সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ নারী কামশক্তির অভাবে অর্গাজমের (প্রচণ্ড কামোত্তেজনা) সুখ থেকে বঞ্চিত হয়ে যৌন অক্ষমতায় ভোগে। এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক টিম ব্রুনস ও নিকোলাস ল্যাংঘাল নামে দুই গবেষক নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন।
নিউরো-মডুলেশন হলো কৃত্রিম উপায়ে স্নায়ুর মধ্যকার বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক ইলেকট্রোড বা উদ্দীপক সমূহকে প্রভাবিত করা। এর মাধ্যমে স্নায়বিক টিস্যুর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ঠিক সেভাবে কৃত্রিম উপায়ে স্নায়ুর ইলেকট্রোড সমূহকে উত্তেজিত করে নারীদেহে কামোদ্দীপনা বহুগুণে বাড়ানো সম্ভব। যৌন আবেদনে সাড়া দিতে অক্ষম নারীরা এ চিকিৎসা পুনরায় কামোদ্দীপক হতে পারবেন।
সচরাচর নারীর যৌন অক্ষমতা (এফএসডি) নিরূপণ করা বেশ ঝামেলার কাজ। চিকিৎসা পদ্ধতিও বেশ কঠিন। সাধারণত এ ধরণের সমস্যায় ভায়াগ্রা জাতীয় ওষুধ খেতে বলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তা যেমন সবসময় কার্যকরী নয়, তেমনি উপরি পাওনা হিসেবে নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তো আছেই।
গবেষণায় জানা যায়, কামোত্তেজনায় অক্ষম যোনীর জন্য নিউরো-মডুলেশন (স্নায়ুর বিন্যাস বা রূপান্তর) চিকিৎসা পদ্ধতি প্রায়শই যৌনক্রিয়া উন্নত করতে সক্ষম। সাধারণত স্নায়ুতে অবস্থিত ইলেকট্রোডসমূহ প্রভাবিত হয়ে যৌন আবেদন বা চাহিদার সৃষ্টি করে। নতুন এ চিকিৎসার মাধ্যমে ইলেকট্রোডকে প্রভাবিত করা হয়।
গবেষক ব্রুনস বলেন, এই বিশেষ চিকিত্সায় যোনীর পেশীসমূহে স্নায়বিক সংকেত পাঠিয়ে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সপ্তাহে একবার স্নায়ু উদ্দীপনা থেরাপি দেয়া হয়। এর মাধ্যমে স্পাইনাল কর্ড (মেরুদণ্ডের রজ্জু) ও এর শাখাসমূহ থেকে শুরু হওয়া নিতম্বের মধ্যকার অবস্থিত অস্থিকাঠামোর (পেলভিস) স্নায়ুসমূহকে উদ্দীপ্ত করা হয়।
ব্রুনস আরো বলেন, মজার ব্যাপার হলো- গোড়ালির টিবিয়াল নার্ভের ইলেকট্রোডকে প্রভাবিত করেও এ পদ্ধতি অনুদ্দীপক যোনীতে উদ্দীপনার সৃষ্টি করতে সক্ষম। মেরুদণ্ড থেকে পায়ের দিকে নেমে যাওয়া স্নায়ুগুলোর সাথে নিতম্ব ও যোনীর বেশ কিছু স্নায়ু জড়িয়ে থাকে। আর ওই স্নায়ুসমূহের মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন ব্রুনস ও তার সহকর্মী। যেসব নারীদের যোনীতে সমস্যা নেই তাদের নিয়েও পরীক্ষা চালান এই গবেষকদ্বয়।
মিশিগানে মেডিসিন নিয়ে কাজ করা অস্থিবিজ্ঞানী-স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মাইকেল বার্গার এবং ইউরোলজি সার্জন প্রিয়াঙ্কা গুপ্ত এ গবেষণার জন্য যোনীতে সমস্যা আছে এবং নেই এমন নয়জন নারীকে নিয়োগ দেন। প্রত্যেকে বৈদ্যুতিক উপায়ে স্নায়ু উদ্দীপনার ১২টি আধঘণ্টার অধিবেশনে অংশ নেন। অংশ নেয়া নারীদের যৌনাঙ্গ কিংবা গোড়ালির পাশ্ববর্তী ইলেকট্রোডসমূহে কৃত্রিমভাবে উদ্দীপনার সৃষ্টি করা হয়।
আশার কথা হলো, এ পরীক্ষায় ৯ জনের মধ্যে ৮ জন নারীই ইতিবাচক ফল পান। তাদের মধ্যে কারো কামভাবের উদ্রেক হয়েছে, কারো বা যোনী কামরসে ভিজে গেছে এবং কারো কারো প্রচণ্ড কামোত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যসূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস।
