স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর সহজ ১০টি উপায়

0
71

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মানসিক সুস্বাস্থ্যের অন্তরায়। একজন মানুষের পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য শরীর-মন দুটোরই সুস্থতা প্রয়োজন। কিন্তু, শারীরিক সুস্থতাকে আমরা যতটা গুরুত্ব দেই, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক ততটাই অবহেলা করি। বস্তুত আমরা মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অনেকেই জানি না। রাখিনা কোনো খোঁজ খবর।

কেউ সামান্য জানলেও সুস্থ থাকতে মানসিক স্বাস্থ্য কতোটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আমরা মনে রাখি না। মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্বে সচেতনতা বাড়াতে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়।

করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবে বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বেড়েছে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। করোনায় আক্রান্তরাই শুধু নন, ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হননি এমন মানুষের মাঝেও বাড়ছে মানসিক নানা সমস্যা। তাই স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মার্কিন স্বাস্থ্য বিষয়ক গণমাধ্যম হেলথ লাইন-এ মানসিক চাপ কমানোর ১০টি উপায় বর্ণনা করা হয়েছে। মনের খবর পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা ‍তুলে ধরা হলো।

বন্ধুর সাথে কথা বলুন
আপনি যখন চাপ অনুভব করবেন, তখন একজন বন্ধুকে কল করুন। যার সাথে আপনি মন খুলে কথা বলতে পারবেন। আপনার সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ করুন। সুসম্পর্ক রাখুন।

খুব প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলুন। আপনি যখন অনেক চাপের মধ্যে থাকবেন তখন একটি আশ্বস্ত কণ্ঠস্বর আপনাকে চাপ থেকে মুক্তি দিবে। এমনকি এক মিনিটের জন্যও হলেও। বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনের সাথে সুসম্পর্ক যে কোনো সুস্থ জীবনধারার জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কথা বলুন নিজের সাথে
কখনো যদি কোনো বন্ধু বা প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলতে না পারেন তখন নিজের সাথেই কথা বলুন। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কেন আপনি বিষণ্ন হচ্ছেন? বিষণ্নতা থেকে মুক্তি কিসে? কোথোয় গেলে বা কী করলে আপনি ভালো থাকতে পারবেন?

এভাবে নিজের সাথে শান্তভাবে কথা বলা আপনার জন্য সেরা অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে। এর জন্য কখনো নিজেকে পাগল ভাববেন না। কেউ যেন বলতে না পারে সেই সুযোগও দিবেন না।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস
স্ট্রেস লেভেল এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। যখন আমরা অভিভূত হই, তখন আমরা প্রায়ই ভাল খেতে ভুলে যাই এবং অধিক উৎসাহে চিনিযুক্ত, চর্বিযুক্ত স্ন্যাক খাবার গ্রহণ করে থাকি।

চেষ্টা করুন চিনিযুক্ত স্ন্যাকস খাবার এডড়িয়ে চলার। আগে থেকে পরিকল্পনা করুন। ফল এবং শাকসবজি সবসময়ই ভালো, এবং উচ্চ মাত্রার ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ স্ট্রেসের উপসর্গ কমা সাহায্য করে।

হাসুন
মন খুলে হাসুন। প্রয়োজনে একা একাই হাসুন। হাসি এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে যা মেজাজ উন্নত করে এবং চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কর্টিসল এবং অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা হ্রাস করে। হাসির কৌশল আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে সুস্থ্য করে আপনাকে সুখী করতে সাহায্য করে। এর জন্য কৌতুক পড়তে পারেন। কমেডি ভিডিও দেখতে পারেন।

চা পান করুন
ক্যাফিনের একটি বড় ডোজ রক্তচাপের ওপর স্বল্পমেয়াদী আঘাত করে। এটি আপনার হাইপোথ্যালামিক-পিটুইটারি-অ্যাড্রিনাল অক্ষকে ওভারড্রাইভে যেতে পারে।

তবে কফির বা নরমাল চা এর পরিবর্তে গ্রিন টি ব্যবহার করুন। এটিতে কফির অর্ধেকেরও কম ক্যাফিন রয়েছে এবং এতে স্বাস্থ্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, সেইসাথে থেনাইন, একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা স্নায়ুতন্ত্রের উপর শান্ত প্রভাব ফেলে।

মনোযোগী হোন
মনোযোগ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরী। ‘মাইনফুলনেস’ বা ‘মনশীলতা’ ধারণাটি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ধ্যান এবং সোমাটিক পদ্ধতির একটি বড় অংশ এবং সম্প্রতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অর্থাৎ ধ্যান করুন। যোগব্যায়াম এবং ধ্যান শারীরিক এবং মানসিক ব্যায়ামকে অন্তর্ভুক্ত করে যা স্ট্রেসকে সমস্যা হতে বাধা দেয়। প্রয়োজনে মেডিটেশনের কোনো গ্রুপে জয়েন করুন।

