প্যারেনটিং স্টাইলের সাথে সন্তানের আত্মহত্যার সম্পর্ক

কৈশর, যৌবনে আত্মহত্যার চিন্তা আসা এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করা খুবই বিপদের লক্ষণ হলেও এটা বিরল নয়। বিভিন্ন ফ্যাক্টর আত্মহত্যার পেছনে কাজ করে। প্যারেনটিং স্টাইলের সাথে সন্তানের আত্মহত্যার প্রচেষ্টার কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা নানা সময় নানা দেশে গবেষণা করে আসছেন।

২০০৭ সালে ক্যারোলিন ডোনাথ এবং তার সহকর্মীরা জামার্নীতে ৯ম শ্রেণীর ৪৪,৬১০ জন ছাত্রছাত্রীর উপর প্যারেনটিং স্টাইলের সাথে সন্তানের আত্মহত্যার কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, প্যারেনটিং স্টাইলের সাথে সন্তানের বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক আচরণ সম্পর্কযুক্ত। যেমনঃ Authoritarian ও Parents Neglecting-Rejecting প্যারেনটিং এর সাথে সন্তানদের মাদকদ্রব্য গ্রহণ, নিম্ন আত্মবিশ্বাস ও নিম্ন সামাজিক অভিযোজন ক্ষমতার উচ্চ সহ-সম্পর্ক বিদ্যমান।

গবেষণায় আরো দেখা যায় যেসব পিতামাতার সাথে সন্তানের উষ্ণ আবেগীয় সম্পর্ক কম এবং যেসব মায়েরা সন্তানদের উপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন তাদের সন্তানদের আত্মহত্যার ঝুকি বেশি Authoritative Parent-দের সন্তানদের চেয়ে। অন্যদিকে Neglecting-Rejecting Parent-দের সন্তানদের চেয়ে Authoritative Parent-দের সন্তানদের আত্মবিশ্বাস ‍উচ্চ থাকে, আত্মনিয়ন্ত্রন বেশি থাকে এবং তারা বন্ধু-বান্ধব দ্বারা কম প্রভাবিত হয়, ফলে তারা কম মাদক সেবন করে এবং কম সহিংস আচরণ করে। এই গবেষণায় আরো দেখা যায় যে, সন্তানদের শারীরিক শাস্তি, গালাগাল করা ও আবেগীয় নির্যাতন তাদের আত্মহত্যার সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।

মার্টিন ও তার সহকর্মীরা ১৯৯৪ সালে অস্ট্রেলিয়াতে একই বিষয় নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। তাদের গবেষণার ফলাফলে তারা দেখেছিলেন যে, Authoritarian পিতামাতারা অর্থাৎ যেসব পিতামাতার তাদের সন্তানদের সাথে উচ্চ নিয়ন্ত্রন ও নিম্ন উষ্ণতার সম্পর্ক বিদ্যমান সেসব সন্তানদের আত্মহত্যার ঝুঁকি দ্বিগুণ এবং Self harm করার ঝুঁকি তিনগুণ বেশি Authoritative Parent-দের সন্তানদের চেয়ে।

বায়ার এবং ডেভিন নামে দুজন গবেষক ২০১৩ সালে প্যারেনটিং স্টাইলের সাথে সন্তানদের পথভ্রষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ করার সম্পর্ক গবেষণা করতে গিয়ে দেখতে পান যে, পিতামাতার মধ্যে ঝগড়া-ঝাঁটি, মারামারি, কম আবেগীয় সম্পর্ক সন্তানদের আত্মহত্যামূলক বিভিন্ন আচরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত, বিশেষ করে ছেলে সন্তানদের ক্ষেত্রে দেখা যায় পিতামাতার মধ্যে নিম্ন আবেগীয় সম্পর্ক, মারামারি, ঝগড়া বিবাদ তাদের আত্নহত্যার প্রচেষ্টার সাথে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত।

ফ্লোরিজানো ও তার সহকর্মীরা চিলিতে ২০১১ সালে আত্নহত্যার প্রচেষ্টার সাথে প্যারেনটিং স্টাইলের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষণার ফলাফলে তারা প্যারেনটিং স্টাইলের সাথে শিশু-কিশোরদের আত্মহত্যার খুব সামান্য সম্পর্ক দেখতে পান। প্যারেনটিং স্টাইল ছাড়াও তারা আরও কিছু উপাদান খুঁজে পান যেগুলো আত্মহত্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত, যেমনঃ বয়স, লিঙ্গ ইত্যাদি।

বিভিন্ন গবেষণার থেকে আরো দেখা যায় শিশু-কিশোরদের আত্মহত্যার প্রচেষ্টার সাথে প্যারেনটিং স্টাইল গুরুত্বপূর্ণ ভাবে সম্পর্কযুক্ত। যেখানে Authoritative Parent-দের সন্তানেরা খুব সুন্দরভাবে, সুন্দর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বড় হচ্ছে বিপরীত দিকে Neglecting-Rejecting Parent-দের সন্তানদের আত্নহত্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleআত্মহত্যায় পৃথিবী ও বাংলাদেশ
Next articleস্বেচ্ছামৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here