করোনা কালে সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পিতামাতার ভূমিকা

মানসিক স্বাস্থ্য
মহামারীর এই দুঃসময়ে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং ইতিবাচক মানসিক বিকাশে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

মহামারীকালীন এই দুঃসময়ে সবার জীবনই দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিয়ে আমরা সবাইই অত্যন্ত উৎকণ্ঠায় সময় কাটাচ্ছি। আমাদের দুশ্চিন্তা এবং বিষণ্ণতা যেন আকাশ ছুঁই ছুঁই করছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে দীর্ঘ দিন ধরে ঘরের মধ্যে সময় কাটিয়ে আমরা ক্লান্ত। আবার কোন কারণে বাইরে যেতেও যেন উৎকণ্ঠার শেষ নেই কারণ করোনা সংক্রমণের চরম ভয় কাজ করছে। পিতা মাতা যেমন তাদের সন্তানদের করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখতে চিন্তিত রয়েছেন তেমনি সন্তানেরাও তাদের পিতা মাতার সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত।

প্রতিনিয়ত চারদিকে পরিচিত মানুষদের আক্রান্ত হওয়া এবং নতুন নতুন মৃত্যু সংবাদ তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা এবং ভয়ের সৃষ্টি করছে। শিক্ষার পরিবেশ থেকে দূরে এবং বন্ধু বান্ধবদের সান্নিধ্য ও খেলাধুলার পরিবেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে তাদের মনে চরম হতাশা এবং বিষণ্ণতা বাসা বেধেছে। ভবিষ্যতে কি হবে, তারা সুরক্ষিত থাকতে পারবে কিনা বা কবে নাগাদ শিক্ষা জীবনে বা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে এসব দুশ্চিন্তায় ভুগে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। যেহেতু এই সময়ে অভিভাবকেরা প্রায় সব সময়ই বাড়িতে থাকতে পারছে এবং তাদের সন্তানেরা তাদের সাথে সব থেকে বেশী সময় কাটানোর ফলে তাদের পর্যবেক্ষণ করারও বেশী সুযোগ পাচ্ছে তাই এসব মানসিক সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই সমস্যা দূর করার প্রথম ও প্রধান সুযোগ ও তারাই অধিক পাচ্ছে।

অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যেসব ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে সেগুলি নিচে আলোচনা করা হল:

১) স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং তার প্রভাব সম্পর্কে তাদের বুঝিয়ে বলাঃ যদি দেখেন দৈনন্দিন কাজে আপনার সন্তান মনযোগী নয়, তারা সব সময় মনমরা হয়ে থাকছে বা লেখাপড়া, খাওয়াদাওয়ায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তাহলে তাদেরকে কখনোই দোষারোপ করবেন না। তাদের কাছে প্রশ্ন করে জানতে চেষ্টা করুন তাদের ঠিক কেমন লাগছে, কি কি অসুবিধা হচ্ছে। যেহেতু এই সময়ে তারা তাদের বন্ধু বান্ধবদের থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে তাই তাদের প্রতি বন্ধুসুলভ মানসিকতা প্রদর্শন করে তাদের মনের কথা জানার চেষ্টা করুন। তাদের এই সমস্যাগুলি যে এই মহামারী এবং এর ফলে আমাদের অস্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থার কারণে সৃষ্টি হয়েছে সেটি বুঝিয়ে বলুন। তাদের মন থেকে অপরাধ বোধ দূর করে তাদের এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা প্রদান করুন।

২) তাদেরকে মানসিক সমস্যার সাথে লড়াই করার মানসিক শক্তি প্রদান করাঃ মহামারী আমাদের সবার জীবনেই সমস্যা সৃষ্টি করেছে। আমরা সবাই বিপদের মাঝে আছি। এটা আমাদের সন্তানদের বোঝাতে হবে যে এই দুঃসময়ে শুধু তারা একা নয়। তাদেরকে বুঝাতে হবে যে বিপদে ধৈর্য ধারণ করে আত্মবিস্বাস রেখে প্রচেষ্টা করে গেলে সব সমস্যকেই জয় করা যায়।

৩) তাদের ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটানঃ তাদেরকে এমন মানসিকতা অর্জন করতে উৎসাহিত করুন যাতে তারা নিজ উদ্যোগে সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। তাদের মধ্যে বিদ্যমান মানসিক শক্তিকে জাগ্রত করুন। তাদেরকে বোঝান যে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতেই আমাদের এতো সব প্রয়াস আর এই প্রয়াসকে ফলপ্রসূ করতে আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গী রাখা প্রয়োজন। তারা যদি এসময় ভেঙ্গে পড়ে, একাকী থেকে নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে তাহলে করোনার কাছে তাদের পরাজয় ঘটবে। আর এটা কখনোই কাম্য নয়।

৪) প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়াঃ এখন আমরা সবাইই বিভিন্ন মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। তাই এমন দুরবস্থায় একে অপরকে সাহায্য করার মত মানসিক অবস্থা হয়তো আমাদের নাও থাকতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে উভয়ের সমস্যার সমাধান করতে কি কি করণীয় সেগুলো নির্ধারণের জন্য একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এতে সবার মানসিক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।

শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে অভিভাবকদের নিজেদেরকেও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে। নিজেরা সুস্থ থাকলেই তাদের সন্তানদের ভালো থাকায় তারা সহায়তা করতে পারবে। মূল কথা শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে হলে অভিভাবকদের সাথে সাথে তাদের সন্তানদেরও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। আর এটাই আমাদের একে অপরকে বোঝাতে হবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous article৮ ঘন্টা কাজ কেন
Next articleমানসিক অবসাদে দিল্লির করোনা হাসপাতালের চিকিৎসকের আত্মহত্যা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here