পিরিয়ডে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

পিরিয়ডে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

২৮-মে পালিত হল ‘বিশ্ব পিরিয়ড স্বাস্থ্য দিবস”। দিবসটির মূল উদ্দেশ্য হল ঋতুস্রাবের সাথে সম্পর্কিত সামাজিক কলঙ্ক বা ট্যাবু পরিবর্তন। ২৮-মে দিবসটি পালন করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল কারণ বেশিরভাগ মহিলার জন্য গড়ে মাসিক চক্র ২৮ দিন এবং বেশিরভাগ মহিলার ঋতুস্রাব পাঁচ দিনের জন্য। সুতরাং, তারিখটি ২৮/৫ হিসাবে রাখা হয়েছিল। এ বছরের থিম ছিল: “মাসিক স্বাস্থ্যবিধি এবং স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অ্যাকশন এবং বিনিয়োগ”।

আমরা এখন কমবেশি সবাই পিরিয়ড স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবি। নিজেকে সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাবার খাই, বিশ্রাম নেই, নেই চিকিৎসকের পরামর্শ। কিন্তু এ সময়ে যে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নও প্রয়োজন সেটা কি মনে রাখি?

Premenstrual Syndrome/ প্রাক-মাসিক সিনড্রোম (PMS):
প্রাক-মাসিক সিন্ড্রোম হল সংবেদনশীল, শারীরিক এবং মানসিক অস্থিরতার সংমিশ্রণ যা কোনও মহিলার ডিম্বস্ফোটনের পর ঘটে থাকে এবং ঋতুস্রাবের ১ থেকে ২ সপ্তাহ আগে শুরু হয়ে ঋতুস্রাবের প্রবাহ শুরু হওয়ার সাথে সাথে শেষ হয়। সাধারণ লক্ষণগুলো হল বিরক্তি, হতাশা, কান্নাকাটি, অত্যধিক সংবেদনশীলতা এবং মেজাজের পরিবর্তন। এছাড়াও ক্লান্তি, ফোলাভাব, স্তনের কোমলতা (Malastigia), ব্রণ এবং ক্ষুধা পরিবর্তন। এটি সাধারণ মানুষের কাছে mood swing নামে পরিচিত।

প্রায় ৯০% মহিলা জীবনের কোনও এক সময় প্রাক ঋতুস্রাবের লক্ষণগুলো অনুভব করেন। অনুমান করা হয় যে ক্লিনিকালি পিএমএস ২০% থেকে ৩০% মহিলাদের মধ্যে ঘটে। এই পরিবর্তনগুলো যদি দৈনন্দিন কাজে বাধা দেয় যেমন, কর্মক্ষেত্র, পরিবার এমনকি বন্ধু-বান্ধবের সাথেও সমস্যা সৃষ্টি করে তবে এটি পিএমএস হতে পারে। টানা ৩ মাস ধরে লক্ষণগুলো থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

Premenstrual Dysphoric Disorder/ প্রাক মাসিক ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার (PMDD) কী?
পিএমএসের আরও মারাত্মক রূপ, প্রিমেন্সট্রুয়াল ডিসফোরিক ডিসঅর্ডার (PMDD)। এটি Late Luteal phase of Premenstrual Dysphoric Disorder (LLPDD) নামেও পরিচিত। এর অস্বাভাবিক গুরুতর লক্ষণগুলোর কারণে দৈনন্দিন কাজের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন পিএমডিডিকে পিএমএসের একটি গুরুতর রূপ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যেখানে ক্রোধ, বিরক্তি এবং উদ্বেগ বা উত্তেজনা বিশেষভাবে বর্তমান।

পিএমডিডি কি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা?
পিএমডিডি সাধারণত এন্ডোক্রাইন ডিসঅর্ডার হিসাবে সংজ্ঞায়িত হয়। এটি হরমোনজনিত ব্যাধি। তবে শারীরিক লক্ষণগুলোর পাশাপাশি, পিএমডিডিতে বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য উপসর্গ যেমন, হতাশা এবং আত্মঘাতী অনুভূতিগুলোর অভিজ্ঞতা হয়। এ কারণে, এটি সম্প্রতি ডিএসএম-5 (মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা শ্রেণিবদ্ধকরণ এবং নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসাগুলোর একটি অন্যতম প্রধান ম্যানুয়াল)-এ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

