মাদকাসক্ত ব্যক্তি কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে?

মাদকাসক্ত ব্যক্তি কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে?

সমস্যা: আমার খুব কাছের এক আত্মীয় মাদকাসক্ত। তার পরিবার অনেকবার এই  বিষয়ে তার চিকিৎসা করিয়েছে। প্রতিবার চিকিৎসা করার পর অল্প কিছুদিন ভালো থাকেন,  পরে কিছু দিন যাওয়ার পর আবার নেশা শুরু করে। আমার প্রশ্ন হলো কোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি কি সম্পুর্ণ রূপে সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে? যদি পারে তাহলে কিভাবে এবং কোথায় চিকিৎসা নিলে আমার ঐ আত্মীয় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে? হায়দার আলী, গাজীপুর।

পরামর্শ: চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়- মাদকাসক্তি বা ড্রাগ অ্যাডিকশন একটি ক্রনিক রিল্যাপসিং রোগ। অর্থাৎ এ রোগ অনেকের কাছে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে কিছুদিন কোনো ক্লিনিকে ভর্তি রাখা বা  রিহ্যাব করানোই এর চিকিৎসা। তারা মনে করেন, একবার কিছুদিন ভর্তি রাখলেই মাদকাসক্ত ব্যক্তি সম্পুর্ণ ভালো হয়ে সুপথে ফিরে আসবে। কিন্তু এ ধারণাটি ঠিক নয়।

মাদকের চিকিৎসা মানেই একটি সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় মাদক না নেয়ায় যে অসহ্য শারীরিক-মানসিক প্রতিক্রিয়া হয়, সে কারণে সে নিজেকে মাদক থেকে দূরে রাখতে পারে না। এই প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ এবং রোগীকে ভর্তি রাখা প্রয়োজন হতে পারে।

কিন্তু এটি কেবল মাদক চিকিৎসার শুরু। নিয়মিত মাদক সেবনের তীব্র প্রভাবটি কেটে যাওয়ার পর মূল কাউন্সেলিং এবং রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম শুরু হয়। যারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন, শরীর থেকে মাদক বেরিয়ে গেলেও তাদের মস্তিষ্কে মাদকের ক্রিয়ায় মস্তিষ্কে দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন হয়ে থাকে, যার কারণে তাদের আবারো মাদক নেয়ার আশংকা থেকেই যায়।

এ সময় মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য মানসিক রোগ চিকিৎসক, সাইকোলজিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, সোশ্যাল ওয়ার্কার সহ সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।

মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে শুধু মাদকের কুফল সম্পর্কে সাবধান করে দিলেই সে মাদক থেকে দূরে থাকতে পারবে না। বার বার মাদকের পথে পা বাড়ানোর পেছনের কারণটি অনুধাবন করতে হবে। সাইকোলজিস্ট সে কারণটি বের করে আনতে পারেন এবং তা থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিতে পারেন। কিন্তু তা কার্যকর করতে হবে পরিবারকেই।

ব্যক্তির জীবনযাপনকে নিয়মতান্ত্রিক করতে হবে। ব্যক্তিকে যেমন ইতিবাচক হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তেমনি তার জন্য ইতিবাচক একটি পরিবেশেরও ব্যবস্থা করতে হবে। সে রকম অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে পারলে মাদকাসক্ত ব্যক্তিও দীর্ঘদিন সুস্থ, স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। আপনার আত্মীয়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও এই বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

সরকারী পর্যায়ে তেজগাঁও কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে এই চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে। এছাড়া জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সমূহের মানসিক রোগ বিভাগে মাদকাসক্তি চিকিৎসার ব্যাপারে যোগাযোগ করতে পারেন।

পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. মুনতাসির মারুফ

Previous articleক্রোধের ক্ষতি : নিজেকে রক্ষা করার কৌশল
Next articleশিশুর মানসিক নির্যাতন : প্রতিরোধ ও প্রতিকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here