সাইকোথেরাপিতে ভাষা সমস্যায় পড়ছেন অভিবাসীরা

জার্মানিতে বছরে প্রতি তিন জনে একজন মানসিক সমস্যায় ভোগেন৷ এই তথ্য জানিয়েছে রবার্ট কখ ইন্সটিটিউট৷ তবে সমস্যাটা গুরুতর না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলেও চলে৷ হালকা ব্যায়াম বা জায়গা পরিবর্তন করলে অনেক সময় ভালো বোধ করেন রোগীরা৷তবে মানসিক চাপটা বেশি হলে সাইকোথেরাপিস্টের কাছে যেতেই হয়৷
কিন্তু উপযোগী থেরাপিস্ট পাওয়া সহজ নয়৷ অনেক সময় অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়৷ থেরাপিস্ট ও রোগীর মধ্যে একটা আস্থার সম্পর্কও গড়ে তুলতে হয়৷ আর ভাষার বাধা থাকলে ব্যাপারটি আরো জটিল হয়ে ওঠে৷ এ কারণে অভিবাসীদের সমস্যাটা বড় হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে জার্মান ভাষায় যাঁদের তেমন দখল নেই৷ সাধারণ ডাক্তার দেখানোর সময় আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবরা দোভাষী হিসাবে সাহায্য করতে পারেন৷ কিন্তু মানসিক রোগের বেলায় বিষয়টি সহজ নয়৷ কারণ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অনেক অস্বস্তিকর বিষয় আলোচনায় উঠে আসতে পারে৷
ভুপার্টাল শহরের প্রটেস্টান্ট গির্জা সংশ্লিষ্ট সাহায্য সংস্থা ডিয়াকনি এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এসেছে৷ জার্মানির নয়টি রাজ্যে সংস্থারটির পক্ষ থেকে ভাষা ও ইন্টিগ্রেশন কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে৷ যাঁদের বলা হয় ‘স্প্রিন্ট’৷ সাধারণত তাঁরাও অভিবাসী বা বিদেশি বংশোদ্ভূত৷ ১৮ মাস প্রশিক্ষণের পর তাঁদের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়৷ এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দোভাষী বা মধ্যস্থতাকারী হিসাবে পাঠানো হয় এই সব কর্মীকে৷ সাইকোথেরাপিস্ট ও রোগীর মধ্যে প্রশ্নোত্তরে তাঁরা দোভাষীর কাজ করতে পারেন৷
ইতিমধ্যে থেরাপিস্টদের কাছ থেকে এক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে৷ জানান ভুপার্টাল প্রকল্পের পরিচালক হাইকে টিমেন৷তাঁর ভাষায়, ‘‘অবশ্য কেউ কেউ তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি একটা বাধা বলে মনে করেন৷ তবে অনেক থেরাপিস্ট জানিয়েছেন যে, এর ফলে রোগীদের শারীরিক ভাষা, ভাবভঙ্গি বুঝতে সুবিধা হয়৷”
জার্মানির সাইকোথেরাপিস্টদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ‘ফেডারাল চেম্বার অফ সাইকোথেরাপিস্ট’-এর প্রেসিডন্ট রাইনার রিখটার এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘চোখের দৃষ্টি, আকার ইঙ্গিত – এ সবের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে৷” তবু দোভাষীর মাধ্যমে কথাবার্তা চালানো হলো দ্বিতীয় উত্তম প ন্থা৷ সবচেয়ে ভালো হয় যদি থেরাপিস্ট ও রোগী একই ভাষায় কথা বলেন৷ এ জন্য রোগীর মাতৃভাষায় কথা বলেন, এই রকম থেরাপিস্টের প্রয়োজন৷
রিখটারের মতে বিদেশি ভাষায় দখল আছে এরকম থেরাপিস্টের সংখ্যা কম নয়৷ তবে প্র্যাকটিস খোলার জন্য অনুমতি-পত্র পাওয়াটা সহজ নয়৷ জার্মানিতে এমনিতেই সাইকো থেরাপিস্টের সংখ্যা কম৷ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে অবস্থাটা আরো সংকটজনক৷
জার্মানির একেক অঞ্চলে একেক দেশ থেকে আসা অভিবাসী সংখ্যা বেশি৷ আর তাই অঞ্চলভেদে সংখ্যাগরিষ্ঠ অভিবাসীর ভাষায় কথা বলে এমন থেরাপিস্টদের অনুমতি-পত্র দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে৷ এই ব্যাপারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খোঁজ খবর নেওয়া যেতে পারে৷
উল্লেখ্য, সরকারি স্বাস্থ্যবিমা সংস্থাগুলি দোভাষীর খরচ বহন করে না৷ এই সংক্রান্ত এক মামলার রায়ে বলা হয়েছে, থেরাপিস্ট ও রোগীর মধ্যে ভাষাগত ব্যবধান দূর করা স্বাস্থ্যবিমার পরিষেবার আওতায় পড়ে না৷
 

Previous articleরেগে গেলে সে দেয়ালের সাথে কথা বলে
Next articleআপনি জেনারালাইজড এনজাইটি ডিসঅর্ডারে ভুগছেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here