পিএমডিডি-র কারণ:
পিএমডিডি-র সঠিক কারণ জানা যায়নি। এটি ঋতুস্রাবের সময় ঘটে যাওয়া স্বাভাবিক হরমোন পরিবর্তনের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। হরমোনের পরিবর্তন সেরোটোনিনের ঘাটতি তৈরি করে। সেরোটোনিন এমন একটি পদার্থ যা মস্তিষ্ক এবং অন্ত্রগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। যা রক্তনালীগুলোকে সংকুচিত করে, মেজাজকে প্রভাবিত করে এবং শারীরিক লক্ষণগুলো ঘটায়।

পিএমএস ও পিএমডিডি-র পারিবারিক ইতিহাস সহ অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং ধূমপান।

পিএমডিডি-র লক্ষণ:
১। ঋতুস্রাবের এক সপ্তাহ আগে থেকে পিএমডিডির লক্ষণগুলো দেখা দেয় এবং শুরু হবার কয়েক দিনের মধ্যে শেষ হয়। এই লক্ষণগুলো প্রতিদিনের জীবনযাপনকে ব্যাহত করে। লক্ষণগুলো এত মারাত্মক যে মহিলারা এ সময়ে বাড়িতে, কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে সমস্যায় পরেন। অনেক সময় এ কারণে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে অনাগ্রহী হবার কারণে ভুল বোঝাবুঝি হয় এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়।

২। মানসিক লক্ষণ: মেজাজ অস্বস্তি, নার্ভাসনেস, চিন্তা নিয়ন্ত্রণের অভাব, হৈচৈ, রাগ, অনিদ্রা ও ঘুমের সমস্যা, মনোযোগে সমস্যা, বিষণ্ণতা, মারাত্মক ক্লান্তি, উদ্বেগ, বিভ্রান্তি, ভুলে যাওয়া, অলীক কল্পনা, আবেগ সংবেদনশীলতা, কান্না ইত্যাদি।

৩। শারীরিক লক্ষণ: তলপেটে ব্যথা বা চাপ, গোড়ালি, হাত এবং পা ফোলা কিম্বা ব্যথা, পর্যায়ক্রমিক ওজন বৃদ্ধি/হ্রাস, প্রস্রাব সংক্রমণ, স্তন স্ফীতি এবং ব্যথা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা, এলার্জি, হট ফ্ল্যাশ ইত্যাদি।

৪। চোখের সমস্যা: চোখের সংক্রমণ।

৫। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণ: পেট ব্যথা বা ফুলে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব, বমি করা, পিঠে ব্যথা ইত্যাদি।

৬। ত্বকের সমস্যা: ব্রণ, চুলকানি, প্রদাহ, ঘা সহ অন্যান্য ত্বকের সমস্যা।

৭। নিউরোলজিক এবং ভাস্কুলার লক্ষণ: মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, অজ্ঞান, কাঁপুনি, বাহু/পায়ে সংবেদনশীলতা, কালশিরা, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি।

এটি অন্যান্য সমস্যা যেমন, থাইরয়েড, হতাশা বা উদ্বেগজনিত ব্যাধির মতো হতে পারে। এক বছরের মধ্যে পাঁচ বা ততোধিক লক্ষণ দেখা যেতে পারে। সময়ের সাথে লক্ষণগুলোর তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং মেনোপজ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

পিএমডিডি-র চিকিৎসা:
১। রোগ নির্ণয়ের জন্য সর্বদা স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীর সাথে কথা বলতে হবে। ইউটিউব দেখে নিজে আন্দাজে কিছু না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২। প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি খেতে হবে। চিনি, লবণ, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল কমিয়ে ডায়েট পরিবর্তন করতে হবে। ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট (যেমন ভিটামিন B6, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম) গ্রহণ করতে হবে।

