রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে বাড়ে মানসিক সুস্থতার হার

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়লে বাড়ে মানসিক সুস্থতার হার
গবেষণায় দেখা গেছে যে, মহামারী কালে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দৃঢ়কল্পে শারীরিক ও মানসিক তৎপরতা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

সাধারণত যখন মানসিক সুস্বাস্থ্য প্রসঙ্গটি আসে এবং সমুন্নত করতে করণীয় নির্ধারণ করা হয় তখন আমরা মনোযোগ সম্বন্ধীয় কিছু কৌশল,  নেতিবাচক প্রভাব মুক্ত হওয়া,  ইতিবাচক ধ্যান ধারণার প্রসার, এবং শারীরিক সুস্থতার সাধারণ বিষয়গুলি সম্বন্ধেই ভাবি। কিন্তু ধীরে ধীরে বিভিন্ন গবেষণা এবং পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে যে, আমরা যদি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাই তাহলে অন্যান্য সব কিছুর সাথে সাথে আমরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর প্রয়াসও করতে পারি।

এটা নিশ্চিত যে, আমরা সাধারণভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্বন্ধে যা জানি এটি তার থেকে বিস্তৃত এবং প্রভাবশালী একটি বিষয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন আমাদের মাঝে বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টিকারী কোষ তৈরি করে তেমনি আমাদের মানসিক সুস্থতাকেও ত্বরান্বিত করে। এমনকি পিটিএসডি থেকে বাইপোলার ডিসর্ডার এবং বিষণ্ণতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মুক্ত রাখে। নিচে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা এবং সেগুলি থেকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের কিভাবে মুক্ত রাখে সেসব বিষয়ে কিছুটা আলোচনা করা হল।

মানসিক চাপ এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা: দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী ঘটনাবলী আমাদের মাঝে নেতিবাচক মানসিক অবস্থার জন্ম দেয় এবং এতে আমাদের মানসিক সুস্থতা বাঁধাগ্রস্ত হয়। এই মানসিক চাপকে বহু আগেই চিকিৎসক গণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সঠিকভাবে কাজ না করার পেছনের অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। সাধারণত আমরা অত্যধিক মানসিক চাপের ফলাফল হিসেবেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ না করতে দেখি। এই মানসিক চাপের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সৃষ্টি হওয়া অকার্যকারিতা আমাদেরকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। একই ভাবে, আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলেও আমাদের মানসিক সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বিভিন্ন মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী পরিস্থিতিগুলোকে আমরা কিভাবে সামলে নিতে পারি সেই সক্ষমতাকেও কমিয়ে দেয়। তাছাড়া এটা স্পষ্ট যে, রোগ প্রতিরক্ষা ব্য্যবস্থা মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে আমাদের আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণও করে। যে কোন অবস্থায় দ্রুত রেগে যাওয়া, অত্যধিক চাপে স্মরণশক্তি লোপ পাওয়া, অসামাজিক আচরণ ইত্যাদি অযাচিত ঘটনা মানসিক চাপ ব্রিদ্ধির ফলে আমাদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণেরই ফল। তাই বলা যায়, সুস্থ শরীরেই সুস্থ  এবং চাপ মুক্ত মন বাস করে। আমরা যদি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়াসে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ত্বরান্বিত করার প্রয়াস করতে পারি সেটি আমাদের সামগ্রিক মানসিক অবস্থার উপর ইতিবাচক প্রভাব বিস্তারের পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতেও সহায়তা করবে।

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত: মানসিক চাপ মুক্ত থাকা, মানসিক সুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাঝে বিশেষ বৈজ্ঞানিক সম্পর্কও রয়েছে। ২০০৬ সালে ইঁদুরের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, একটি বিশেষ রোগ প্রতিরোধী কোষ বা টি সেল বিহীন একটি ইঁদুর মানসিক চাপ সহ বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় ভোগে। যখন তার শরীরে এই কোষ সৃষ্টি করা হয় তখন এ ধরণের সমস্যাগুলি আর সৃষ্টি হয়নি। এভাবে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় এটি প্রমাণিত যে, রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী কোষ আমাদের মানসিক সুস্থতা বিধানেও ভূমিকা রাখে।

এটা কখনোই ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের শরীর ও মন একই সুতোয় গাঁথা। অসুস্থ শরীরে যেমন সুস্থ মন বাস করতে পারেনা, তেমনি, মানসিক অসুস্থতাও শরীরকে প্রভাবিত করে। তাই এটা সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত যে, বিভিন্ন রোগ মুক্তির লক্ষ্যে সুস্থ থাকার প্রচেষ্টা অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়াস আমাদের মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা পালন করে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleকরোনা’কে অগ্রাহ্য বা অতি আতঙ্কে বিষণ্ণতা- উভয়ই ক্ষতিকর
Next articleআমরা কি মহামারী উত্তরণে মানসিক ভাবে প্রস্তুত?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here