পড়ালেখায় বকুনি, সন্তানের মানসিক চাপ

0
226

অনেক অভিভাবকই মনে করেন, বকুনিই একমাত্র পথ বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করতে। নিজের রাগ-বিরক্তি সন্তানের উপর উগরে দিয়ে তারা এক ধরণের তৃপ্তি বোধ করেন। পড়াশোনার জন্য প্রতিদিন বকুনি দিলে শিশুরা বিষন্ন হয়ে পড়ে। কারণ অধিকাংশ শিশুরা নিজেদের মানসিক চাপের কথা সব সময় বলতে পারে না। শিশুর আচরণে ক্ষতিকর পরিবর্তন আসে, যা ভবিষ্যতের জন্য খুব খারাপ।

ক্ষতিকর দিক

আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে শিশুটি। যেকোনো কাজ করতে গেলেই ভয় পেতে পারে সে। অতিরিক্ত বেখেয়ালি হয় যায় অনেকে। প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েও পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্রে সে কোনো সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধা বোধ করে।

অহেতুক ভয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে বাচ্চাদের কথা বলাও কমে যায় অনেক সময়ে। নিজের মতোই থাকে এমন বহু শিশু। এর ফলে পরবর্তীকালে একাকিত্বেও ভুগতে পারে আপনার সন্তান।

সন্তানকে পড়াশোনায় মনোযোগী করার কৌশল

প্রথমেই পড়ার উপযোগী পরিবেশ তৈরি করুন। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ কাম্য। পড়ার স্থানটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। যে সব বাচ্চাদের বয়স কম, ৬-৭ বছরের মধ্যে তাদের কিন্তু পাঠ্য বইয়ের পড়া পড়ানোর চেয়ে মানসিক শিক্ষা ও বিকাশের প্রয়োজন অনেক বেশি। তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য খেলাধুলা, সুস্থ স্বাভাবিক বিনোদনমূলক কাজের সাথে সম্পৃক্ত করুন। পাশপাশি সামাজিকতা ও নৈতিকতা শিক্ষা দিন।

পাঠ্যবইয়ের পড়াশোনা বাচ্চার উপর চাপিয়ে না দিয়ে বরং তার আনন্দের উৎস হিসেবে দেখান। সে যদি কোনো পড়া মুখস্থ করতে না পারে তাহলে বকাঝকা না করে, তার মনোযোগে পরিবর্তন আনুন। কিছুটা বিরতি দিয়ে কিছু সময় পরে আবার তাকে সহজ সহজ উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করুন।

পড়াশোনার অমনোযোগিতার কারণগুলো কি কি, খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। যেসব কাজ তাকে পড়া থেকে দূরে রাখছে সেগুলো থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে আনুন। যদি তা টেলিভিশন বা মোবাইল হয়, তাহলে নিয়ম এর মাঝে নিয়ে আসুন। তাকে ছোট ছোট উপহার দিন। দেখবেন মনোযোগী হবে।

এ ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সৃজনী আহমেদের সাথে। মনের খবর’কে তিনি জানান, ‘সাধারন ধারনা বাচ্চাদের বকা ঝকা বা শাস্তি দেয়া হলে তাদের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। কিন্তু আসলে মানব শিশুর আচরন বিপরীতভাবে কাজ করে৷ বকা ঝকা দিলে বরং সেটা ‘এভার্সিভ’ বা তিক্ত অভিজ্ঞতা হিসেবে শিশু গ্রহন করে। এতে করে সেই আচরন সে আরো কমিয়ে দেয়। বরং উৎসাহ, প্রশংসা, পুরষ্কার, কৌতুহলী মন তৈরী করা এসবের প্রভাবে শিশু পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হয় বেশি এবং একবার মজা পেয়ে গেলে শিশুরা নিজেই পড়ালেখা করতে চায়, জানতে চায়। শারীরিক শাস্তি, বকাঝকা এসব দিয়ে সাময়িক ভাবে হয়তো শিশুকে পড়ালেখা জোর করে করানো যায়, কিন্তু সেটা স্রেফ বাচ্চাটা ঝামেলা এড়াতে করে। পরে কখনও সেই অভিভাবক এই শাস্তি না দিতে পারলে বা শিশু সেই শাস্তি থেকে অন্য উপায়ে বাঁচতে পারলে আর পড়ালেখা করতে চায়না।

‘কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো’ বা ‘গরু পিটিয়ে মানুষ’ করাটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে এসেছে ঠিকই, কিন্তু মনে করে দেখুন, নিজেদেরও এটা নিয়ে মনে তিক্ততাই আছে৷ এখনকার শিশু কিশোররা এই পদ্ধতিগুলোর প্রয়োগ মেনে নিতে পারেনা৷ যখন দেখে তার পাশ দিয়ে আরেকটা বাচ্চা স্কুলে একপাতা লিখলেই ‘স্টার’ পায় বা মিস তাকে অনেক প্রশংসা করেন, সেখানে তার নিজের মা দুই পাতা লিখলে বানান ভুলের জন্য দিচ্ছেন তিনটা চড়, তখন তার কাছে পড়ালেখাকে বিষাক্ত কিছু মনে হয় যেটা মাবাবার সাথে তার দূরত্ব তৈরী করছে’।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

 

Previous articleবিএসএমএমইউ’র সহকারী পরিচালক ডা. আহসানুল কবীর সুমন হৃদরোগে আক্রান্ত
Next articleপ্রতারক প্রেমিকার কথা চিন্তা হয় শুধু

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here