৩। নিয়মিত ব্যায়াম, চাপ নিয়ন্ত্রণ, রাগ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি প্রশিক্ষণ নেয়া যেতে পারে। নিয়মিত ডীপ ব্রেথিং, মাইন্ডফুলনেস, মেডিটেশন প্র্যকটিস থাকা উচিৎ।

৪। পিরিয়ড ডাইরি তৈরি করলে এ সময়ে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া যেমন সহজ হবে তেমনি কি কি ধরনের সমস্যা হচ্ছে তাও লিখে রাখা যাবে। মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনার কিছু আ্যপস আছে সেগুলো মোবাইলে থাকলে এক্ষেত্রে সুবিধা হতে পারে।

৫। তৈরি করা যেতে পারে সব প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে মেন্সট্রুয়াল হ্যাপি বক্স যাতে থাকতে পারে প্যাড, ক্যাপ, প্যান্টি সহ পছন্দের জিনিস যেমন, বই, মুভি লিস্ট, পারফিউম, চকলেট ইত্যাদি। শুধু নিজের জন্য নয় আপনার বয়ঃসন্ধিকালীন মেয়ে কিম্বা বান্ধুবিকেও উপহার দিতে পারেন এমন একটি বক্স।

৬। মন ভাল রাখার জন্য কিছু রঙিন পোশাক আলাদা করে রাখা যেতে পারে। এবং অবশ্যই এসময় পরিচ্ছন্ন এবং সংক্রমণ মুক্ত থাকতে হবে।

৭। অনেকেই এসময় নিজেকে নাপাক মনে করে সব কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। নামায/ প্রার্থনা করতে পারেন না বলে অপরাধবোধে ভুগেন। মনে রাখতে হবে, আপনার মাসিকের রক্ত নাপাক কিন্তু আপনি নাপাক নন। তাই সব কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা নিছক বোকামি। পারিবারিক সম্পর্কগুলো এসময় সাপোর্টিভ হওয়া উচিৎ।

পিএমএস এবং পিএমডিডি উভয়ের চিকিৎসায় একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শের পাশাপাশি মনোরোগ বিশেষজ্ঞেরও পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। ওষুধগুলো যেমন কষ্ট কমাতে পারে তেমনি মনোচিকিৎসকের পরামর্শ ব্যক্তিকে সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।

পিরিয়ড নিয়ে কিশোরীদের অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করেছিলাম। তাদের অনুভূতিকে যথাযথ সম্মান জানিয়ে, গোপনীয়তা রক্ষা করেই তা তুলে ধরা হল।

কিশোরী-১
“আমার যখন প্রথম পিরিয়ড শুরু হয় তখন আমার বয়স ১১ বছর। তখন আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। কীভাবে কি করব তা বুঝতে পারছিলাম না। তারপর আমার মা-কে বলি, মা আমাকে সাহায্য করেন। কিন্তু তখন আমার খুব রাগ লেগেছিল। আমার যখন পিরিয়ড হয় তখন রাগ হয় আর খুব পেট ব্যথা করে, কারো সাথে কথা বলতে ভাল লাগেনা। এখন আমার বয়স ১৫। একবার পরীক্ষার আগের দিন আমার পিরিয়ড শুরু হয়েছিল। তখন অনেক পেট ব্যথা করেছিল। ভাল মতো পড়তে পারিনি, পরীক্ষা ভাল দিতে পারিনি। আমার এক বান্ধুবির এখনো পিরিয়ড হয়নি, তাকে এ সম্পর্কে জানিয়েছি যে, পিরিয়ড হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়, পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। তবে পিরিয়ড হবার আগে পেট ব্যথা হয়।”

