বাল্য বিবাহ কিশোরীদের মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করে

প্রায় ৬০-৭০% মেয়েদের আফ্রিকার দেশ এবং এশিয়ায় জোর করে বাল্য বিবাহ দেয়া হয়। ছবি সূত্রঃ ইউনিসেফ

বাংলাদেশে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম বয়সের মেয়েদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করালে সেটি বাল্য বিবাহ নামে সংজ্ঞায়িত হবে।  বাল্য বিবাহ বিষয়টি বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমস্যা যা ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করে। বাল্য বিবাহ হবে তখনি যখন ছেলে মেয়ে দুই পক্ষের কোনো এক পক্ষের এক জন অপ্রাপ্ত বয়স্ক হবে। ইউনিসেফের একটি জরীপ থেকে জানা যায় যে, সারা বিশ্বে প্রায় ২০-৫০% মেয়েরা বাল্য বিবাহের ফলে ভোগে।

মেয়েরা ১৮ বছর বয়সের কম বয়সে বিয়ে করতে না চাইলে তাদের জোর করে বিয়ে দেয়া হয় যা তাদের মানসিক অশান্তি সৃষ্টি করে। তাদের মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়। বিয়ের পর বাচ্চা, স্বামীর দেখাশোনা করার মতো তাদের জ্ঞান থাকে না। তাই প্রতি পদে পদে তাদের শ্বশুর বাড়ি থেকে মানসিক চাপ প্রয়োগ করা হয়। ইউনিসেফের একটি জরিপ থেকে জানা যায়, প্রায় ৬০-৭০% মেয়েদের আফ্রিকার দেশ এবং এশিয়ায় জোর করে বাল্য বিবাহ দেয়া হয়। সাধারণত ২৫ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে মেয়েদের দেহের বৃদ্ধি ঘটে। কিন্তু কোন মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হলে অন্তত ৪% তার দেহের বৃদ্ধির স্খলন ঘটে। অপূর্ণাঙ্গ বয়সে বাচ্চা ধারণ করাই তাদের যেমন মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তেমন শারীরিক স্বাস্থ্যের ও অবনতি ঘটে।

পাকিস্তানের এডভান্সড এডুকেশনাল ইন্সটিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার, করাচি থেকে একটি জরিপ করা হয় ২০১৩ সালে যেখানে ৩ টি বিষয় তুলে ধরা হয় বাল্য বিবাহের ফলে মেয়েরা কতটা মানসিক চাপে থাকে আর বিবাহের আগে কতটা মানসিক চাপে থাকে এবং বিবাহের আগে ও পরে উভয়ক্ষেত্রে কত শতাংশ মেয়েরা মানসিক চাপে থাকে। এখানে ১০০ জন নারীর মধ্য থেকে এই জরিপটি করা হয় যেখানে তাদের বয়স ১৩-৩৫ বছর। জরিপের ফলাফলে দেখানো হয় ৩১.৮২% মেয়েরা বিবাহের আগে মানসিক চাপে থাকে, যেখানে বিবাহের পরে ৪৩.১৮% মেয়েরা মানসিক চাপে থাকে এবং বিবাহের আগে ও পরে উভয়টির পক্ষে ২৫.০০% মেয়েরা মানসিক চাপে থাকে।

তাদের এই মানসিক চাপ বাড়ার অনেক কারণ রয়েছে তার মধ্যে কিছু কারণ যেমন, নতুন পরিবেশ সম্পর্কে জ্ঞান না থাকা, দাম্পত্য জীবন নিয়ে জ্ঞান না থাকা, বিয়ের পর দায়িত্ব বৃদ্ধি, সচেতনতায় অজ্ঞতা, আত্মীয়স্বজনদের থেকে মানসিক চাপ, অভিভাবকগণ মনে করেন অল্প বয়সে বিয়ে দিলে তাদের মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না কিন্তু এটা তাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। বাল্য বিবাহের ফলে মেয়েরা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারেনা। যা তাদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। অল্প বয়স হওয়ার কারণে মেয়েদের ততটা জ্ঞান থাকেনা এবং তারা শ্বশুরবাড়ি থেকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে অত্যাচারের স্বীকার হয় কিন্তু দাম্পত্য জীবন টিকিয়ে রাখতে এবং ভয়ে আত্মীস্বজনদের কাছে প্রকাশ ও করে না। আত্মীয়স্বজন অনেক সময় এটাকে স্বাভাবিক বলেই মনে করে যে এটা হয়েই থাকে। কিন্তু এন্টিস্ল্যাভারি নামে স্ংস্থাটি এটাকে এক ধরনের দাসত্ব বলেই প্রকাশ করছে। যা মেয়েদের মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে। বর্তমানে কোভিড-১৯ চলাকালে বাল্য বিবাহ বেড়েছে ২০ শতাংশ হারে এমনটাই বলছেন, এ্যানা মিঞ্জ, ব্র্যাক-সিইপি পরিচালক।

তিনি আরো বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকার কারণে বাল্য বিবাহ বেড়েছে, কম খরচে অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল পরিবার করোনা মহামারীতে বাল্য বিবাহ সম্পন্ন করছে। মেয়েরা স্কুল থেকে ঝরে পড়ছে, যা তাদের মানিসিকভাবে ভেঙ্গে পড়তে সাহাযা করছে। ইউনিসেফের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট থেকে যায় যে, করোনা মহামারি চলাকালে প্রায় ৮ থেকে ১০ মিলিয়ন অপ্রাপ্ত মেয়েদের বাল্য বিবাহ হয়েছে এবং ৬৫০ মিলিয়ন অপ্রাপ্ত মেয়েদের বিয়ে হয়েছে সারা বিশ্বে যাদের অর্ধেকই বিয়ে সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, ইথিয়পিয়া, ব্রাজিল এবং নাইজেরিয়াতে।

জাতিসংঘ রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫১% বাল্য বিবাহ সংঘটিত হয় এবং বিশ্বে শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে নিম্ন থেকে এর অবস্থান ৮ম। বাংলাদেশে বাল্য বিবাহের ভয়াবহ পরিস্থিতি উপলব্ধি করা যায় এসব রিপোর্টে। আর বাল্য বিবাহ বন্ধে সরকারী আইন যেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে একটা ভূমিকা রাখছে অন্যদিকে বেসরকারী এবং এনজিও কিছু সংস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যেমন ২০১৯ সালে ব্র্যাক ৬৭০টি বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছে, ২০২০ সালে  ১১৯১ টি।

 

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleঅক্টোবরে টিকা রপ্তানি শুরু করবে ভারত
Next articleআজ বিশ্ব আলজেইমার’স দিবস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here