মৃগী রোগীর জন্য যেসব পেশা ঝুকিপূর্ণ : ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ

0
71

ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

  • বিয়ের এক মাস যেতে না যেতেই বিয়ে ভেঙ্গে গেল কাকলীর (ছদ্মনাম)। কারণ খোঁজতে গিয়ে জানা গেল হঠাৎ করে সে চোখ-মুখ উল্টিয়ে ফেলে, সারা শরীরে ঝাঁকুনি বা খিঁচুনি শুরু হয়, এর পর আর কিছুই বলতে পারে না, অনেক সময় প্রস্রাব হয়ে যায় এবং দাঁতের আঘাতে জিহবাও কেটে যায়। বিয়ের আগেও এই সমস্যা ছিল মাঝে মধ্যে ঔষধ খেয়ে ভালো থাকত, টাকার অভাবে সবসময় ঔষধ খাওয়া সম্ভব হত না। ঔষধ খাওয়াটাও এত জরুরী মনে হয়নি কখনও, অনেকে বলছেন বিয়ে দিলে রোগ সেরে যাবে। তবে বিয়ের পর সমস্যা আরও বেশি হচ্ছে। একসময় ডিভোর্স হয়ে যায়। এরকম গল্প আমরা মাঝে মাঝেই শুনে থাকি।

অনেক মৃগী রোগীর মুখ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় আগুনের পোড়া দাগ ও আঘাতের ক্ষতচিহ্ন। মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে আমরা কখনো কখনো পানিতে ডুবে অনেক রোগীর অনাক্ষিত মৃত্যুর সংবাদও পাই। মৃগী রোগ মস্তিষ্কের একটি রোগ। এ রোগে মানুষের মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক পরিবর্তন হয়। ঔষধের দ্বারা ৯০ শতাংশ রোগীর রোগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

কিছু কিছু পেশা ও অবস্থা যেমন ঘুম কমে যাওয়া, নিয়মিত ঔষধ না খাওয়া, মাদক সেবন, শারীরিক ও মানসিক অবসাদ, ঝিকিমিকি আলো, জোরে আওয়াজের শব্দ, গানের শব্দ, দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনা, গরম পানিতে গোসল করা এগুলো রোগের সমস্যা ও তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।

মৃগী রোগীর অধিক ঝুঁকিপূর্ণ পেশা গুলো হল উত্তোলন কাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশন রক্ষণাবেক্ষণ, হোস্টেল এবং হোটেল পরিষেবা, বিভিন্ন মেশিন ব্যবহার করা, বিভিন্ন যানবাহনের চালনা, নির্মাণ শিল্প, নদীর গভীরতানির্ণয়, মুদ্রণ, বাণিজ্য, রান্না, যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা (সার্জারী), যন্ত্র প্রকৌশল, শক্তি, ধাতুবিদ্যা, চুলের সাজ, প্রহরী, ট্রি হ্যান্ডলার, খোদাইকারী, পণ্য প্রযুক্তি, রাসায়নিক প্রযুক্তি, শিক্ষার কিছু বিশেষত্ব, রান্না করা, মাইনার এবং ভূতাত্ত্বিক বিষয়ক কাজ।

মৃগী রোগীর জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ/ নিরাপদ পেশা হল প্রোগ্রামিং, টেলিফোন/কম্পিউটার অপারেটর, দর্জি, ফ্যাশান ডিজাইনার, শিল্পী, হিসাবরক্ষক, ডাক সেবা, মডেলিং, পোশাক ডিজাইন, পশুপালন ও পণ্য পরিদর্শক।

যেহেতু মৃগীরোগ একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ এবং দীর্ঘদিন ঔষধ খেতে হয় এবং একই সাথে পেশাও চালিয়ে যেতে হয় তাই পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে পেশাটি যেন কম ঝুঁকিপূর্ণ বা নিরাপদ হয়।

লেখক : ডা. মো. আব্দুল্লাহ ছায়ীদ
এমবিবিএস ; এমডি (সাইকিয়াট্রি)
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ
নর্থ ইষ্ট মেডিকেল কলেজ, সিলেট

সূত্র : মাসিক মনের খবর জুলাই ২২’ সংখ্যা। 

  • মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। মনের খবর অনলাইনে লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা হোয়াটসঅ্যাপ  01844618497 নাম্বারে।

/এসএস/মনেরখবর

Previous articleবাচ্চা খাবার খায় না, খুব চঞ্চল : এটা কোনো সমস্যা কিনা?
Next articleএনআইএমইচ ও এনআইবি এর সমঝোতা স্মারক সই

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here