অনুবাদটি করেছেন তৌহিদ সোহান।
মাথার ভেতর থেকে আওয়াজ আসে; আমি ভয় পাই
প্রশ্ন-উত্তরঅক্টোবর ২৪, ২০১৮ মনের খবর ডেস্ক
প্রশ্ন : আসসালামুআলাইকুম। আমি মোঃ নজরুল ইসলাম, বয়স ৩১। আমার গত তিন বছর ধরে আধো ঘুমের মধ্যে কিছুটা ঘুমন্ত আবার কিছুটা জাগ্রত অবস্থায় মাথার ভিতর এক ধরণের ভুম ভুম আওয়াজ আসে যা কিনা আমাকে ভীষণ ভয় পাইয়ে দেয়। মনে হয় মাথার ভিতর থেকে কিছু ছিড়ে যাচ্ছে। ভয়ে ঘুম হয় না। মাসে অন্তত ১৫-২০ বার এ সমস্যা হয়, কিছুতেই এ থেকে মুক্তি পাচ্ছি না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কোন উপকার পাচ্ছি না। সব ডাক্তার ঘুমের ওষুধ দেয়। ঘুমের ওষুধ খেলে ভাল থাকি। আমার বাম কানে আঘাত লাগে, কানে সব সময় শব্দ হয়। নাক, কান, গলা ডাক্তার দেখিয়েছি, তিনি সাইকিয়াট্রিস্ট এর নিকট পাঠিয়েছেন। সাইকিয়াট্রিস্ট ইপিট্রা ০.৫ মিলিগ্রাম ২ সপ্তাহ, পিনর ২৫ মিলিগ্রাম ৩ মাস দিয়েছিলেন। ৩ মাস ভাল ছিলাম। কিন্তু ওষুধ বাদ দিয়ে সমস্যা আরও বেড়ে গেছে। আমাকে বলতে পারবেন, আমি কোন ডাক্তার দেখাবো, দেশে বা বিদেশে? যদি কারো এ সমস্যা সম্পর্কে জানা থাকে তবে দয়া করে আমাকে জানাবেন, আমি তার সাথে যোগাযোগ করব।
উত্তর : আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার সমস্যা থেকে দেখা যাচ্ছে, আধো ঘুমন্ত অবস্থায় আপনার মাথার ভিতর থেকে ভুম ভুম আওয়াজ আসে ফলে ভয়ে আর ঘুম হয় না যা মাসে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বার হয়। বাম কানে আঘাত লাগে ও কানে সব সময় শব্দ হয়। আপনি এ সমস্যার জন্য খুব কষ্ট পাচ্ছেন এবং এ থেকে মুক্তি পেতে চাইছেন। এই লক্ষণগুলো থেকে একটি রোগকে নির্দিষ্ট করতে আরও কিছু তথ্য নেয়া প্রয়োজন। যেমনঃ
১। কতদিন ধরে এ সমস্যা হচ্ছে? আগেও এ সমস্যা হয়েছিল কিনা?
১। আমার তিন বছর ধরে এ সমস্যা হচ্ছে।এর আগে কখনো এ সমস্যা কখনো হয়নি। আমার বাবার শ্বাসকষ্ট ছিল তিনি এ রোগে মারা যান। যে দিন মারা যান সে রাতে বাবার পাশে সারা রাত জেগে বাবা কিভাবে কষ্ট পাচ্ছে দেখেছি, আমার ও শ্বাসকষ্ট আছে,তাই বাবার মৃত্যুর দিন থেকে আমি ধুমপান করা ছেড়ে দিয়েছি। বাবার মৃত্যু আর ধুমপান ছেড়ে দেয়া এর পর থেকেই আমার এ আজব সমস্যা।
২। এ সমস্যা কি শুধু রাতে ঘুমের মধ্যেই হয় নাকি দিনের বেলাতেও হয়?
২। শুধু ঘুমের মধ্যেই হয়। রাতে ও হয় দিনে ও হয়। চোখের পাতা মেলতে পারলে আর হয় না। অনেক সময় চোখ মেলার চেষ্টা করি কিন্তু পারি না তখন সমস্যা ভিষন ভয়ানক হয় মনে হয় আমি মারা যাচ্ছি।
৩। ঘুমের সময় আর অন্য কোন ধরণের সমস্যা হয় কিনা?
৩। না । শুধুই ঘুম আসতে চায় না।
৪। আপনি কি কোন বিষয় নিয়ে অনেক বেশী দুশ্চিন্তা করেন?
৪। খুব সামান্য বিষয় ও দুশ্চিন্তা হয়।
৫। বুক ধড়ফড় বা অস্থির লাগে কি?
৫। হ্যাঁ,বুক ধড়ফড় করে খুব জোরে জোরে, অস্থির লাগে।
৬। আপনার কি শুধু বাম কানেই আঘাত লাগে নাকি দুই কানেই?
৬। বাম কানে খোঁচা লেগে অনেক রক্ত বের হয় তার পর থেকেই দু তিন রকম আওয়াজ আসে, সব সময় যেন একটা মটর চলছে ও কম শুনি, ডান কানে আগে থেকে ঝি ঝি পোকার শব্দ ও কম শুনি।
৭। কানে শুনতে কি কোন অসুবিধা হয়?
