মানসিক রোগ: ‘বাইপোলার এ্যফেকটিভ ডিজঅর্ডার’

‘বাইপোলার এ্যফেকটিভ ডিজঅর্ডার’ এমন একটি মানসিক রোগ যা নাম দিয়ে চেনা যায়। ‘বাই’ শব্দের অর্থ দুই, আবার ‘পোলার’ মানে মাথা। অর্থাৎ এই রোগটির দুটি মাথা বা দুটি দিক থাকে। এক দিকে থাকে ডিপ্রেশন (বিষণ্নতা), যখন আক্রান্ত মানুষটি প্রচন্ডভাবে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়, মন খারাপ থাকে। অন্য দিকে থাকে ম্যানিক কন্ডিশান, অর্থাৎ মানুষটি তখন নিজেকে অনেক বড় মনে করতে থাকে, যখন তখন ক্ষেপে যায়, সব কিছুতেই অতি চঞ্চলতা কাজ করতে থাকে। খাবার দরকার নাই, ঘুম দরকার নাই, যেন সমস্ত শক্তি ও ক্ষমতা এসে লোকটির উপর ভর করে।
দুটি দিক থাকলেও রোগ মূলতঃ একটিই। নাম ‘বাইপোলার এ্যফেকটিভ ডিজঅর্ডার’। ডিপ্রেশন বা ম্যানিক, এক একটি এপিসোড বা পর্যায়, সাধারণত: দুই থেকে ছয় মাস, কখনো কখনো আরো বেশি সময় ধরে থাকতে পারে। চিকিৎসার ভিতর থাকলে যা কমে আসে।
কেন হয়?
কোনো কারণ তেমন ভাবে আবিষ্কৃত না হলেও, বংশ পরম্পরায় এই রোগের একটা সম্পর্ক বোঝা গেছে। অর্থাৎ পূর্ববর্তী নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কারো এরোগ থাকলে তা পরবর্তী জেনারেশন এর মাঝে হতে পারে।
শান্ত ছেলেটির গল্প
শান্ত ছেলেটি হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠার একটি বড় কারণ হতে পারে, এই ‘বাইপোলার এ্যফেকটিভ ডিজঅর্ডার’। হঠাৎ অবাধ্য হয়ে যাওয়া বেয়াদব হয়ে যাওয়া নয়, বরং একটি মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়া। কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে, এসব না ভেবে আচরণে পরিবর্তন আসার সাথে সাথেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত।
রোগীর আত্মীয় স্বজনরদের যা যা মনে রাখা প্রয়োজন
এটি এমন একটি রোগ যা প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আওতায় থাকলে সম্পূর্ন স্বাভাবিক জীবন কাটানো সম্ভব। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সবাই ভুল বুঝে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে বিভিন্ন উপদেশ দিতে থাকে। মনে রাখতে হবে, উপদেশে কোনো রোগ সারে না। শারীরিক রোগ যেমন উপদেশে সারার নয়, তেমনি মানসিক রোগের ক্ষেত্রেও একই কথা মনে রাখতে হবে। স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন এবং রোগাক্রান্ত অবস্থার পরিবর্তনের মাঝে পার্থক্য থাকে, যা একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়। তবে অবশ্যই উভয় ক্ষেত্রেই বিষয়গুলিকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
সতর্কতা
‘বাইপোলার এ্যফেকটিভ ডিজঅর্ডার’ রোগটির একটি সমস্যার দিক হলো, এটি একবার হলে, চিকিৎসায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসলেও মনে রাখতে হবে এ রোগের সমস্যাগুলি আবার যেকোনো সময় ফিরে আসতে পারে। সমস্ত উপসর্গ দূর হয়ে গেলেও এরোগটি আর হবেনা এটি বলা সম্ভব নয়।
লোকে কি বলবে বা কুসংস্কারের ভাবনা না ভেবে বরং চিকিৎসার স্মরণাপন্ন যত দ্রুত হওয়া যাবে ততই মঙ্গল।
চিকিৎসার উদ্দেশ্য
মূল উদ্দেশ্য ডিপ্রেশন বা ম্যানিক পর্যায়ের সিম্পটম গুলোকে কমানো হলেও, এই রোগের চিকিৎসার আরো কিছু দিক থাকে। যেমন; রোগটির সমস্যাগুলি যাতে বার বার ফিরে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখা, সেই সাথে ডিপ্রেশনের কারণে অতি খারাপ মনকে ভালোর দিকে রাখা এবং অতি ভালো থাকা মনকে (ম্যানিক পর্যায়) স্বাভাবিক অবস্থায় রাখাও এরোগের চিকিৎসার উদ্দেশ্য। মনের অবস্থাকে স্বাভাবিক বা মাঝখানে রাখাই চিকিৎসার একটি বড় দিক।
চিকিৎসা
মুড স্টেবিলাইজারঃ মুডকে স্টেবল রাখার জন্য এধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। বিষণ্নতা বা ম্যানিক যেকোনো দিকে অতিরিক্ত ঝুকে না পড়ে মনকে মাঝখানে ধরে রাখে এই মুড স্টেবিলাইজার।
এন্টিডিপ্রেশেন্টঃ অতিরিক্ত খারাপ হয়ে যাওয়া মন বা ডিপ্রেস্ট মনকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনার জন্য এধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
এন্টিসাইকোটিকঃ ম্যানিক পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য এন্টিসাইকোটিক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
সেই সাথে প্রয়োজন মতো ঘুম বা অস্থিরতা কমানোর জন্যও কিছু কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
সাইকোথেরাপীঃ সাধারণত সিম্পটম যখন বেশি থাকে তখন সাইকোথেরাপী কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনা। তবে ফ্যামেলি এডুকেশন বা সাইকোএডুকেশন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দিক। যার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের রোগটির বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বা নির্দেশনা দিয়ে, কখন কি করতে হবে সেসব বিষয়ে শতর্ক করে তোলা হয়।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleসুদীপ্ত ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার
Next article১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস
চেয়ারম্যান, মনোরোগবিদ্যাি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here