করোনা’কে অগ্রাহ্য বা অতি আতঙ্কে বিষণ্ণতা- উভয়ই ক্ষতিকর

নতুন ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্তের কথা জানালেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

অতি মাত্রার আতঙ্ক অনেক সময় মানুষকে বিবেক শূন্য করে দিতে পারে। তখন অনেকে আতঙ্ককে অগ্রাহ্য করে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, আবার অনেকে কি করবে বুঝতে না পেরে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। এই দুটো অবস্থাই একজন মানুষের জন্য মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

করোনা আতঙ্ক আজ সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা সবাইই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে করোনা আতঙ্কে ভুগছি। এখন মূল বিষয় হল, এই আতঙ্ক আমাদের উপর কিভাবে প্রভাব বিস্তার করছে এবং এটি মোকাবেলায় কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।

আতঙ্ক, এমন এক মানসিক অবস্থা যা আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।  আতঙ্ক আমাদের মাঝে চরম উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করে। যা ধিরেধিরে বিষণ্ণতায় ও রূপ নেয়। এই আতঙ্ক এবং বিষণ্ণতা চরম পর্যায়ে একজন মানুষকে আত্মহত্যার মত চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।

আবার অতি মাত্রার আতঙ্কে অনেকের ক্ষেত্রে এক ধরণের অবসন্ন মনোভাব সৃষ্টি হয় যা তাকে খুব সাধারণভাবে আতঙ্ক এড়িয়ে চলার দিকে ধাবিত করে। অর্থাৎ, তার মাঝে বাস্তবতা বর্জন বা এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। কিভাবে একজন ব্যক্তি এটি করে? খুব সাধারণভাবে একজন মানুষ যখন চরম অবস্থার শিকার হয়, তখন তার মধ্যে সেই অবস্থা এড়িয়ে চলার মানসিকতা তৈরি হতে পারে। সে এটি ভাবতে শুরু করে যে কোথাও কোন সমস্যা নেই, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তখনও সেই সমস্যাটি সমানভাবে বিদ্যমান। এভাবেই করোনা আতঙ্ক মানুষকে এতোটাই অসহায় করে দিয়েছে যে, তারা মহামারীর এই বাস্তবতাকেই অস্বীকার করছে। এমন আচরণ করছে যেন করোনার আদতে কোন অস্তিত্বই নেই। তারা সামাজিক দূরত্ব মানছেনা। এমনকি মাস্ক পরা থেকেও বিরত রয়েছে। তারা হয়তো বিভিন্ন ভাবে প্রমাণ করতে চাইছে যে তারা সব রকম আতঙ্ক মুক্ত এবং সুখী ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা একটি ভ্রম ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমরা জানি যে, এভাবে চলাচল করলে সুস্থ থাকার কোন সম্ভাবনা তো নেইই, বরং এটা নিশ্চিত যে, এমন ব্যক্তি এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং তারা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোয় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এটা শুধু ঐ বেপরোয়া ব্যক্তির নিজের জন্যই নয়, বরং তার সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকটা মানুষ, তার পরিবার, ও সন্তানদের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ।

আতঙ্ক এড়িয়ে যাবার বিপরীতে যে মানসিকতা রয়েছে সেটি হল এটির মুখোমুখি হওয়া এবং পরিত্রাণের উপায় খোঁজা। অর্থাৎ, কোভিড-১৯ আতঙ্ক থেকে মুক্তি পাবার উপায় খুঁজে খুঁজে শেষ পর্যন্ত বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া। অনেকেই আছে যারা নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এতোটাই চিন্তিত হয়ে পড়ে যে সুরক্ষিত থাকার চিন্তাই তাদের কাছে নতুন আতঙ্ক হয়ে ওঠে এবং তারা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, হতাশা সহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

অতি আতঙ্ক বা আতঙ্ক মুক্ত থাকার প্রয়াসে পরিস্থিতিকে অস্বীকার করা-উভয়ই একজন মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকার পথে চরম বাধা। তাই কোনটাই আমাদের মহামারীর এই দুঃসময়ে করা উচিৎ নয়। আমাদের উচিৎ পরিস্থিতিকে মেনে নিয়ে সুরক্ষিত থাকার প্রয়াস করা এবং হতাশা মুক্ত থাকা। আতঙ্ক অবশ্যই থাকবে এবং একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কিন্তু করোনা আতঙ্কে ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা। নিজেকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যেন করোনা আমাদের কোন ক্ষতি করতে না পারে। একই সাথে এটিও খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেন কোন কিছুকেই আতিশয্যে পরিণত না করি। কারণ অতিরিক্ত আতঙ্ক, অতিরিক্ত সতর্কতা বা আতঙ্ককে অতিরিক্ত মাত্রায় অস্বীকার- কোনটাই ভালো কোন ফল বয়ে আনেনা। আমাদের সামাজিক ভাবে মন থেকে একে অপরের সাথে জুড়ে থাকার প্রয়াস করতে হবে, জীবনকে সঠিক দিশায় নিয়ে যেতে হবে এবং আতঙ্ক কাটিয়ে মানসিক শক্তিতে বলিয়ান হতে হবে। তবেই আমরা সুস্থ থাকতে পারবো।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleআমি কি মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্থ?
Next articleরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে বাড়ে মানসিক সুস্থতার হার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here