কিশোরী-২
“আমার এখন ১৬ বছর। আমার যখন প্রথম পিরিয়ড হয় তখন ১৩ বছর বয়স। আমার ভয় লাগেনি কারণ মা আমাকে আগে থেকে ধারণা দিয়েছিলেন যে এরকম কিছু হবে, ফিজিকাল চেঞ্জ হবে। আমার যখন পিরিয়ড শুরু হয় তখন মুড সুইং করে, পেট ব্যথা, মাথা ব্যথা হয়, খেতে ইচ্ছা করেনা। এ সময় মানুষের সাথে কম কথা বলি কারণ মতের মিল নাহলে আমার রাগ লাগে, বিরক্ত লাগে। নিজের মতো একা থাকতে ভাল লাগে। নিজেকে সামাল দিতে ট্রাই করি। পিরিয়ড শুরু হবার আগে ভয় লাগেনা কারণ আমি জানি এটা আল্লাহ্ প্রদত্ত। কোনো অবাঞ্ছিত ঘটনা হয় না কারণ আগে থেকে প্রিপারেশন নিয়ে থাকি। আমার পক্ষ থেকে সব মেয়েদের বলতে চাই ভয়ের কিছু নেই। তোমার যা ভাল লাগে তাই করবে। আমার যেমন কারো সাথে কথা বলতে ভাল লাগেনা তাও আমি চেষ্টা করি। কিন্তু আমি দেখেছি এটা অনেকেরই সমস্যা যে মুড সুইং করে তাই বলব কারো কথা না শুনে তুমি তোমার মত ভাল থাকবে।”

কিশোরী-৩
“আমার বয়স এখন ১৯ বছর। আমার প্রথম বার পিরিয়ড শুরু হয় ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়। যেহেতু আগে থেকেই জানতাম এ সম্পর্কে আর আমার বেশ কিছু বান্ধবীর তখন পিরিয়ড হয়ে গিয়েছিলো তাই আমার কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক ছিলো। তবে আমি মোটেও খুশি ছিলাম না তখন। আমার পিরিয়ড সাধারণত ৩/৪ দিন থাকে। যখনই পিরিয়ড হয় আমার বেশি মুড সুইং হয়। লাস্ট ১ বছর ধরে সিভিয়ার পেট ব্যথা ফেস করেছি যার কারণে প্রথম দিন আমি বিছানা থেকেও উঠতে পারিনি। খাওয়ার রুচি চলে যায়। বাহিরেও যেতে ইচ্ছে করেনা। কিন্তু আমি হাইজিনটা সবসময় সবথেকে বেশি প্রায়োরিটি দিয়ে মেইনটেইন করার চেষ্টা করি। যেমন প্রতিদিন শাওয়ার নেওয়া, ৬ ঘন্টা অন্তর অন্তর প্যাড চেঞ্জ করা ইত্যাদি। আমার পিরিয়ড সাইকেল ইরেগুলার হয়। এমনও হয়েছে যে ৩ মাস পর পিরিয়ড হয়েছে। পিরিয়ড হওয়ার ২/১ দিন আগে বুঝতে পারি কারণ আমার পা আর কোমর ব্যথা করে। যখন বুঝতে পারি আমার পিরিয়ড হবে, চেষ্টা করি কথা কম বলতে, বাহিরে না যেতে। মুভি/সিরিজ দেখি নিজেকে ভুলিয়ে রাখার জন্যে যে পিরিয়ড শুরু হবে। অন্য মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলবো অবশ্যই ৫/৬ ঘন্টা অন্তর অন্তর প্যাড চেঞ্জ করতে। প্রতিদিন প্যান্টি ধুয়ে দিতে হবে। আর অবশ্যই প্রতিদিন শাওয়ার করতে হবে।”

