মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে করোনার প্রভাব

ডিসেম্বর ২০১৯ সাল, চায়নার উহান অঞ্চলে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। যা পরবর্তী সময়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। সেই থেকে সময়ের হিসেবে কেটে গেছে ২৬ মাস। আবিষ্কার হয়েছে করোনার ভ্যাক্সিন। কিন্তু তবুও থামার নাম নেই ভাইরাসটির। তৃতীয়বারের মতো নিজের রুপ বদল করে ওমিক্রন নামে বিশ্বজুড়ে এখনো আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে ভাইরাসটি। ইতিমধ্যে বিশ্বের ৩৫ কোটি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা ক্রমশই বাড়ছে। এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন এখনো ব্যাহত হচ্ছে মানুষের। মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে পড়ছে তারা।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিইএইচও) এক জরিপে দেখা গেছে যে, করোনার প্রভাবে মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ৯৩টি দেশে পরিচালিত জরিপের উল্লেখ করে ডব্লিউএইচও সতর্কতা জারি করে বলেছে, করোনাভাইরাসের সংকটময় সময়ে মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়।

এই বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, ‘মানসিক স্বাস্থ্য এবং মানসিক রোগ দুটি ভিন্ন বিষয়। করোনায় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক বিপর্যয় হয়েছে। এর প্রধানত তিনটি কারণ আছে। একটা জৈব বিষয়, একটা সাইকোলোজিক্যাল এবং আরেকটা হলো সোশ্যাল। এরমধ্যে বায়োলোজিক্যাল বিষয়টা হচ্ছে, এর ফলে ব্রেন আক্রান্ত হতে পারে। কেবল করোনাক্রান্ত লোক হলেই মানসিক বিপর্যস্ত হবে এমন নয়, করোনা না হলেও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তবে করোনায় মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে লকডাউন এবং অফিস বন্ধ থাকায় অনেকে নিজেদের চাকরী হারিয়েছেন। অনেকে নিজের ব্যবসা হারিয়েছেন। বিশাল অঙ্কের টাকার ক্ষতিরও শিকার হয়েছেন অনেকে। এরফলে অনেকে আত্মহত্যার দিকেও পথ বাড়িয়েছেন। এ নিয়ে ডা. বিধান রায় পোদ্দার যোগ করেছেন, ‘করোনায় মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে। এর ফলে মানসিকভাবে অনেকে ভেঙ্গে পড়েছেন। নিজের সঙ্গে না পেরে অনেকে আত্মহননের পথও বেছে নিয়েছেন। অনেকে নিজেকে একাকীত্বে বন্দী করে ফেলেছেন।’

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদিও করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে বর্তমানে সব চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বা অফিস-আদালত খোলা রাখলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। ওমিক্রন থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখতে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও করোনাভীতির একটা বিশাল চাপ সমগ্র জনগোষ্ঠীর ওপর পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে গেছে আমাদের তরুণ সমাজ।

এ নিয়ে ডা. বিধান রায় পোদ্দার আরও যোগ করেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এই করোনায়। তাদের ছোটাছুটি করার সময় কিন্তু তারা গৃহবন্দি হয়েছে। বিশেষ করে যারা শিক্ষার শেষ পর্যায়ে তাদের এখন চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়। কিন্তু চাকরিতে যোগ দিতে পারছে না এতে তারা মানসিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।’

মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় অনেকে উদ্বেগ, বিপর্যস্ত, একাকীত্বে ভোগে বিভিন্ন ধরনের মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন। অনিদ্রাজনিত রোগীও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে আমাদের অচিরেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজতে হবে। এই জন্য ডব্লিউএইচের মতে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

[poll id=”2″]

Previous articleবড়দের মতো শিশুদেরও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে
Next articleশীতকালীন মানসিক যত্ন নিয়ে জানুন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here