ব্যায়াম করুন এক মিনিটের জন্য হলেও
ব্যায়াম মানেই জিমে পাওয়ার লিফটিং বা ম্যারাথনের প্রশিক্ষণ নয়। অফিসের চারপাশে অল্প হাঁটা বা কাজের বিরতির সময় প্রসারিত করার জন্য দাঁড়ানো একটি চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে তাত্ক্ষণিক স্বস্তি দিতে পারে।

আপনার রক্ত সঞ্চালন করা এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে এবং তাত্ক্ষণিকভাবে আপনার মেজাজ উন্নত করতে পারে। সুতরাং কাজের সময় মাঝে মাঝে বিরতি নিন। বা শুধু বসে বা শুয়ে থাকবেন না। কিছু সময় পর পর উঠে দাঁড়ান, একটু হাঁটুন। যদি পারেন ভোরেবেলা কিছুটা দ্রুত হাঁটার চেষ্টা করুন।

পর্যাপ্ত পরিমাণে সঠিক সময়ে ঘুমান
ঘুমের অভাব মানসিক চাপের একটি মূল কারণ। আবার অন্য কারণে স্ট্রেসও হলেও সেটাও আপনার ঘুম নষ্ট করতে পারে। এই দুষ্টচক্র মস্তিষ্ক এবং শরীরকে ক্ষত থেকে বের করে দেয় এবং সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ করে হয়।

এজন্য  নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমান। একজন বয়স্ক মানুষের দিনে কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। আপনি আপনার ঘুম নিশ্চিত করুন। রাতে শোয়ার আগেই টিভি বন্ধ করুন। আলো বন্ধ করুন এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেকে আরাম করার জন্য সময় দিন। মোবাইল সহ সমস্ত ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস দূরে রাখুন।

শ্বাসের ব্যায়ম করুন
একটি গভীর শ্বাস নিন। আস্তে আস্তে নিশ্বাস ছাড়ুন। চাপের ক্ষেত্রে এটি খুবই সহায়ক। তিন থেকে পাঁচ মিনিটের সহজ ব্যায়ামের জন্য প্রথমে আপনার পা মেঝেতে সমতল রেখে এবং আপনার হাঁটুর উপরে হাত রেখে চেয়ারে বসুন। ধীরে ধীরে এবং গভীরভাবে শ্বাস নিন এবং শ্বাস নিন, আপনার ফুসফুসে মনোযোগ দিন কারণ সেগুলি আপনার বুকে সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত হয়।

মনে রাখবেন অগভীর শ্বাস-প্রশ্বাস মানসিক চাপ সৃষ্টি করে অন্যদিকে গভীর শ্বাস আপনার রক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে, আপনার শরীরকে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে এবং আপনার মনকে পরিষ্কার করে।

সংগীত শুনুন
সংগীত শুনুন। শীতল সাউন্ডের সংগীত শুনুন। আরামদায়ক ক্লাসিক সঙ্গীত শোনার চেষ্টা করুন। শান্ত সঙ্গীত মস্তিষ্ক এবং শরীরের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং স্ট্রেসের সাথে যুক্ত হরমোন কর্টিসল কমিয়ে আনে। তবে সংগীত যদি সত্যিই আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে সমুদ্র বা প্রকৃতির শব্দ শোনার চেষ্টা করুন। এতেও শিথিল প্রভাব রয়েছে।

স্ট্রেস জীবনের একটি অনিবার্য অংশ, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে আপনি এটিকে উপেক্ষা করবেন। অত্যধিক চিকিত্সা না করা মানসিক চাপ সম্ভাব্য গুরুতর শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

 

ভাল খবর হল যে অনেক ক্ষেত্রে, চাপ নিয়ন্ত্রণযোগ্য। কিছু ধৈর্য এবং কিছু দরকারী কৌশল দিয়ে, আপনি আপনার মানসিক চাপ কমাতে পারেন। দেখার বিষয় হলো সেটা আপনি সেটা কতোটা পারছেন।

 

এটাও পড়ুন…
মানসিক স্বাস্থ্য কী?
মানসিক স্বাস্থ্য : আমরা কতোটা সচেতন?

পরিবারে কম সন্তান শিশুর মানসিক সমস্যা তৈরী করে : গবেষণা

হেলথ লাইন থেকে অনুবাদ শাহনূর শাহীন

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

/এসএস

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য : আমরা কতোটা সচেতন?
Next articleদ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি : মানসিক অস্বস্তিতে ভুগছেন নাগরিকরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here