মেয়েটার প্রতি আমার কোনো গভীর অনুভূতি ছিল না

সমস্যাঃ
আমি এইচএসসি (বিজ্ঞান বিভাগ) ২য় বর্ষের ছাত্র। আমার একটা মেয়ের সাথে রিলেশন ছিল, মেয়েটি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে। যাই হোক মেয়েটি আমার থেকে ৭ বছরের বড়। প্রথমদিকে যখন মেয়েটার সাথে কথা বলতাম তখন তাকে পছন্দ হত না, তাও কথা বলতাম তার সাথে। আমি সেই সময় তার সাথে ২/৩ দিন পরপর কথা বলতাম বা ফেসবুকে চ্যাটিং করতাম, অর্থ্যাৎ সেই সময় মেয়েটার প্রতি আমার কোনো গভীর অনুভূতি ছিল না। তারপর আস্তে আস্তে আমাদের রিলেশনটা ভালবাসায় রূপ নেয়, আমি তার প্রতি আনেক দুর্বল হয়ে পড়ি এবং প্রতিদিন কথা না বললে থাকতে পারি না। আমাদের ফোনে কথা বলা আস্তে আস্তে অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছিল, প্রতিদিন গড়ে ১০-১২ঘন্টা, আস্তে আস্তে আমি আমার স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে চলে যাই। মেয়েটার সাথে সারাদিন কথা বলতে বলতে আমি আমার কলেজ, প্রাইভেট মিস করতে থাকি, কেননা তার সাথে কথা বলা ছাড়া আমার কোনো কিছুই ভাল লাগত না। আমি বুঝতাম না তার প্রতি আমার ভালবাসা ছিল নাকি যৌন কামনা ছিল। মেয়েটিকে যখন ভিডিও কল করতাম তখন ভিডিও কলে কোনো অশ্লীল কাজ করা হলেই তা স্ক্রিন ভিডিও করে মেমোরিতে সংরক্ষণ করে রাখতাম। এক পর্যায়ে আমি মেয়েটিকে রুম ডেট করার প্রস্তাব দেই, সে রাজিও হয়, কিন্তু আমরা যখনই রুম ডেট করার জন্য দিন নির্ধারণ করি, তখনই সে তার কোনো একটা সমস্যা দেখায়ে রুম ডেট এ আসতোনা। এরকমভাবে মেয়েটি আমাকে ৫ মাস ঘুরালে আমি তাকে বলি যে তুমি যদি আজ রুম ডেট এর জন্য না আসো, তাহলে আমি তোমার বাসায় গিয়ে তোমার সামনে সিনক্রেট করব। এরপর সে আমাকে ছুয়ে প্রমিস করে বলে, আজ সে রুম ডেট এর জন্য আসবেই,  কিন্তু মেয়েটি সেই দিনও আসলো না। সে আমার সাথে যেকোনো সময় দেখা করতে আসতো, কিন্তু রুম ডেট শুনলেই তার একটা  না একটা সমস্যা দেখাতো। আমি আমার কথা মত মেয়েটির বাসায় যাই, তাকে না পাওয়ায় সিনক্রেট না করেই চলে আসতে হয় এবং সেই দিন থেকে সে ফোন বন্ধ করে রাখে। তারপর ১ মাস পর রাস্তায় একদিন দেখা হয়েছিল,  তাকে দেখে আমি অধিক শোকে পাথর হয়ে গেলাম, সে আর একটা ছেলের সাথে ঘুরছে। আমি তার সাথে ভাল ভাবে কথা বলি এবং আমাদের রিলেশনটা চলমান করবার কথা বলি, কিন্তু সে আমাকে খুবই বাজে ভাবে কথা বলে ফিরিয়ে দেয়। এখন আমার মধ্যে হতাশা, রাগ ও মানসিক সমস্যা কাজ করছে।
হতাশা:
১. আমি অনেকটা বোকা ছেলে, তাইতো আমি মেয়েটার সাথে রিলেশন করেছি।
২. আমার প্রায় ৬ মাস পড়াশুনায় গেপ/ঘাটতি হয়েছে (মেয়েটার সাথে রিলেশন করার জন্য)।
৩.আমি খুবই ভাল/মেধাবী ছাত্র না।
রাগ:
১. মেয়েটা আমাকে কথা দিয়েছিল সে কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না, কিন্তু সে আজ অন্য একটা ছেলের সাথে রিলেশনযুক্ত এবং সারাদিন ফেসবুকে থাকে, সবার সাথে চ্যাটিং করে, (আমি ছাড়া)। এক কথায়, মেয়েটা অনেক সুখী আছে, এটা আমার সহ্য হয় না।
২.সে আমার সাথে যে বাজে ব্যবহার করেছে, সেগুলো মনে পড়লে, ইচ্ছা করে তার সব অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে দিয়ে দেই এবং তার পরিবারের কাছে পাঠাই।
মানসিক সমস্যা:
১.আমি মেয়েটিকে কোনভাবেই ভুলে যেতে পারছি না।
২.তার কথা মনে পড়লে, পড়াশুনা করতে পারি না।
৩.তাকে আমি প্রায় প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখি।
৪.সে আর কখনই ফিরে আসবে না, অর্থ্যাৎ সে এখন অন্য কারও এটা আমি জানি, কিন্তু আমি মানসিকভাবে মানতে পারছি না।
৫.প্রায় ২ মাস হয়ে গেল, আমি তাকে সম্পূর্ণভাবে ভুলে যেতে পারি নাই।
পরিকল্পনা:
১.আমি ভবিষ্যতে একজন ভাল মানুষ হতে চাই।
২. আগের মত আবারও ভালভাবে পড়াশুনা করতে চাই।
৩.মেয়েটার সাথে রিলেশন থাকাকালে সে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো ভাবে আমাকে কস্ট দিত, তার ভাল দিকও ছিল (খুবই কম), যাই হোক আমি তাকে সম্পূর্ণ রূপে ভুলে যেতে চাই।
মানসিক সমস্যাদির জন্য ভালবাবে  পড়াশুনা করতে পারছি না। এখন কিভাবে আমি এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো জানালে উপকৃত হব।
 
পরামর্শঃ
তোমার চিঠি থেকে যেটা মন হচ্ছে প্রথম থেকে মেয়েটিকে তোমার ভাল লাগত না এবং পরের দিকে ওর সাথে কথা বলতে বলতে অভ্যস্ত হয়ে গেছ, আবার তোমার চিঠির মাঝখানে এটাও বলেছ, মেয়েটির প্রতি তেমার ভালবাসা নাকি যৌন আকর্ষন সেটা তুমি বুঝতে না। যৌন সম্পর্কের প্রত্যাশায় তুমি তার সাথে আগাচ্ছিলে পরের দিকে তুমি যৌন বিষয়গুলো নিয়ে মেয়েটিকে আগ্রহ দেখাচ্ছিলে সেটাতে সে তোমাকে প্রত্যাখ্যান করছিল। এখানে আসলে তুমি নিজেকেই প্রশ্ন কর ওর প্রতি তোমার ভালবাসা ছিল নাকি যৌন আকর্ষন। কারণ যদি ভালবাসা থাকে তাহলে ভালবাসার মানুষটির মতামতকে গুরুত্ব দিবে, সে কি চাচ্ছে কি পছন্দ করছে সে ব্যাপারগুলোকে শ্রদ্ধা করবে। তুমি কিন্তু বার বার চাপ প্রয়োগ করছিলে। মেয়েটি হয়তো সেই বিষয়টিতে confused ছিল যে সত্যিকার অর্থে তুমি তাকে ভালোবাস না যৌন বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিচ্ছ। পরবর্তীতে তুমি ওর বাসায় গিয়ে সিনক্রেইট করবে এ বিষয়টিতে তোমাকে manage করার জন্য promise করেছে আদৌ কিন্তু সে সরাসরি তোমার সাথে এ ধরনের ক্রিয়াকলাপে রাজী ছিল না। এক পর্যায়ে তুমি যখন সত্যিই বাসায় চলে গেছ তোমার প্রতি শ্রদ্ধা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। যে কোনো সময় তোমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কটিকে