করোনা ভীতি এড়াতে পারস্পরিক সহমর্মিতার গুরুত্ব

করোনা ভীতি এড়াতে পারস্পরিক সহমর্মিতার গুরুত্ব
কিছু ইতিবাচক কথা পালটে দিতে পারে সামনে থাকা মানুষটার মানসিক স্থিতি। এই দুঃসময়ে করোনা নিয়ে অধিকাংশ মানুষের মাঝে কাজ করছে এক চরম ভীতি। এই ভীতি থেকে মুক্তি পাবার, একে অপরের পাশে দাঁড়াবার সব থেকে ভালো উপায় হতে পারে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলার মত ইতিবাচক কিছু কথা, কিছু আশ্বাস তথা পারস্পরিক সহমর্মিতা।

বিভিন্ন দুর্যোগ যেমন মহামারী, ভূমিকম্প, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, ইত্যাদি আমাদের জীবনেরই অংশ।  আর এসব দুর্যোগ আমাদের জীবনে নিয়ে আসে চরম দুর্ভোগ। এই দুর্ভোগের সময় আমরা আমাদের মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে একে মোকাবেলা করবো নাকি ভয়, আশঙ্কা, বিষণ্ণতা ইত্যাদি নেতিবাচক মানসিকতা প্রদর্শন করে তার প্রভাব আরও বাড়িয়ে তুলবো সেটি আমাদের উপরই নির্ভর করে। আমাদের উচিৎ এমন সময়ে মানসিক দৃঢ়তা, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা বজায় রেখে আমাদের এবং আমাদের চারপাশের সবার  মানসিকতা পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা।

ভালবাসা যে কোন প্রতিকূল অবস্থাকেই পালটে দিতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে কারও দুঃখ এবং দুর্দশা ভুলিয়ে দিতে তাকে সান্ত্বনা প্রদান, তার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন করতে ইতিবাচক কিছু কথা সব কিছু বদলে দেবার ক্ষমতা রাখে। এই প্রচেষ্টা ভয় এবং আশঙ্কা দূর করে তার মাঝে ধৈর্য এবং আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি করে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে বাসা থেকে বের হওয়া এখন এক বিভীষিকাময় কাজের নাম। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বন্ধু বান্ধব, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করা হয়ে গেছে বন্ধ।

এসব অস্বাভাবিক অবস্থা এবং এতো কিছুর পরেও সংক্রমণের ভীতি সব কিছু মিলে অধিকাংশ মানুষের মাঝে এক চরম মানসিক পীড়া সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় সবার সাথে অধিকতর সহযোগী মনোভাব এবং সহমর্মী হয়ে আচরণ করতে হবে। মনের মাঝে ভয় থাকলে কখনোই সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। তাই ঘরে থেকেও সুস্থ জীবন যাপন করতে হলে মন থেকে করোনার ভয়কে আগে মুক্তি প্রদান করতে হবে।

এ লক্ষ্যে যারা যৌথ পরিবারে বসবাস করেন তারা একে অপরের সাথে আরও বেশী সময় কাটান। যেহেতু ঘরে থেকেই আমাদের সব ধরণের কাজ করতে হচ্ছে তাই ঘরকে ঠিক জেলখানার মত পরিবেশ না দিয়ে সবার জন্য আনন্দময় একটা পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। একে অপরের সাথে মনের ভাব বিনিময় যত বাড়বে ততোই একে অপরের প্রতি ভরসা, ভালবাসা এবং আস্থা বাড়বে এবং ভয় মুক্ত হয়ে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার মানসিক শক্তি তৈরি হবে। এই সময়ে বিশেষ করে বাসার বয়স্করা বেশী একাকিত্বে ভুগছে এবং তাদের মনে ভীতি কাজ করছে। তাদেরকে মানসিক শক্তি প্রদান করতে তাদের এই একাকীত্বকে দূর করতে হবে। বাসার সব কাজে তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। একসাথে খাওয়া দাওয়া করা, টিভি দেখা, গল্প করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে তাদের সাথে আত্ত্বিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

কথা বলে তাদের মনের ভার দূর করতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে যে তারা একা নন। তাদের সাথে অন্যরাও আছে। তাদের মনের ভয় দূর হলে তারা অনেকটাই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। আবার, বাসার ছোটরাও এখন বেশ অস্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করছে। তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে বোঝাতে হবে যে ঘরে থেকেও আমরা সুন্দর সময় কাটাতে পারি। এই সময়ে তারা যেন মন খারাপ না করে সেজন্য তাদের সাখে খেলাধুলা সহ অন্যান্য আনন্দদায়ক কাজ করে সময় অতিবাহিত করতে হবে। তাদের মানসিক অবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তাদের মানসিক অবস্থা বুঝে সেভাবে তাদের বোঝালে অবশ্যই তাদের মনের ভয় দূর করতে আমরা সফল হবো।

দুঃসময়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াবার, সহায়তা করার সব থেকে উত্তম উপায় হল একে অপরের সাথে কথা বলা, ভাব বিনিময় করা। করোনার বিরুদ্ধে একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে মনস্তাত্ত্বিক জোর বাড়ানো এবং আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি করাই এখন সব থেকে বেশী কাম্য। করোনাকালে আমরা একে অপরকে সহায়তা করলে করোনাকে আমরা আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মোকাবেলা করার সাহস পাবো। করোনা ভীতি জয় করতে তাই মানসিক ভাবে পাশে থাকাটাই এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleকোভিডে মানসিক অবসাদ এবং আবেগ অনুভূতির উপর প্রভাব
Next articleসম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতারণা করে যেসব ব্যক্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here