দীর্ঘ আট বছর যাবৎ প্যানিক ডিজঅর্ডার ও প্যানিক এটাক সমস্যায় ভুগছি

সমস্যা: আমি পেশায় একজন শিক্ষক। দীর্ঘ আট বছর যাবৎ প্যানিক ডিজঅর্ডার ও প্যানিক এটাক সমস্যায় ভুগছি, সাইকিয়াট্রিস্ট এখনো দেখাচ্ছি। ক্লোনাজিপাম ১ মি. গ্রা প্রতিদিন খেতে হচ্ছে। কিন্তু রোগ থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছি না। যেমনভাবে বর্তমানে আছি, এটাকে স্বাভাবিক জীবন বলে না। দিন দিন অযোগ্য হয়ে যাচ্ছি পরিবেশের সাথে। যেখানে জোরে কথা বলতে পারি না পাঠদানের সময়, বিপদ-আপদ আসলেও রাত জাগতে পারি না, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও কোনো সমস্যায় ঘুমে ব্যাঘাত ঘটলে দিনে ঘর থেকে বের হলে সমস্যায় পড়ি, যানবাহনে উঠতে পারি না, মৃত্যু ও দুর্ঘটনাসহ নেতিবাচক কোনো কিছুই নিতে পারি না। অর্থাৎ অসামাজিক জীব হয়ে যাচ্ছি। সারাক্ষণ শরীর ছটফট, শ্বাসকষ্ট, হৃদকম্পন বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপের উঠানামাসহ আতঙ্কে থাকি। এরকম অশান্তি নিয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের সময় দেয়া অসম্ভব। সব কাজেই যোগ্যতার ঘাটতি প্রকাশ পায়। ডাক্তার বলছে এটা কোনো ব্যাপার না। কন্ট্রোল করার চেষ্টা করুন। হয়ত আপনারাও বলবেন। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্যগত সুখ না থাকলে আপনার পক্ষেও এটা অসম্ভব। আমি সবকিছু বুঝি, কন্ট্রোল করার চেষ্টা করি। কিন্তু রোগের উপসর্গের অনুভূতি তো আমার হাতে নেই। আমি তো ইচ্ছে করলেই শ্বাসকষ্ট বন্ধ করতে পারছি না, প্রেসার কন্ট্রোল করতে পারছি না, নিদ্রাগত সমস্যার সমাধান করতে পারছি না। সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্ট ব্যাপারটা যতটা হালকা বলে, রোগের প্রভাবটা তত স্বাভাবিক নয়। সাইকিয়াট্রিস্ট সমস্যা শুনে কতগুলো ঘুমের ঔষধ দেয়। সারাক্ষণ ঘুমানোর ঔষধ খেয়ে বিছানায় পড়ে থাকার চেষ্টা করলে এমনিতেই তো আমি আরো অচল হয়ে যাব। সাইকিয়াট্রিস্ট ও সাইকোলজিস্টের নিকট মাসে কয়েকবার যাওয়ার জন্য ভিজিট বাবদ প্রতিবারে হাজার টাকা, গ্রাম থেকে শহরে যাতায়াত-আমার বেতনের অর্ধেক তো তারাই নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও আছে দুজন ব্যক্তির প্রতিবারে ছুটি এবং ঔষধের দুষ্প্রাপ্যতা। ৮ বছরে এটা সুস্পষ্ট যে, তারা কখনোই চায় না মানসিক রোগীরা সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হোক। গত আট বছরে বহুদিন গিয়েছে আমি বলেছি এ সপ্তাহে ভালো বোধ করছি, ঔষধের মাত্রা কিছুটা কমানো যায় কি না দেখুন? কিন্তু রোগের জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত একই মাত্রার ঘুমের ঔষধ বাধ্যতামূলক রেখেছে। প্রতিবারে বলছে তাঁকে না জানিয়ে ঔষধ বন্ধ করা যাবে না। পরিবার ও চাকুরি ক্ষেত্রে একজন মানুষকে সপ্তাহে কতদিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া যায়? আমি পরিবার ও শিক্ষার্থীদের শতভাগ দিতে পারছি না দিনের পর দিন। এটা আমার বিবেককে চরম আঘাত করে। বিস্তারিত বলার উদ্দেশ্য হলো, ঔষধের অনেক পার্শ প্রতিক্রিয়ায় দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। যেমন-নিজের জীবনের প্রতি তিক্ততা ও ধৈর্য্য ক্ষমতা হ্রাস। এক কথায় আত্মহত্যার প্রতি মৌন সমর্থন। ক্লোনাজিপাম ও সিটালোপ্রামের মতো আসক্তির ঔষধ হ্রাস কিংবা প্যানিক ডিজঅর্ডার ব্যাধির স্থায়ী সমাধানে যথোপযুক্ত পরামর্শ প্রত্যাশা করছি। উল্লেখ্য স্ব-উদ্যোগে অনিয়মিতভাবে মেডিটেশন করছি। তাই প্যানিক ডিজঅর্ডারের স্থায়ী সমাধান কী অথবা স্বাভাবিক জীবনযাপনে চিকিৎসক নির্বাচন ও চিকিৎসা গ্রহণে কাদের নির্বাচন করব? এ দীর্ঘ চিকিৎসাকালীন সময়ে ডাক্তারপরিবর্তন করেছি দুইবার এবং বর্তমানে দীর্ঘ দিন ধরে দেখাচ্ছি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপককে। তরিকুল ইসলাম, কুমিল্লা।
পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যাপক ডা. হেদায়েতুল ইসলাম: প্রিয় প্রশ্নকর্তা, আপনার অসুস্থতার বিবরণটি ধৈর্য্যসহকারে পড়লাম। আপনি যে ধরনের উপসর্গের জন্য দীর্ঘ আট বছর যাবৎ কষ্ট পাচ্ছেন তার জন্য চিকিৎসক হিসেবে আমার আন্তরিক সহানুভূতি রইল। আপনি হয়ত এর মাঝেই জেনে ফলেছেন যে, এ রোগটির কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে আবিষ্কার হয়নি। বলা চলে, এই রোগর প্রকোপ সাধারণ জনগোষ্ঠীর ২.৫% লোক ভুগে থাকেন। এর কারণ হিসেবে সাধারণভাবে বলা চলে, ব্রেইনের কেমিক্যাল সাবস্টোন্স নর এপিনেফ্রিন কার্যকরী ভ‚মিকা রাখে। এছাড়াও হাইপার থাইরয়েডিজম কাজ করতে পারে। তবে আপনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছেন যে, মাঝেমাঝেই আপনার উপসর্গগুলি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে। আপনি বর্তমানে যে চিকিৎসা পাচ্ছেন অর্থাৎ অ্যান্টি ডিপ্রেশেন্ট বিটা ব্লোকার্স এবং ক্লোনাজিপাম- সাধারণভাবে এই রোগের স্বীকৃত চিকিৎসা-পদ্ধতি। এছাড়াও সাইক্লোজিকাল সাপোর্ট হিসেবে কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি অনেক সময়েই ভালো কাজ করে থাকে। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, এই অসুখটির ৩০% রোগীদেরই বারে বারে দেখা দিতে পারে। সাধারণত উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্রেই রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে ধূমপান, জীবনের ঘাতপ্রতিঘাতের বাস্তব চাপ, সবকিছু অত্যধিক নিখুঁতভাবে করার প্রবণতা, অত্যধিক নীতিজ্ঞান ও মূল্যবোধের দ্বারা জীবনকে পরিচালনা করা এবং বেশি পরিমাণে অনুভূতিপ্রবণ হওয়া ইত্যাদি রোগের উপসর্গ ওঠানামার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। হঠাৎ করে ঔষধ বাদ দেওয়া বা ঔষধ না খাওয়া আবার উপসর্গ দেখা দেওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। কগনেটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে উপকার পাওয়া যেতে পারে। সংক্ষেপে বলা চলে যে, সার্বিকভাবে ঔষধপত্র, সামাজিক এবং নিখুঁত প্রকৃতির ব্যক্তিত্বের কারণে আপনি নিজে কষ্ট পাচ্ছেন, অন্যদের সাথে মানিয়ে চলতে অসুবিধায় পড়ছেন। এর চিকিৎসা এখনো যথেষ্ট পরিমাণে ফলপ্রসূ ও সন্তোষজনক নয় এবং সেটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অসম্পূর্ণতা। আপনার ক্ষেত্রে চিকিৎসার যতটুকু কুমিল্লায় পাচ্ছেন তা মোটামুটি সঠিকভাবেই চলছে। তবুও যদি আপনি সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট না হয়ে থাকেন তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ, শাহাবাগ) অথবা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনআইএমএইচ, শ্যামলী) এর মনোরোগবিদ্যা বিভাগে সহযোগিতা নিতে পারেন। আপনার সুস্থতা কামনা করছি। আপনার জন্য আমার শুভ কামনা রইল।

Previous articleমনের খেয়াল রাখতে ইচ্ছে করে খুব-অদিতি বসু রায়
Next articleসিলেট ওসমানী মেডিক্যালে দুইদিন ব্যাপী 'ওয়ার্কশপ অন সাইকোথেরাপী' অনুষ্ঠিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here