হুমকি দিয়ে তার মনের বিরুদ্ধে কাজটি করতে পার এটা ভেবে তোমার ভালবাসার প্রতি তার সন্দেহ তৈরি হয়েছে এবং এজন্যই মেয়েটি তোমার কাছ থেকে সরে গেছে এবং আসলেও ব্যাপারটি তাই। এছাড়া তুমি বলেছ মেয়েটি তোমার চেয়ে ৭ বছরের বড় এটাও একটা অসম relationship পাশাপাশি তুমি এটাও বলেছ মেয়েটির ভালো কিছু দিক আছে তবে এটা ব্রাকেটে লিখেছ যে খুবই কম তার মানে তুমি ওর ভাল দিককে অত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছ না, এতেও তুমি ওকে ভালবাস কিনা এ ব্যাপারে আমি ভীষন সন্দীহান। সেক্ষেত্রে বিষয়টি এমন হতে পারে তুমি ওকে নিয়ে অনেক কল্পনা করেছ অনেক দূর পর্যন্ত চিন্তা করেছ এবং ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রচন্ড আগ্রহ জন্মেছিল তোমার লক্ষ্য বাধাপ্রাপ্ত হওয়া ও শেষ পর্যন্ত পূর্ণ না হওয়াতে এবং মেয়েটিকে পরবর্তীতে অন্য একটি ছেলের সাথে দেখাতে তুমি এখানে পরাজিত বোধ করছ। এটা ভালবাসা না পরাজিত বোধ সেই জায়গাটিতে তুমি clear হও। সেই জায়গাটির থেকে তুমি বেরিয়ে আসার চেষ্টা কর, এছাড়া মাঝে মাঝে যে তোমার প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করে এই বিষয়টিও ভালবাসার ব্যাখ্যার মধ্যে পড়ছে না। সুতরাং তুমি নিজেকে বোঝার আগে চেষ্টা কর। আর মেয়েটিকে হুমকি দেওয়া, তোমার কাছে মেয়েটির যে ভিডিওগুলো আছে সেটা প্রকাশ করা এধরনের কাজগুলো নিজেকে আরো ছোট করার বিষয় হবে। আমার মনে হয় তুমি বিষয় গুলো বুঝতে পেরেছ। আর সম্পর্কের জায়গায় তুমি আসলে ততটা determine ছিলে না যে তুমি ওকে ভালবাস মেয়েটাও সেটা বুঝতে পেরেছে সেজন্যই হয়ত সে তোমাকে তার যোগ্য সঙ্গী মনে করেনি শেষ পর্যন্ত সরে গেছে। হুমকিটাকেও সে মানতে পারেনি। তুমিও মেনে নাও এই বয়সটাতে এই ধরনের fascination আসতেই পারে, এ ধরনের সম্পর্কে তুমি যে আচরণ করেছ সেই জায়গাটিতে ভুল ছিল। ভুল হতেই পারে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুলের মধ্যে জড়াবে না এই বিষয়টি চিন্তা করে আগাবে আমি এটাই আশা করছি। ভবিষ্যতে তুমি তোমার উপযুক্ত সঙ্গী পেয়ে যাবে সেই ভরসা রেখে তুমি তোমার পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। তুমি তোমার সমস্যা গুলো খুলে বলেছ এবং এটার সমাধান জানতে চেয়েছ বলে তোমাকে ধন্যবাদ।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleইন্টারনেট ব্যবহারে মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি!
Next articleফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলার অনেক প্রত্যক্ষদর্শী মানসিকরোগে আক্রান্ত
সহকারী অধ্যাপক(ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি) মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here