করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এর R নম্বর কি?এটি কিভাবে পরিমাপ করা হয়?

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এর R নম্বর কি?এটি কিভাবে পরিমাপ করা হয়?
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এর R নম্বর কি?এটি কিভাবে পরিমাপ করা হয়?

করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ঝুঁকি বোঝার ক্ষেত্রে R এর কথা ইতিমধ্যে সবাই শুনেছেন। রোগতত্ত্ববিদ্যায় এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এই সংখ্যা ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশ তাদের জনস্বাস্থ্য, সামাজিক কার্যক্রম ও লকডাউন ব্যবস্থাপনা নির্ধারণ করছে। এই সংখ্যাটি হল রিপ্রোডাকশন নাম্বার বা R ভ্যালু
R কি?
রিপ্রোডাকশন নাম্বার হল একটি রোগের সংক্রমিত হবার ক্ষমতার নির্দেশক। একজন সংক্রমিত ব্যক্তি কয়জন ব্যক্তির মধ্য রোগটি সংক্রমিত করতে পারে সংখ্যা। হাম এর জন্য এই সংখ্যাটি সর্বোচ্চ, একজন থেকে প্রায় ১৫ জন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারে। যার ফলে এটি মারাত্মক প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে। নতুন করোনা ভাইরাস যেটা সার্স-কোভ-২ নামে পরিচিত তার রিপ্রোডাকশন নাম্বার ৩ তবে এই সংখ্যা টি পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভিন্ন হতে পারে।
কিভাবে R পরিমাপ করা হয়?
আপনি জানতে পারবেন না আপনি কখন আক্রান্ত হচ্ছেন, তাই বিজ্ঞানীরা পেছনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বের করার কাজ টি করে থাকেন। কিছু তথ্য, যেমনঃ কতজন মানুষ মারা যাচ্ছে, কত জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে বা কত জন কোভিড পজিটিভ হচ্ছে এই তথ্য ব্যবহার করে সহজেই ভাইরাসের ছড়িয়ে পরার হার জানা যায়। সাধারনত এই তথ্য গুলোর মাধ্যমেই জানা যায় যে দুই তিন সপ্তাহ পূর্বে R নম্বর কত ছিল। নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে সময়ের সাথে আরও সঠিকভাবে এই তথ্য জানা সম্ভব।
রিপ্রোডাকশন নাম্বার এক এর উপরে হলে সেটা মারাত্মক কেন?
রিপ্রোডাকশন নাম্বার এক এর বেশি হলে আক্রান্ত/কেসের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ে ব্যপারটা ঋণ খেলাপিদের সুদের হারের ফাঁদে পরার মত। কিন্তু যদি এই নম্বর কম থাকে তাহলে রোগটি নির্মূল হয়ে যাবে কেননা প্রাদুর্ভাব বজায় রাখার জন্য যে পরিমান সংক্রমণ হওয়া প্রয়োজন তা হবে না। বিভিন্ন দেশের সরকার এই রিপ্রোডাকশন নাম্বারকে তিন থেকে এক এর নীচে নামানোর চেষ্টা করছে।
এই কারনেই এখন সবাই বাসায় থেকে কাজ করছে এবং সকল স্কুল কলেজ বন্ধ রয়েছে যাতে একজন আরেকজনের সংস্পর্শে না আসে আর ভাইরাসের ছড়িয়ে পরা রোধ করা যায়।
এটা লকডাউন তুলে ফেলার ব্যপারে কিভাবে সহায়তা করে?
সকল দেশ যারা লকডাউন তুলে ফেলতে চায় তাদেরকে R এর মান ১ এর নীচে রাখতে হবে। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের ডাঃ অ্যাডাম কুচারস্কি BBC কে বলেন, এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় যে আপনি কতটুকু ছাড় দিবেন এবং তার বিনিময়ে কতটুকু সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি নিবেন।
সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় ভাবে এমন ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে যেন এই মানকে ৩ থেকে ০.৭ এ নামিয়ে আনার জন্য অনেক জীবন এর ক্ষতি না হয়ে যায় । এবং একাজটি বুদ্ধিমত্তার সাথে করতে হবে কারন এধরনের কাজে আপনাকে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করার খুব বেশি সুযোগ থাকে না।
কি কি ব্যবস্থাপনা তুলে নেয়া সম্ভব?
দুঃখজনক ভাবে, প্রত্যেকটি ব্যবস্থাপনা কিভাবে ভাইরাসের বিস্তারের উপর প্রভাব ফেলে তা একেবারে নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি যদিও এব্যাপারে বিভিন্ন গাণিতিক ধারনা রয়েছে। কুচারস্কির মতে, স্কুল কলেজ খুলে দেয়া, বিভিন্ন কর্ম প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ফলে R এর মান কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা পর্যবেক্ষণ করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। আরেকটা বিষয় হচ্ছে মানুষের আচার- আচরণ পরিবর্তন হয়, তাই লকডাউন পদ্ধতি অপরিবর্তিত থাকলেও এই মানের পরিবর্তন হতে পারে। যেটা এখন প্রয়োজন তা হল ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের নতুন পদ্ধতি যেমন ব্যপক টেস্টিং এবং ট্রাকিং অ্যাপ। এই গুলোর মাধ্যমে R এর মান কমানো ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা তুলে ফেলা সম্ভব হবে
এই R কি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা?
রিপ্রোডাকশন নাম্বার বড় নিয়ামক গুলোর একটি। আরেকটি হল রোগের ভয়াবহতা বা তীব্রতা, যদি মৃদু উপসর্গ থাকে তাহলে সেটি মারাত্মক নয়। দুঃখজনক ভাবে, করোনা ভাইরাস ও এর থেকে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ মারাত্মক ও প্রানঘাতী হতে পারে।
সবশেষ হল আক্রান্তের সংখ্যা যার উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা গ্রহন করা হয়। যদি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হয় এবং নিষেধাজ্ঞা কম থাকে তাহলে রিপ্রোডাকশন নাম্বার ১ এর বেশি হয় সেক্ষেত্রে কেসের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
R এর সাথে ভ্যাক্সিনের সম্পর্ক কি?
ভ্যাক্সিন আবিস্কারের মাধ্যমে রিপ্রোডাকশন নাম্বার কমানো যেতে পারে। একজন করোনা রোগী তিনজন মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে, তবে তার মধ্য দুই জনের যদি ভ্যাক্সিন দেয়া থাকে তাহলে একজন রোগী থেকে ১ জন সংক্রমিত হবে। মানে রিপ্রোডাকশন নাম্বার তিন থেকে এক এ নেমে আসবে।
সূত্র: ডা.  মোঃ রিজওয়ানুল করিম, রোগতত্ত্ববিদ, সমন্বিত করোনা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র ,স্বাস্থ্য অধিদফতর এর ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন


Previous articleলকডাউনে প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তরুণরা নিঃসঙ্গতায় ভুগছে বেশি
Next articleকরোনা নিয়ন্ত্রণে অরোণ্য রোদন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here