কিশোরী-৪
“আমার বয়স ১৪ বছর ৮ মাস। আমার প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়েছিল ১২ বছর বয়সে। যদিও মা আমাকে পিরিয়ড নিয়ে আগেই বলেছিলেন যে এটি সব মেয়েদেরই হয় এবং বয়:সন্ধিকালীন একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। মা আমাকে বয়:সন্ধিকালীন পরিবর্তন নিয়ে কিছু বই পড়তে দিয়েছিলেন যার জন্য আমার কিছু ধারণা ছিল। কিন্তু তারপরও যেদিন আমার প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়েছিল, একটা আজব অস্বস্তি আর তলপেটে ব্যথা নিয়ে সকালে ঘুম ভেঙেছিল। ওয়াশরুমে গিয়ে ভয়ে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম। মনে হয়েছিল, এ ভয়ংকর ব্যাপারটা আমার সাথে ঘটেই গেল! তারপর মা-কে বলতেই কি কি করতে হবে সেগুলো ভালভাবে দেখিয়ে দিলেন। প্রথম পিরিয়ডের সময়টা আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর ছিল। সারাক্ষণ মনে হতো কাপড়ে দাগ লেগে যাবে, ভয়ে আমি ঘুমাতে পারতাম না। অস্বস্তি, তলপেটে ব্যথা আর রক্তক্ষরণ সবকিছু মিলিয়ে আমার তখন মনে হয়েছিল মেয়েদের এত কষ্ট কেন পেতে হয় বড় হওয়ার জন্য! পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে প্রথম দুইদিন তলপেটে ব্যথা এবং শারীরিক কিছু অস্বস্তি থাকে। তাই এ সময়ে তেমন মুভমেন্ট করতে ইচ্ছা হয় না। মেজাজটাও একটু খিটখিটে থাকে। গা, হাত-পা ব্যথা করে আর বেশি কথা বলতে ইচ্ছা হয় না। এখনতো প্যানডেমিকের কারণে স্কুল বন্ধ, কিন্তু আগে পিরিয়ডের প্রথম দিন স্কুলে যেতাম না। কোন কারণে যেতে হলে খুবই রাগ লাগতো। চেষ্টা করি এই সময়ে নিজেকে তুলনামূলক বেশি পরিচ্ছন্ন রাখতে। প্রতিদিন গোসল করি এবং খেয়াল রাখি কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে কি না। প্রতিদিন দুধ, ডিম অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাই এবং দু’একদিন পর থেকে হাল্কা ব্যায়াম করি। মন ভাল রাখার জন্য এ সময় মুভি দেখি, গান শুনি, গল্পের বই পড়ি, গাছের যত্ন করি। যদিও এখন অভস্ত্য হয়ে গেছি, তারপরও মনে হয়, এতো তাড়াতাড়ি আবার ডেট চলে আসলো কেন! পিরিয়ড শুরুর একদিন আগে আমার অল্প পেটে ব্যথা হয়। যার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকি তাই কষ্ট কম হয়। এই সময়ে আমি দূরের জার্নি করি না আর আগেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখি। আমার কাছে মনে হয়, পিরিয়ড শুরু হবার আগেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা যেতে পারে তাহলে কোন বিপদে পরতে হয় না আর পিরিয়ডের ডেট এবং টাইম ডাইরি মেইনটেইন করা ভাল। যেকোন সমস্যা হলে অবশ্যই মা-বাবা বা বড়দের জানাতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। নিজের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। বয়:সন্ধিকালীন পরিবর্তন নিয়ে বই পড়া যেতে পারে, তাতে করে পিরিয়ড নিয়ে ভয় কেটে যাবে।”

পরিশেষে, পিরিয়ড নিয়ে যত ভয় কিম্বা স্টিগমাই থাকুক না কেনো হরমোন নি:সরণের জন্য এই সময় মেয়েরা বেশি লাবণ্যময়ী হয়ে উঠে। নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্রেগ রবার্টস এবং সহকর্মীরা ঋতুস্রাবের সময় মহিলাদের ফার্টিলিটি লেভেল বোঝার জন্য মুখের আকর্ষণ কীভাবে পরিবর্তিত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন। সুতরাং প্রতিটি মেয়েরই এ সময়টা উপভোগ্য করে তোলার প্রস্তুতি রাখা উচিৎ।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleনিউরোসাইকিয়াট্রিক রোগীদের জন্য করোনা ভাইরাসের টিকা বিষয়ক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
Next articleআপনার সন্তানকে ভাল কাজে উৎসাহিত করুন
Psychologist, Bangladesh Early Adversity Neuro imaging Study, icddr, b. Mental Health First Aider, Psycho-Social counselor. BSC & MS in Psychology, University of Dhaka; Masters in Public Health, State university of Bangladesh.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here