিকেলের পরে উত্তেজক ও গুরুপাক খাবার খাবেন না। কোনদিন করেন নাই, এমন নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন।

ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। ভিডিও গেম খেলতে পারেন। এটাও হস্তমৈথুনের কথা ভুলিয়ে দেবে। স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন। ফলমূল-শাকসবজি বেশি খাবেন। যখন তখন বিছানায় যাবেন না। কোথাও বসলে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে বসুন।

যখনি মনে সেক্সুয়াল চিন্তার উদয় হবে, তখনই অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন। গার্লফ্রেণ্ড বা প্রেমিকাদের সাথে শুয়ে শুয়ে, নির্জনে বসে প্রেমালাম করবেন না। সন্ধ্যার সময়ই ঘুমিয়ে পড়বেন না। কিছু করার না থাকলে মুভি দেখুন বা বই পড়ুন। হস্তমৈথুন একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে না। নিজেকে বোঝাবেন যে মাঝে মাঝে করবেন। ঘনঘন নয়।

যেসব ব্যাপার আপনাকে হস্তমৈথুনের দিকে ধাবিত করে সেগুলো ছুড়ে ফেলুন, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। অফুরন্ত সময় থাকলে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ুন। দেশের জন্য সেবামূলক কাজ করতে পারেন। বাথরুম শাওয়ার নেয়ার সময় হস্তমৈথুনের অভ্যাস থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করুন।

ছোট ছোট টার্গেট সেট করুন। ধরুন প্রথম টার্গেট টানা দুইদিন হস্তমৈথুন করবেন না। দুইদিন না করে পারলে ধীরে ধীরে সময় বাড়াবেন। যখন দেখবেন খুব বেশি হস্তমৈথুন করতে ইচ্ছে হচ্ছে এবং নিজেকে সামলাতে পারছেন না, বাইরে বের হয়ে জোরে জোরে হাঁটুন বা জগিং করুন। হাতের কব্জিতে একটা রাবারের ব্যান্ড লাগিয়ে নেবেন। সেক্সুয়াল চিন্তার উদয় হলে তুড়ি বাজাতে পারেন, পা দোলাতে পারেন- এতে কুচিন্তা দূর হয়ে যাবে।

ঘুমে সমস্যা হলে তখন সুগার ফ্রি মিন্টস্‌ বা ক্যাণ্ডি চিবাতে পারেন। হালকা কিছু খেলেও তখন উপকার হয়। তবে ঘুমিয়ে পড়ার আগে দাঁত ব্রাশ করে নেবেন। কম্পিউটারে পর্ণ দেখতে দেখতে হস্তমৈথুন করলে কম্পিউটার লিভিং রুমে নিয়ে নিন। যাতে অন্যরাও দেখতে পায় আপনি কী করছেন। এতে পর্ণ সাইটে ঢোকার ইচ্ছে কমে যাবে। আর হস্তমৈথুন করার অভ্যাসও কমে যাবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleশিশুর অনাকাঙ্খিত আচরণ ও আমাদের করণীয়
Next articleঅভিভাবকদের নিজেদের যত্ন নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here