নেতিবাচক সমালোচনা ও অন্যের সাথে তুলনা শিশুর আত্মবিশ্বাস কমায়

আত্মবিশ্বাস জীবনে সফলতা অর্জনের অন্যতম চাবিকাঠি। একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ নিজের কাজ ও যোগ্যতা সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করার কারণে তাদের অনুভূতিতে সাহস, উৎসাহ, আনন্দ অনুভব করেন। যার ফলে কোনো কাজের ক্ষেত্রে এই অনুভূতিগুলোর কারণে ব্যক্তি কাজটি থেকে পিছপা না হয়ে এগিয়ে যান, ফলে কাজটিতে সফল হন।

একজন কম আত্মবিশবাসী মানুষ বা যার কোনো আত্মবিশ্বাসই নেই তিনি কাজ করা কিংবা কোনো একটি উদ্যোগ নেয়ার আগেই ভাবেন, কাজটি হবে না, আমি মনে হয় পারব না, পারলেও সেটা ভালো হবে না। এই না বোধক চিন্তা তার আবেগের মধ্যে অনিহা, অনাগ্রহ, ভয়, লজ্জা এসব অনুভূতির উদ্রেক করে। ফলে সত্যিই তিনি এসব আবেগ নিয়ে কাজটি ভুল করেন অথবা কাজটি করেনই না। ফলাফল স্বরূপ কাজে আংশিক সার্থক বা পুরোপুরিই ব্যর্থ হন।

কাজের সফলতা সবসময় ব্যক্তির বাস্তব যোগ্যতা থাকলেই হয় না, অনেক মানুষ বাস্তবে খুবই মেধাবী যোগ্যতা সম্পন্ন স্বত্বেও আত্মবিশ্বাসের অভাবে জীবনে সফল হতে পারেন না। আত্মবিশ্বাস বা নিজের উপর ইতিবাচক বিশ্বাস গড়ে তোলার সঠিক সময় হলো শিশুকাল।

আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে উঠার পিছনে যেসব বিষয় বাঁধা দেয় কিংবা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে সেসব বিষয় হলো-

ছোটবেলায় কড়া নেতিবাচক সমালোচনা। আমরা অনেক সময় শিশুকে সঠিক আচরণ করতে না দেখলে কিংবা নিজেদের অতিরিক্ত প্রত্যাশার কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী শিশুকে চলতে না দেখলে খুব নেতিবাচকভাবে সমালোচনা করি। যেমন- ঘিলু নেই, কোথাও গিয়ে এ চলতে পারবে না, তোকে দিয়ে জীবনে কিছু হবে না, আস্ত গাধা, কিছু পারে না ইত্যাদি ইত্যাদি। একটি শিশু তার নিজের ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা গ্রহণ করে তার পরিবার থেকে। কোনো শিশু জন্ম থেকে হিন্দু বা মুসলিম হয়ে জন্মগ্রহণ করেনা। জন্মগ্রহণের পর শিশুটি তার পরিবারের, বিশেষ করে তার বাবা-মাকে যে ধর্মে বিশ্বাসী দেখে তাই সে বিশ্বাস করে। ঠিক একইভাবে শিশু যখন নিজের সম্পর্কে শুনে কিংবা দেখে বাবা-মা’র বিশ্বাস যে সে পারে না, তখন সে নিজেও বিশ্বাস করতে শুরু করে যে সে হয়তো সত্যিই অন্যদের চাইতে কম পারে কিংবা পারে না। পরবর্তীতে এসব শিশু ভালো করলেও ভাবে ভাগ্য বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে হয়েছে, সে আসলে অতটা মেধাবী নয়। এর ফলে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে তার যতটা ভালো করার কথা ছিলো তার চেয়ে কম অর্জন করে শুধু আত্মবিশ্বাসের অভাবে।

অন্যের সাথে তুলনা করা নিয়ে আমরা অনেক সময় ভাবি, তুলনা করলে শিশুর মধ্যে জেদ হবে, জেদের বশে সে অন্যের চাইতে ভালো করবে। তাই আমরা প্রায়ই বলে থাকি, ‘দেখোতো তোমার চাচাতো ভাই লেখাপড়ায় কত ভালো, তাকে সবাই অনেক মেধাবী বলে। তুমিতো ওর মতো কিছু পার না।’এ ধরনের তুলনা শিশুর মধ্যে ভালো করার প্রবণতার পরিবর্তে হীনমন্যতার জন্ম দিতে পারে। তার মধ্যে শঙ্কা জাগতে পারে, নিশ্চয়ই তার মধ্যে কোনো সমস্যা রয়েছে যার কারণে সে তার চাচাতো ভাইয়ের মতো পারে না। অনেক সময় দেখা যায়, এসব শিশুর অন্য শিশুর প্রতি হিংসা তৈরি হয় এবং যারা অন্য শিশুটিকে ভালো বলছে, তাদের প্রতিও ক্ষোভ তৈরি হয়। সেজন্য সে আরো অবাধ্য আচরণ করে। সেভাবে কেউ তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং যারা ভালো করে সবাই তাদের নিয়ে ব্যস্ত বা প্রশংসা করছে। এতে তার আত্মবিশ্বাস কমে গিয়ে তার মনে হয় যেহেতু সে অন্যের চাইতে কম পারে এজন্য তাকে বোধহয় কেউ পছন্দ করে না বা গুরুত্ব দেয় না। এই নেতিবাচক চিন্তা তার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। তাই আত্মবিশ্বাস ধ্বংসকারী কঠোর ও নেতিবাচক সমালোচনা ও তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন। শুধু কাজের কিংবা লেখাপড়ার ক্ষেত্রেই নয়, আত্মবিশ্বাসের অভাব ব্যক্তি জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা তৈরি করে।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Previous articleমানসিক রোগ নিয়ে ধারণা, ভুল ধারণা এবং বিবিধ -পর্ব ৩
Next articleশিশুর বিকাশ- পর্ব ৩ (৮ থেকে ১৮ মাস)
সহকারী অধ্যাপক(ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি) মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here