মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা পরস্পর সম্পূরক

মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষা পরস্পর সম্পূরক

শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রকে মনোবিজ্ঞান নানা ভাবে প্রভাবিত করে। শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক আলোচনা করলে ভালোভাবে বোঝা যায়। মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার মধ্যে দুটি সম্পর্ক থেকে বিচার করা যায়। তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক।

তাত্ত্বিক দিক

ব্যক্তির বিকাশ সম্পৰ্কীয় তথ্য: শৈশব, বাল্যকাল এবং বয়ঃসদ্ধি জীবন বিকাশের এই স্তর শিক্ষার্থী অতিক্রম করে। বিকাশের এই স্তরগুলোর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। শিক্ষার্থীর বিভিন্ন স্তরের বৈশিষ্ট্যাবলো (যা বিকাশমূলক মনোবিজ্ঞানের বিষয়) জানা থাকলে শিক্ষার্থীর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিবর্তন নিয়ে আসা (যা শিক্ষার লক্ষ্য) অনেক সহজ হয়।

ব্যক্তিগত পার্থক্য: শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত পার্থক্য একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। ব্যক্তিগত পার্থক্যের কারণ, ব্যক্তিগত পার্থক্যকে ভিত্তি করে শিক্ষার্থীর শিক্ষা পরিকল্পনা, শিক্ষার্থীর সন্তাবনাগুলোর পূর্ণ বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রচনা সবই মনোবিজ্ঞানের বিষয় যা শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষার্থীর সমস্যার সমাধান: পাঠ্যবিষয় শিখন, অন্যান্য শিক্ষার্থী বন্ধুদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ছাত্র-শিক্ষক সু-সম্পর্ক প্রভৃতি নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা দেখা যায়, যার সমাধান ব্যতীত শিক্ষা কার্যকরী হয় না। এইসব সমস্যা সমাধানে মনোবিজ্ঞান বিশেষভাবে সাহায্য করে। শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান: ছাত্র ও শিক্ষকের সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মানসিক স্বাস্থ্য কাকে বলে, কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্যের অভাব, কীভাবে শিক্ষার ওপর প্রভাব বিস্তার করে প্রভৃতি বিষয়ক জ্ঞান মনোবিজ্ঞান থেকেই সংগ্রহ করা যায় এবং এই তথ্য শিক্ষাকে সার্থক করে তুলতে বিশেষ প্রয়োজন।

বয়ঃসন্ধিক্ষণ: শিক্ষাজীবনে বয়ঃসন্ধিক্ষণের স্তর সকলকেই অতিক্রম করতে হয়। এই সময়ে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রকমের সমস্যার মুখোমুখি হয়। সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা, সমস্যাকে সার্থকভাবে মোকাবিলা করা, এই সময়ের বিশেষ চাহিদাগুলোকে সঠিকভাবে পূরণ করে ব্যক্তি ও সমাজের কল্যাণসাধন করা সবই শিক্ষার বিষয়। যাকে কার্যকরী করে তুলতে বয়ঃসন্ধিক্ষণের মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান প্রয়োজন।

ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের বিশেষ শিক্ষা: দৈহিক ও মানসিকভাবে ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণ, বিশেষ করে মানসিকভাবে ব্যতিক্রমী এবং তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা পরিকল্পনা করা গণতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচিকে কার্যকরী করে তুলতে ব্যতিক্রমী শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানা প্রয়োজন যা মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা।

দলীয় গতিশীলতা: কার্যকরী পাঠদানে শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে দলীয় গতিশীলতা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। মনোবিজ্ঞান এই দলীয় গতিশীলতা সম্পর্কে জ্ঞান ও তথ্য সরবরাহ করে।

পাঠদানের উদ্দেশ্য নির্ণয় করা: শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের উদ্দেশ্য নির্ণয় করা মনোবিজ্ঞানের সাহায্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। উদ্দেশ্যগুলো অর্জনযোগ্য ও পরিমাপযোগ্য কিনা তার বিচারে এবং উদ্দেশ্যগুলো যাতে জ্ঞান, বোধ, প্রয়োগ প্রভৃতি জ্ঞানমূলক বিকাশের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় তার জন্য মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান বিশেষ প্রয়োজন। এইভাবে পাঠদানের উদ্দেশ্য নির্ধারণে মনোবিজ্ঞানের বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়।

প্রায়োগিক বা ব্যবহারিক দিক

প্রায়োগিক বা ব্যাবহারিক দিক থেকেও শিক্ষার সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক গভীর। নীচে তা আলোচনা করা হল-

শৃঙ্খলার সমস্যা: মনোবিজ্ঞানীরা বলেন শৃঙ্খলা হবে স্বতঃস্ফুর্ত। শিক্ষার্থীরা যখন শৃঙ্খলার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে, তখন নিজেরাই তারা শৃঙ্খলারক্ষায় আগ্রহী হবে।

শিক্ষণশিখন প্রক্রিয়া: কার্যকরী শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া নির্ভর করে উপযুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি ও সঠিক শিক্ষা সহায়ক উপকরণ নির্বাচনের ওপর। এ ব্যাপারে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান বিশেষভাবে প্রয়োজন।

গণতান্ত্রিক প্রশাসন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক প্রশাসন পরিচালনায় মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান বিশেষ প্রয়োজন।

সময় তালিকা: এককথায় বলা যায়, সময় তালিকা প্রস্তুতের মধ্য দিয়ে শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে ব্যাবহারিক সম্পর্কের পরিচয় পাওয়া যায়।

সহগাঠক্রমিক কার্যাবলি: শিক্ষার লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীর সুসংহত ব্যক্তিত্বের বিকাশ। শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষে পঠন পাঠনের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধিক বিকাশ শিক্ষার্থীর সুসংহত ব্যক্তিত্ব বিকাশে যথেষ্ট নয়। সুসংহত ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির গুরুত্ব আমরা মনোবিজ্ঞান থেকেই জানতে পারি।

নতুন চিন্তাধারার প্রভাব: শিক্ষাব্যবস্থায় নতুন নতুন চিন্তাধারার প্রয়োগের ফলে ব্যাপক উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বয়ংশিখন পদ্ধতি, প্রোগ্রাম শিখন পদ্ধতি, অনুশিক্ষণ পদ্ধতি, মূল্যায়নে গ্রেডিং পদ্ধতি, টিম টিচিং ইত্যাদি নতুন চিন্তাধারা এর মধ্যে অন্যতম। এইসব কিছুরই মূলে রয়েছে মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান। তাই শিক্ষা ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বর্তমান।

Previous articleমনের জগতে যৌন সমস্যা
Next articleমনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়াই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গভীর করে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here