৭। হ্যাঁ, দুই কানে কম শুনি ।
৮। আপনি কি কোন নেশা করেন বা ঘুমের কোন ওষুধ অনেক দিন ধরে খাচ্ছেন কি?
৮। না, আমি কোন নেশা করি না, তিন বছর হল ধুমপান ছেড়ে দিয়েছি, ধুমপান ছাড়া আর কোন নেশা কখনো ছিল না। ঘুমের কোন ওষুধ খাই না,
আপনার মধ্যে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোজা জরুরী। আপনি যতটুকু বলেছেন তাতে করে বলা যায় আপনার হিপনোগোগিক হেলুসিনেশন (Hypnagogic hallucinations) বা স্লিপ হেলুসিনেশন (Sleep hallucinations) হচ্ছে যা ঘুমের শুরুতেই ঘটে এবং রোগীর কাছে এটি খুব বাস্তব মনে হলেও এটা আসলে বাস্তব নয়। শুধু অস্বাভাবিক শব্দই নয়, অস্বাভাবিক ছবি বা মুখে অস্বাভাবিক স্বাদ লাগার অনুভুতিও হতে পারে যা আনেক মানসিক বা শারীরিক রোগে দেখা দিতে পারে যেমন, নারকোলেপ্সি (Narcolepsy), নাইট মেয়ার (Nightmare) এর মত ঘুমের সমস্যা জনিত রোগে। তাছাড়া সিজফ্রেনিয়া (Schizophrenia), এনক্সাইটি ডিজঅর্ডারসে (Anxiety Disorders) এ সমস্যা হতে পারে। তবে কানের ও মস্তিস্কের বিভিন্ন সমস্যায়ও এ ধরণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন, লেবিরিন্থাইটিস(Labirinthitis), মেনিয়ারস ডিজিস(Meniere’s disease), একুইস্টিক নিউরোমা(Acoustic neuroma), সেরিব্রাল ভেনাস থ্রম্বসিস(Cerebral venous thrombosis),পারকিন্সন্স ডিজিজ(Perkinson’s disease), এপিলেপ্সি(Epilepsy) ইত্যাদি। আপনি যে সমস্যাগুলো বলেছেন তা এসব রোগের সাথেও থাকতে পারে তবে প্রতিটা রোগের অন্যান্য আরও কিছু লক্ষণ থাকে। তাই অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য নেয়া ও প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা ছাড়া আপনার রোগটি নির্দিষ্ট করা যাবে না।
আপনি যেহেতু নাক-কান-গলার চিকিৎসক দেখিয়েছেন এবং উনি আপনাকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পাঠিয়েছেন ও সাইকিয়াট্রিস্ট আপনাকে এনক্সিওলাইটিক(Anxieolytics) ও সিডেটিভ(Sedatives) দিয়েছিলেন যা আপনি ৩ মাস খেয়ে ভাল ছিলেন কিন্তু ওষুধ ছাড়ার পর আপনার সমস্যা আবার দেখা যায়, সেহেতু আপনার উচিত হবে আবার কোন মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মনে করলে প্রয়োজনে কোন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্ট দেখানোরও দরকার হতে পারে। দুশ্চিন্তাজনিত সমস্যা বা ঘুমের সমস্যাজনিত কোন রোগে এমনটা হচ্ছে বলেই মনে হলেও কিছু কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে যেমন, পলিসোমনোগ্রাম, মস্তিস্কের এম,আর আই ইত্যাদি। সেই ক্ষেত্রে আপনি এমন কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারেন যেখানে আপনি একই সাথে মানসিক, নাক-কান-গলা ও নিউরোলজী বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে পারেন।
আপনার সমস্যা নির্দিষ্ট করা গেলে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা নিলে আপনার সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি। ঘুমের ওষুধ যেমন দীর্ঘদিন খাওয়া ঠিক নয় তেমনি কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাময়িক ভাবে তার প্রয়োজন হতে পারে। Pinor নামে যে ওষুধটা আপনি খেয়েছিলেন সেটা হয়ত আবারও এবং দীর্ঘদিন খেতে হতে পারে তবে তা একজন বিশেষজ্ঞই ঠিক করবেন। সেই সাথে প্রয়োজন নিজের জীবন যাপনে কোন অনিয়ম থাকলে তা ঠিক করা যেমন, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো, নেশাদ্রব্য গ্রহণ না করা ইত্যাদি।
পরার্মশ দিয়েছিলেন : সজিব হাসনাত, স্যার।
আপনার প্রশ্নের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নের উত্তর খুব শীগ্রই মনের খবরের প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে পাবলিশ করা হবে। পরবর্তীতে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে পুরো প্রশ্ন কমেন্টসে না দিয়ে সমস্যা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাঠিয়ে দিন এই ইমেইলে – question@www.monerkhabor.com ধন্যবাদ।