আমার স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, সবকিছু ভুলে যাই

0
169

চিঠি : আমি নিলয়, ঢাকা থেকে। আমার বয়স ১৯ বছর। আমার কিছু সমস্যা আছে। আমি ৬ বছর ধরে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের মতো কিছু স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছি। আমি পাঁচবার ডাক্তারদের (সাইকিয়াট্রিস্ট) অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছি। তারা আমাকে কিছু ওষুধ যেমন বিষণ্ণতাবিরোধী (এসএসআরআই-এর মতো) ওষুধ দিয়েছেন। এগুলো নিয়েছি, কিন্তু ভালো হইনি।

আমার স্মৃতিশক্তি মারাত্মকভাবে খারাপ হয়েছে। অত্যন্ত দুর্বল ও বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মুখস্থ করার ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক সময় নিয়ে ভালো করে পড়ার পরেও নানা উপকরণ- পাঠ্য, মুখস্থ অংশ, গণিত অংশ ইত্যাদি ভুলে যাই। পরে হাজারবার চেষ্টা করার পরেও আমি এই সব মনে করতে পারি না। মনে মনে এই সব বস্তুগত দৃশ্য কল্পনা করতে পারি না। খুব অল্প সময়ে সব ভুলে যাই। কোথাও মনোযোগ দিতে অনেক বাধা পাই। বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারি না।

আসলে পড়াশুনা-সহ যেকোনো কাজে মনোযোগ দেওয়া আমার পক্ষে খুবই কঠিন। কোনো কাজই পূর্ণ মনোযোগ ও একাগ্রতা নিয়ে করতে পারি না। খুব অল্প সময়ের মধ্যে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। কথা বলার সময় সঠিক এবং প্রয়োজনীয় শব্দগুলি মনে রাখতে পারি না। সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য, অভ্যাস, বিভিন্ন কাজের পদ্ধতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ইত্যাদি ভুলে যাই। মাঝে মাঝে প্রচন্ড মাথা ব্যথা হয়। বেশিরভাগ সময় মাথায় অনেক চাপ অনুভব করি। মাথা খুব গরম হয়ে যায় তখন। দয়া করে, আমাকে সাহায্য করুন এবং আমাকে পরামর্শ দিন, আমি কি করতে পারি?

পরামর্শ : চিকৎসার আগে আপনাকে কয়েকটা বিষয় বুঝতে হবে। যে কোনো কারণেই হোক আপনার অ্যাংজাইটি বা টেনশনজনিত সমস্যা হয়েছে। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো কারণ ছাড়া বা সরাসরি কোনো কারণের সাথে সম্পর্ক স্পষ্ট করা যায় না। একজন মানুষের যখন এই স্বভাব তৈরি হয়ে যায় তখন একটা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে।

আপনি বলছেন যে, আপনার স্মৃতিশক্তি সমস্যা। সমস্যাটা আপনি বুঝতে পারছেন কিন্তু আপনার ধারণা ভুল। মূল সমস্যা হলো আপনি কোনো কিছুতে ফোকাস করতে পারেন না মনোযোগ দিতে পারেন না। যেহেতু আপনি মনোযোগ দিতে পারেন না, মনোযোগ রাখার মতো অবস্থা তৈরি হয় না কারণ আপনার মধ্যে অ্যাংজাইটি কাজ করে স্ট্রেস কাজ করে। যার জন্য মনোযোগ দিতে না পারার কারণে সেই জিনিসটা প্রোপারলি আপনার ব্রেনের মধ্যে সংরক্ষণ হয় না। কারণ আপনি যেই জিনিসটা মাথায় সেট করাবেন, মুখস্তের জায়গায় নিয়ে যাবেন সেটাই তৈরি হয় না। আপনি বলছেন ভুলে যাই মূলত মনের রাখার জায়গাই আপনার তৈরি হচ্ছে না।

মনে রাখবেন, ভুলে যাওয়া হলো মনে রাখার পরবর্তী স্টেপ। কিন্তু আপনার প্রথম স্টেপেই সমস্যা। অর্থাৎ কোনো একটা জিনিস আপনার মাথার মধ্যে বসাতে পারছেন না বলে আপনি সেটা মনে করতে পারছেন না। বিষয়টা যদি আপনার মাথায় সেট হতো তাহলে আপনি সেটা মনে করতে পারতেন না।

অর্থাৎ আপনি ভুলে যাচ্ছেন না, বরং আপনি মনে রাখতে পারছেন না। আসল সমস্যা আপনার ফোকাসে। অ্যাংজাইটির কারেণে, স্ট্রেসের কারণে, যে প্রয়োজনীয় মনোযোগ দেয়ার দরকার আপনি সেটা দিতে পারছেন না যার জন্য কোনো একটা বিষয় আপনার মাথায় বা মনে সেট হচ্ছে না ফলে আপনি বিষয়টা মনে রাখতে পারছেন না। এই টোটাল বিষয়টা যদি কোনো কারণ ছাড়া অর্থাৎ যদি স্বাভাবিকভাবে কোনো কারণ খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে দুইটা বিষয়কে আমরা দায়ি করতে পারি। অ্যাংজাইটি প্রোন পারসোনালিটি বা ব্যক্তিত্বের সমস্যার সাথে সম্পর্কিত অথবা শরীরের কোনো বায়োলজিক্যাল কারণে হতে পারে, যেমন থাইরয়েড হরমোন।

সুতরাং প্রথমে জানতে হবে যে, এটার কারণ কী। রোগটা কী। জেনারেল অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, নাকি থাইরয়েডের সমস্যা নাকি অ্যাংজাইটি প্রোন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার। এটা চিহ্নিত করতে হবে। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী, ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যদি সেটা কন্টিনিউ করার মতো রোগ হয় তাহলে কিন্তু চিকিৎসটা চালিয়ে যেতে হবে। যেখানেই যান, যেই সাইকিয়াট্রিস্টসের কাছে যান বা চিকিৎসাটা কন্টিনিউ করতে হবে। একবার দু’বার ডাক্তারের কাছে গেলেন আর মনে করলেন রোগটা ভালো হয়ে যাবে তাহলে কিন্তু হবে না। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন। রোগটা সম্পর্কে জানবেন, চিকিৎসাটা চালিয়ে যাবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন,
অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব- সম্পাদক, মনের খবর
অধ্যাপক– মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেকশন মেম্বার– মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।
কোঅর্ডিনেটর– সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে :

মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা 01844618497 নাম্বারে।

প্রতিদিনের চিঠি : আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleবাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এর ৩০তম বার্ষিক সভা ডিসেম্বরে
Next articleমেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য অধ্যাপক ফারুকের মানসিক স্বাস্থ্যের বই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here