ডা. হোসনে আরা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
মৃত্যু! এ এক কঠিন সত্য। ‘জন্মিলে মরতে হবে’ এই লাইনটি যদিও আমাদের মনমগজে প্রতিনিয়ত ধারণ করতে হয় তারপরও এক একটি মৃত্যু আমাদের মনোজগৎকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে।
সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে কে বা চায়! মৃত্যু মানেই এক অপরিসীম শূন্যতা। তাই মৃত্যু নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া সবসময়ই ছিল এবং থাকবে। বড়োদের মতো শিশুরাও কারো মৃত্যুর পর নানান ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে।
কারো মৃত্যুর পর শিশুমনে সাধারণত নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলি উঁকি দিতে পারে। যেমন : মানুষ কেন মৃত্যু বরণ করে, মৃত্যু কি ঘুমের মতো, আমিও কি মারা যাবো? ইত্যাদি। মৃত্যু নিয়ে শিশুদের অনেক প্রশ্নের জবাব অনেক সময় দিতে হয় এবং এই কাজটি বয়স বুঝে করতে হয়।
- শিশুদের এই প্রতিক্রিয়া দেখানো অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে :
বয়স বা লিঙ্গভেদে এই প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে
মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক
আশেপাশের মানুষের প্রতিক্রিয়া
অতীতে কারো মৃত্যু
পারিবারিক সহযোগিতা ইত্যাদি
বড়োদের মতো শিশুদেরও শোক প্রকাশের ভিন্নতা দেখা যায়। বয়সভেদে প্রতিটি শিশু ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। যেসব শিশু স্কুলে যায় না তারা সাধারণত এই প্রতিক্রিয়াগুলো দেখাতে পারে। যেমন মৃত ব্যক্তিকে খোঁজা, অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা, আবার অতিরিক্ত শান্ত বা নির্বিকারও থাকতে পারে।
আবার স্কুল পড়ুয়া শিশুরা ভিন্ন আচরণ করতে পারে যেমন :
স্বপ্ন দেখা, স্কুলে যেতে না চাওয়া, খাওয়া-ঘুমের সমস্যা, অকারণে রেগে যাওয়া ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো একবারে না এসে বিভিন্ন ধাপে আসতে পারে।
প্রথম পর্যায় : (কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন) মৃত্যুর ঘটনা অস্বীকার বা বিশ্বাস না করা, অবাস্তব অনভব বা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে পারে।
দ্বিতীয় পর্যায় : (সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে ছয় মাস) কষ্ট, ভীষণ কান্নাকাটি করা, মৃত ব্যক্তিকে ফিরে পাওয়ার ব্যাকুলতা।
তৃতীয় পর্যায় : ওপরের উপসর্গের তীব্রতা ধীরে ধীরে কমে আসে। সাধারণত শোক প্রকাশের এই তীব্রতা শুরুতে খুব বেশি হলেও ধীরে ধীরে এর মাত্রা কমে যেতে থাকে। এর ব্যতিক্রমও অনেক সময় দেখা যায়।
অনেক শিশু মৃত্যুকে মোটেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারে না, দীর্ঘদিন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে শোক প্রকাশ করতে পারে। মৃত্যু-শোক একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া কোনো অসুস্থতা নয়। কিন্তু শোকের প্রতিক্রিয়া দীর্ঘতর হওয়া একটি মানসিক সংকট। যাকে বলা হয় অ্যাবনরমাল গ্রিফ।
মৃত্যু নিয়ে শোক একটি স্বাভাবিক আবেগতাড়িত। প্রতিক্রিয়া, শোক প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। আর শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় দিতে হবে। কারো শোকের প্রকাশকে কখনোই বাধাগ্রস্ত করা চলবে না, আবার শোকের এই প্রতিক্রিয়া যাতে দীর্ঘ না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।
সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহের মধ্যে মমৃত্যু শোকের তীব্র আর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কমে যায়। এরপর দু:খবোধ থাকতে পারে কিন্তু শোকের প্রতিক্রিয়া সাধারণত থাকে না। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, যাকে কখনোই জয় করা যাবে না। তবে মৃত্যু-শোককে জয় করা যায়।
এ জন্য পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের সহায়তা প্রয়োজন। এ সময় যতটা সম্ভব গভীর সমবেদনা প্রকাশ করতে হবে, তার রাগ কষ্ট যা কিছ অনুভব করে সেটা প্রকাশ করতে দিতে হবে এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করতে হবে।
লেখক : ডা. হোসনে আরা
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আদ-দ্বীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা
পড়ুন….
পারিবারিক সহিংসতা : কিশোরদের ওপর পড়ে সূদুরপ্রসারী প্রভাব
সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হন বিবাহিত পুরুষরাও
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে পারিবারিক ও সামাজিক উদ্যোগ
সহিংসতা দেখে বড় হলে মাদকাসক্ত হয় শিশুরা
আরো পড়ুন
যৌন স্বাস্থ্য বা দাম্পত্য সম্পর্কে অতি চঞ্চলতার প্রভাব
কিশোরী দেহে অবাঞ্চিত লোম ও অনিয়মিত মাসিক : কারণ ও প্রতিকার
সূত্র : মাসিক মনের খবর, ডিসেম্বর ২০১৯। মাসিক মনের খবর ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে কল করুন 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে।
/এসএস/মনেরখবর