বাচ্চা খাবার খায় না, খুব চঞ্চল : এটা কোনো সমস্যা কিনা?

চিঠি : স্যার আমি ফ্লাবিয়া। আমার ছেলের বয়স ৩ বছর ৮ মাস। নাম আইমান। তার সমস্যা হলো কোনো ধরণের খাবার সে খায় না। একদম ছোট থেকেই খাওয়ার প্রতি তার অনীহা। বুকের দুধও খেতো না। ঘরের খাবার, বাইরের খাবার কোনোটাই সে খেতে চায় না। বাজারে নিয়ে দোকানে ঘুরিয়ে দেখাই প্রতিদিন কিন্তু খাবারের কোনো কিছুতে তার হাত যায় না। এখনো পর্যন্ত তাকে ফিডার খাওয়াতে হয় তাও ঘুমের মধ্যে। তার ইচ্ছা শুধুমাত্র আইসক্রিম আর সেভেনআপ/কোক খাওয়া। এছাড়া আর কোনো খাবার বা ফলমূল কিছুই সে খায় না।

  • ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছেন তার শারীরিক কোনো সমস্যা নাই। এমনিতে ও সুস্থ আছে। খুব যে রোগা-পাতলা তাও না। এটা নিয়ে আমরা খুব টেনশনে আছি। বারবার বাসা পরিবর্তন করি। পরিবেশ পাল্টাই কিন্তু ওর কোনো পরিবর্তন হয় না। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে জেনেছি তার বাবাও নাকি ছোটবেলায় খাওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী ছিলো।

এটা কোনো প্রবলেম কিনা, এর সমাধান কী হতে পারে জানালে উপকৃত হবো। আর একটা ব্যাপার হলো ছেলেটা খুবই চঞ্চল। জাগ্রত অবস্থায় কেউ ওকে এক মিনিট সময় স্থির থাকতে দেখবে না। সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করবে। লাফালাফি করবে। খেলনা পেলে সেটা ভাঙবে, গড়বে। শুধু খাবার খাবে না; নিত্য নতুন যতো খাবারই দেই।

  • ফ্লাবিয়া (ছদ্মনাম) ময়মনসিংহ।

পরামর্শ : ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যেভাবে বলছেন এখানে বেশ কয়েকটা জিনিস লক্ষ্য করা যায়। এক. ছেলেটার অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা; যেহেতু শারীরিক সমস্যা নেই। দুই. তার বড় হওয়াতে অর্থাৎ শারীরিক বৃদ্ধিতে কোনো ধরনের সমস্যা আছে কিনা। এটাকে মাইলস্টোন ডেভেলপমেন্ট বলে। এখানে কোনো ধরণের সমস্যা থাকলে খেয়াল করতে হবে। তিন. চঞ্চলতার কথা যেটা বললেন। এখানে তার ‘এডিএইচডি’ বা অতিচঞ্চলতা রোগ আছে কিনা। যদি এটা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কাছাকাছি কোনো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারেন। অতি চঞ্চলতার সহজ কিছু লক্ষণ হলো, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে পারে না, দৌড়াদৌড়ির মধ্যেই থাকে, প্রায় সময় ব্যথা পায়, ঘুমের মধ্যেও এক ধরনের অস্থিরতা থাকে; হাত-পা অতিরিক্ত নড়াচড়া করে। যদি এরকম হয় কোনো একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখাতে পারেন।

খাওয়ার ব্যাপারে যেটা বলতে চাই; আমার মনে হচ্ছে আপনারা বাচ্চার খাওয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি কনসার্ন। আসলে ডাক্তার যেটা বলছেন সেটাই ঠিক। যতক্ষণ পর্যন্ত বাচ্চারা চঞ্চল থাকে, দৌড়াদৌড়ির করে, ঠিকমতো পেশাব পায়খানা করে, চোখ ভেজা থাকে, এনার্জি থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত আসলে খাবার নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। আপনি তাকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার দেন। একদিন, দুইদিন, তিনদিন, চারদিন পরে সে খাবারটা খাওয়া শুরু করবে। আপনি যদি ক্ষুধা লাগার আগেই তাকে খাবার দেন তাহলে তো সে খাবে না। কোনো কোনো তার ভালো লাগে না এটা হতেই পারে। সব খবর সবার ভালো লাগে না, আমাদেরও ভালো লাগে না। এটা হতেই পারে। ক্ষুধার একটা বিষয় কিন্তু তার মধ্যে থাকতে হবে। তার মধ্যে ক্ষুধাটা তৈরি হতে হবে।

  • সুতরাং ক্ষুধা লাগা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। বারবার জোর করে খাওয়ানোর দরকার নেই। ক্ষুধা রাখলে সে খাবে। আর অস্থিরতার বিষয়ে যেটা বলছেন- দৌড়াদৌড়ির মধ্যে থাকে; সেটার জন্য আপনি ডাক্তার দেখাতে পারেন। আমি ওষুধ দিতে পারব কিন্তু সেটা দেওয়াটা ঠিক হবে না। সামনাসামনি যেকোনো একজন ডাক্তার দেখালে ভালো হবে। আপনি ময়মনসিংহে থাকলে সেখানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে দেখাতে পারেন। সেখানে তিন/চার জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছে- উনাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তবে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কথা হলো, আপনারা বারবার বাসা চেঞ্জ করছেন এটার কোন দরকার নেই। বাচ্চার সম্পর্কে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া, এটাই কিন্তু একটা বড় সমস্যা। অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে গেলেও কিন্তু বাচ্চাদের এই সমস্যা হতে পারে। বাচ্চা বড় করার ক্ষেত্রে মা-বাবার দেখাশোনা বিষয়গুলো ঠিক আছে কিন্তু অতিরিক্ত মনোযোগ দেয়া ঠিক হবে না। যদি ঘনঘন বাসা পরিবর্তন করেন সেটা আরো বেশি ক্ষতিকর হবে। একটু ধৈর্য ধরেন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখান। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। পরবর্তীতে কোনো প্রয়োজন হলে মনের খবর এ যোগাযোগ করবেন।

  • পরামর্শ দিয়েছেন,
    অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব- সম্পাদক, মনের খবর
    অধ্যাপক– মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
    সেকশন মেম্বার– মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।
    কোঅর্ডিনেটর– সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
    সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।

এই বিভাগের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে :

প্রতিদিনের চিঠি : আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আপনিও লিখতে পারেন আমাদেরকে। সেজন্য ফলো করুন আমাদের ফেসবুক পেজ

মানসিক স্বাস্থ্যের যে কোনো প্রশ্ন/পরামর্শ পেতে চিঠি পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে অথবা মেইল করুন monerkhaboronline@gmail.com -ঠিকানায়।

[প্রতিদিনের চিঠি পর্বে দেয়া উত্তরগুলো কেবলমাত্র প্রাথমিক দিকনির্দেশনা। সঠিক ও পূর্নাঙ্গ চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সাথে সরাসরি কথা বলে চিকিৎসা নিতে হবে।]

  • মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা এই 01844618497 হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে।

/এসএস/মনেরখবর

Previous articleমনের খবর এর বিশেষ মাইলফলক অর্জন : আসছে ৫০তম সংখ্যা
Next articleমৃগী রোগীর জন্য যেসব পেশা ঝুকিপূর্ণ : ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here