পারিবারিক সহিংসতা যেভাবে প্রতিরোধ করা যায়

ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

পারিবারিক সহিংসতা- গৃহ নির্যাতন বা পরিবারে সংঘটিত সহিংসতা নামেও পরিচিত। পারিবারিক সহিংসতা বলতে বিবাহ বা একসাথে বসবাসের মতো পারিবারিক পরিবেশে সংঘটিত সহিংসতা বা অন্যান্য নির্যাতনকে বোঝানো হয়। পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন প্রথম এর কারণসমূহ নির্ণয় করা।

পারিবারিক সহিংসতার কারণগুলি হলো শারীরিক বা মৌখিক নির্যাতনের গ্রহণযোগ্যতা, মাদকের অপব্যবহার, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, সুশিক্ষার অভাব, অসম প্রতিযোগিতা, অলসতা, অহংকার, শক্তি প্রদর্শনের মানসিকতা, দায়িত্বহীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাব, যৌতুকপ্রথা, রাষ্ট্রীয় আইনের দুর্বলতা ও প্রয়োগের অভাব বা অপপ্রয়োগ, নৈতিক জীবনাচারকে গুরুত্ব না দেয়া ইত্যাদি।

নারীর প্রতি সহিংসতার কারণগুলো হলো আর্থিক সমস্যা, মানসিকতার পরিবর্তন, যুদ্ধের প্রভাব, নৈতিকতার অভাব, সামাজিক মূল্যবোধের অভাব, অদক্ষ গৃহকর্মী, শিশুগৃহকর্মী, নারীসমাজকে অবজ্ঞার চোখে দেখা, স্বামীর আর্থিক বা সামাজিক দুর্বলতার কারণে তাকে অবজ্ঞা করা ইত্যাদি।

পারিবারিক সহিংসতা নিরসনের প্রক্রিয়াটি চিকিৎসা, আইন প্রয়োগ, পরামর্শ প্রদান, এবং অন্যান্য প্রতিরোধ ও হস্তক্ষেপের মাধ্যমে হতে পারে। যে কৌশলটি ব্যবহার করা হচ্ছে তার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনের যথাযত প্রয়োগ নিশ্চিত করা, যৌতুক আদান-প্রদান বাতিল করা, বেকারত্ব দূরীকরণের জন্য প্রদক্ষেপ নেয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধের জন্য পুরুষতন্ত্র এবং নারীত্বের মধ্যে নির্মিত ভেদরেখাকে বাতিল করা। ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সামাজিক স্তরে পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্মানজনক, অহিংস সম্পর্কের প্রসার ঘটানো, সচেতনতামলক কর্মসূচি গ্রহণ করা।

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ১৬ বিশ্বব্যাপী প্রচার এবং কার্যকর করা যেখানে বলা হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার প্রচলন, সকলের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করা এবং সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহিতাপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ’।

পারিবারিক সহিংসতায় অংশগ্রহণকারীদের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে, কাউন্সেলিং পারিবারিক সহিংসতা নিরসনের অন্যতম একটি উপায়। মাদকমুক্ত সমাজ গঠন ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধের অন্যতম একটি উপায়।

লেখক : ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ
এমবিবিএস; এমডি (সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, নর্থ ইস্ট মেডিক্যাল কলেজ, সিলেট।

পড়ুন….
পারিবারিক সহিংসতা : কিশোরদের ওপর পড়ে সূদুরপ্রসারী প্রভাব
সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হন বিবাহিত পুরুষরাও
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগ
সহিংসতা দেখে বড় হলে মাদকাসক্ত হয় শিশুরা

আরো পড়ুন
যৌন স্বাস্থ্য বা দাম্পত্য সম্পর্কে অতি চঞ্চলতার প্রভাব
কিশোরী দেহে অবাঞ্চিত লোম ও অনিয়মিত মাসিক : কারণ ও প্রতিকার

পারিবারিক সহিংসতা কী? পারিবারিক সহিংসতার কারণ, বয়স্কদের ওপর পারিবারিক সহিংসতার প্রভাব, শিশু কিশোরদের ওপর বিরুপ প্রভাব, সহিংসতার শিকার হন বিবাহিত পরুষরাও, যৌনতায় পারিবারিক সহিংসতার প্রভাব। এরকম নানা বিষয়ে পারিবারিক সংহিসতার অদ্যোপান্ত নিয়ে সাজানো মাসিক মনের খবর জুন ২২’ সংখ্যা সংগ্রহ করুন। প্রয়োজনে কল করুন : : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে।

/এসএস/মনেরখবর

Previous articleপ্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতা ও প্রতিকার শীর্ষক ওয়েবিনার
Next articleশিশুমনে মৃত্যু-শোক : কাটিয়ে উঠবে যেভাবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here