আমার স্যার, আমাদের স্যার

0
60
আমার স্যার, আমাদের স্যার
আমার স্যার, আমাদের স্যার

কেনো জানি স্যার আমাকে (ডিএমসি-কে-৫২) আর ডা. জলধি রায়কে (ডিএমসি,কে-৫৩) ‘কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। আড়ালে নাকি স্যার আমাদের দুজন’কে জিনিয়াস-১, জিনিয়াস -২ ডাকতেন। জলধি আমাদের ঢাকা মেডিকেলের এক বছরের জুনিয়র। জলধি যখন কোর্সে চান্স পায় তখন আমাকে ফোনে আমতা আমতা করে বলছিলো, “সাঈদ ভাই কেমন হবে সিলেট”। আমি কেবল একটি কথাই বললাম, “চিন্তা করোনা এখানে অধ্যাপক গোপাল স্যার আছেন”।
স্যার আমাকে মনে হয় একটু বেশিই ভালোবাসতেন। সেই ২০০৮ সালের পোস্ট গ্রাজুয়েশন ক্লাসের প্রথম দিন থেকে। পিকনিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এগুলোতে একটু আমি কম আগ্রহী থাকতাম। কিন্তু স্যার পোগ্রামের আগেই বলতেন, “চলে আসবা”। যেতাম এবং কর্কশ গলায় গান ও গাওয়ার চেষ্টা করতাম।
স্যার আমাদের হাতে ধরে শিখিয়েছেন সাইকিয়াট্রির খুটিনাটি কিছু বিষয়। স্যার শিখাতেন গল্পে গল্পে। এসেই একটা সিনারিও। এন্টার টু দি মাইন্ড ওব দা পেশেন্ট। তারপর কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের দুএকটি কবিতা আবৃত্তি হতো। কবি গুরুর কিছু কবিতা আমার ছিলো মুখস্থ। স্যার ঘুরে ফেরে দেখতাম সেগুলোই আবৃত্তি করতেন৷ আমিও গুনগুন দু একলাইন ধরতাম।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশনের সায়েন্টফিক সেমিনারে স্পিকার প্রেজেন্টার হিসেবে যেদিন সিলেক্টেড হলাম, স্যারকেই প্রথমে ফোন দিলাম। স্যার বললেন, ‘সাবাস, রাঙিয়ে আসবে’। পোলান্ডে গেলাম ইউরোপিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন এর সেমিনারে। প্রায় ১৪ হাজার সাইকিয়াট্রিস্টের উপস্থিতিতে সরগরম সেমিনার। শত শত প্রেসেন্টেশন। সেখানেও আমি স্পিকার প্রেজেন্টার। স্যারের কাছ থেকে ব্রিফ নিলাম, কিভাবে উপস্থাপন করবো। স্যার ব্রিফ করে বললেন, “যাও আমার আশীর্বাদ আছে সবসময়”।
স্যারের উৎসাহে কানাডা, জাপান, স্পেন আরো কত শত দেশের সায়েন্টফিক সেমিনারে অংশ নেবার আমন্ত্রণ জমে আছে ই-মেইল ইনবক্সে। হয়তো যাবো কোভিড-১৯ এর পর।
আগামী ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন এর সায়েন্টফিক সেমিনার। নিউজিল্যান্ড বিশ্বের একমাত্র কোভিড-১৯ মুক্ত দেশ। মুলত নিউজিল্যান্ড দেখার জন্যে সেখানের সেমিনারে অংশগ্রহনের নাম দেয়া। এবস্ট্রাকট জমা দিয়েছি মাস দুয়েক আগে। স্পিকার প্রেসেন্টার হিসেবে যাবো। গত সপ্তাহে মেইল এসছে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন থেকে৷ ৬/৭ দিন আগে হঠাৎ শুনলাম আমার স্যার কোভিড-১৯ স্যার আক্রান্ত। চীকন একটা ভয় সেদিন থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রোববার স্যারের ‘ম্যাডামের’ সাথে দেখা করলাম ওসমানীতে। তিনি কোভিড স্যাম্পল দিতে আসছেন। ম্যাডাম আমাকে খুব চিনেন। আমার মুখে মাস্ক ছিলো, তাও দূর থেকে ম্যাডাম আমাকে দেখে চিনলেন। প্রায়ই স্যারের বাসায় যাই, এজন্যে হয়তো। তাঁর কাছে গেলাম। কথাবার্তা বললাম।
আমার অধ্যাপক ডা. গোপাল শংকর দে স্যার আই সি ইউ তে চিকিৎসাধীন। আমি অপেক্ষায় আছি স্যারের আশীর্বাদ নিতে। আমার প্রানপ্রিয় স্যার সুস্থ হয়ে আসবেনই আর আমি কদমবুচি করে আমার নিউজিল্যান্ডের সেমিনারে যাবার কথা স্যার’কে পাড়বো। স্যার সেটা শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলবেন, ‘গুড মাই বয়, আমার আশির্বাদ আছে সবসময়’। কিছু দুসংবাদ হৃদয় নিতে পারবেনা বলে মস্তিষ্ক শুনতে পায় না। রাব্বুল আলামীন এর কাছে আমার স্যারের আত্মার প্রশান্তি কামনা করি। আমীন।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা বা অন্য যেকোন ধরনের দায়  সর্ম্পূণই লেখকের
 

Previous articleহঠাৎ বিরুপ পরিস্থিতি: আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন যথাযথ কৌশল
Next articleকোটি’তে পৌঁছালো বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি বিভাগ, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ। মেম্বার, রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিস্ট ইংল্যান্ড । মেম্বার, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here