ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী মানসিকরোগে আক্রান্ত

সন্ত্রাসী ঘটনা চোখের সামনে ঘটলো, তারপরই মানসিক সমস্যা। সম্প্রতি ফ্রান্সে ঘটে যায় মারাত্মক সন্ত্রাসী হামলা। বাস্তিল দিবসের উৎসবে সন্ত্রাস হামলায় নিহত হয় অনেকে। ঘটনাস্থলে শারীরিক ভাবে আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও দিনশেষে শারীরিকভাবে আহত না হওয়া মানুষরা আহত হয়েছে মানসিকভাবে। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া এরকম ভয়ানক হামলার দৃশ্য, অসংখ্য মানুষের লাশ, রক্ত, আর্তনাদ, আতঙ্কিত মানুষের ছোটাছুটি দেখার পর তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নারী ও শিশুদের মধ্যে যারা এই ঘটনার সাক্ষী তাদের অবস্থা আরো খারাপ। বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছে এই ঘটনার স্মৃতি। মানসিক চাপের দরুন নিদ্রাহীন অবস্থায় থাকছে দিনের পর দিন, বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন।
১৩ বছর বয়সী Piareji Tekna এবং তার মা Marina এই ঘটনার সাক্ষী। তিনি বলেছেন,”আমি আমার সন্তানের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি তার দুই চোখে শুধু ভয় আর আতঙ্কই দেখতে পেয়েছিলাম।” পরবর্তিতে মা ও সন্তান উভয়কেই নিতে হয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ঘটনার পর আশেপাশের সকল মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল রোগীতে পরিপূর্ণ। স্থানীয় মনোবিজ্ঞানী Isabella Buchet বলেছেন,”সেদিন যারা চোখের সামনে এরকম হত্যাকান্ড দেখেছ তাদের অনেকে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে একা থাকতেই পারছে না আবার অনেকে দরজা জানালা লাগিয়ে ঘরের ভিতর অবস্থান করছে।” তার মতে এরকম ভয়ানক হামলা চোখের সামনে ঘটলে যেকোনো বয়সের মানুষের মানসিক সমস্যা হতে পারে। ঘটনার পরপরই এর ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কে পড়তে শুরু করে। ফলে সেই ব্যক্তিরা নিজেকে সাহায্যহীন, সঙ্গীহীন মনে করতে থাকে। যদিও সকলেই তার আশেপাশে অবস্থান করছে। ফলে প্রচন্ড ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ঘরের কোনে অন্ধকারে পড়ে থাকে ও অকারণে চিৎকার করে থাকে।
যাদের কোনো আত্বীয় হামলার শিকার হয়েছে এবং তা চাক্ষুস দেখেছে তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। গত ১বছরে ফ্রান্সে এরকম বড় ৩টি সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে।এসব ঘটনাস্থল থেকে সাময়িকভাবে চলে আসতে বা পালিয়ে আসতে পারলেও পরবর্তিতে মানসিক দিক দিয়ে তারা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে তারা আর স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারছে না। কেউ কেউ পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।যারা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে তারা কোনো কারণে ঘটনাস্থলে গেলে বা টিভিতে অন্য কোনো সন্ত্রাসী হামলার সংবাদ শুনলে পুণরায় উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। শুধু ফ্রান্সেই নয় পুরো বিশ্বব্যাপি এরকম চাক্ষুস দর্শনার্থীদের মানসিক বিপর্যয় আজ চরমে উঠেছে।
Nation Institute For Post Traumatic Stress Disorder এর গবেষকরা দেখিয়েছেন যে World Trade Centre এ হামলার পর ম্যানহ্যাটন শহরে ঘটনার ৫-৮ সপ্তাহ পরেও প্রায় ৭.৫ মানুষ Tramatic Stress Disorder এ ভোগে।এক পর্যায়ে এ সংখ্যা ৯.৭ এ চলে আসে। এরকম ঘটনার পর মানুষজন তাদের নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ভয়, আতঙ্ক ও হতাশার ফলে তারা নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে নিয়ে যায় ধ্বংসের শেষ সীমায়।
আব্দুল্লাহ আল মামুন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous articleমেয়েটার প্রতি আমার কোনো গভীর অনুভূতি ছিল না
Next articleআমি সব কিছু অপেক্ষাকৃত দ্রুত ভুলে যাচ্ছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here