মন, মনোরোগ এবং চিকিৎসা

ঝেড়ে ফেলুন হতাশা

‘মন’ একটি অতি পরিচিত এবং প্রায়শই উচ্চারিত শব্দ। মস্তিষ্কের প্রতিমুহূর্তের ক্রিয়াকর্মের সুসংগঠিত সামষ্টিক অবস্থাই হলো মন। এর মাধ্যমে আমাদের ইচ্ছাশক্তি, চিন্তা, কল্পনা, স্মৃতি, আবেগের সৃষ্টি হয় এবং আমরা বিভিন্ন তথ্য উপাত্তকে যৌক্তিকভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
একজনকে আমরা মানসিকভাবে সুস্থ তখনই বলব যখন সে তার মানসিক কার্যক্রম (চিন্তা-চেতনা-আবেগ-আচরণ) সার্থকতার সাথে পরিচালনার মাধ্যমে ফলদায়ক কর্মসম্পাদন করে। নিজেকে তার পারিপার্শ্বিক জগতের সাথে সুসমন্বিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ সহ‍াবস্থান করতে সক্ষম হয়।
শরীর যেমন অসুস্থ হয়, মনও তেমনি অসুস্থ হতে পারে। মানসিক রোগের মধ্যে কতগুলো হলো গুরুতর মানসিক রোগ। যেমন স্কিজোফ্রেনিয়া রোগ, মেনিয়া এবং গুরুতর মাত্রার বিষন্নতা। আবার কিছু লঘুতর মানসিক রোগ। যেমন, দুঃচিন্তা রোগ, অহেতুক ভয় রোগ, সুচিবাই রোগ, নিদ্রাহীনতা রোগ, মানসিক পীড়ন জনিত রোগ ইত্যাদি।
লঘু মানসিক রোগ প্রাথমিক অবস্থায় মনস্তাত্ত্বিক ভাবে চিকিৎসা করা যেতে পারে। তবে গুরুতররূপ ধারণ করলে অবশ্যই ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করাতে হবে। গুরুতর মানসিক রোগের চিকিৎসায় ওষুধের ভূমিকাই প্রধান।
মানসিক রোগের বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা শুরুর পূর্বে মানসিক রোগীকে ডাইনী, বিপথগামী, শয়তান, ইত্যাদি হিসেবে মনে করা হতো এবং এসব রোগকে শয়তানের প্রভাব, কুকর্মের ফল বা পাপের শাস্তি হিসেবে দেখা হতো এবং ঝার-ফুক, তুক্-তাক যাদু-টৌনা, শারীরিক শাস্তি ইত্যাদির মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা হতো। এমনকি এদের পুড়িয়েও মারা হতো।
পরবর্তীতে এদের মানসিক রোগী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হলেও নিরাময়কারী ওষুধ না থাকায়-যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব ছিলো না। ফলে এদের লোকালয় থেকে দূরে কোনো পাগলা গারদে বন্ধ করে রাখা হতো এবং চিকিৎসার নামে বিভিন্ন শারীরিক নির্যাতন করা হতো।
মানসিক রোগের বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক চিকিৎসা শুরু হয় বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে- লিথিয়াম, ক্লোরপ্রোমাজিন, ডায়াজিপাম ইত্যাদি যুগান্তকারী ওষুধ আবিষ্কারের পর থেকে। এসব ওষুধ রোগীকে দ্রুত শান্ত করে রোগ নিরাময়ে অত্যধিক কার্যকর হিসেবে পরিলক্ষিত হওয়ায় মানসিক রোগীদের বাড়িতে রেখে অথবা সাধারণ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করা শুরু হয়।
বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধনের ফলে প্রায় প্রতিটি মানসিক রোগেরই কার্যকরী ওষুধ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং আরও উন্নততর ওষুধ আবিষ্কার হচ্ছে, যেগুলো আরও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে মস্তিস্কের উপর ক্রিয়াশীল।
সুতরাং মানসিক রোগ নিয়ে অহেতুক শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। প্রয়োজন শুধু কুসংস্কারমুক্ত মানসিকতা, সঠিক সময় সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা। এরপর সঠিক ওষুধ সঠিক মাত্রায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রয়োগের মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান।

Previous articleযৌনাচরণের মূল নিয়ন্ত্রক মন
Next articleমানসিক ভুল ধারণা ও কুসংস্কার থেকে মুক্তির উপায়

1 COMMENT

  1. আমার মাথা সবসময় ভার হয়ে থাকে মেডিসিন ও নিউরোমেডিসিন নাক কান গলা ডাক্তার দেখাইছি সমাধান হয়নি আমাকে সবার সাথে মিশতে ভাল লাগেনা আমার একা থাকতে ভাল লাগে আমার স্মরনশক্তি থাকে না জানিনা আমার অসুখ সারবে কিনা আমি ইনডেভার১০ ও সেরোলাক্র ৫০ খাচ্ছি ৬মাস ধরে কিন্তু মাথা ভার হয়ে প্রচন্ড এবং কাজ করে না আমি স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করতে পারি না ডাঃজ্যোতিময় সারের পরামর্শ চাচ্ছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here