শিশুর মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি

0
23
শিশুর মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি

একটি পরিবারকে ঘিরেই শিশুর বেড়ে উঠা নির্ভর করে। পরিবারকে তাই সামাজিক প্রতিষ্ঠানও বলা হয়। আর একজন শিশুর শিক্ষা অর্জনের জন্য অন্যতম ও প্রাথমিক ক্ষেত্র হলো তার পরিবার। তবে শিশু সুস্থ স্বাভাবিক বেড়ে উঠার পিছনে শুধুমাত্র একটি পরিবার নয়, রয়েছে তার পরিবেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতি আমাদের স্বাভাবিক জীবনকে যেমন স্থবির করে তুলেছিলো, শিশুদের উপরও তার প্রভাব পড়েছে।

পিতা-মাতা চাইলেও তার সন্তানকে উপযুক্ত পরিবেশ দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। শিশুদের বাধ্য হয়ে ঘরবন্দি করে রাখছেন। এর ফলে এই কোমলমতি শিশুদের মানসিক সমস্যার পাশাপাশী সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যা। যখন একটি শিশু মানসিক চাপে থাকে বা হুমকি অনুভব করে তখন শরীরে প্রচুর পরিমাণে হরমোন এবং এন্ডোলিনার সৃষ্টি হয়। যার প্রতিক্রিয়া স্বরুপ শরীর শক্তিশালী, দ্রুতগামী ও ক্ষমতাবান হয়ে উঠে। এর অন্যতম লক্ষ্যণীয় দিক হলো শিশুর আচরণগত সমস্যা।

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, কীভাবে বুঝবেন আপনার শিশু আচরণগত ব্যাধিতে আক্রান্ত? শিশুরা স্বভাবতই খেলতে পছন্দ করে। দুরন্তপণা, দুষ্টুমি করা বাচ্চাদের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু একটা বাচ্চা যদি অকারণে রেগে যায়, চিৎকার-চেঁচামেচি করে, খারাপ আচরণ করে। তখন ধরে নিতে হবে শিশুটি মানসিক সমস্যায় ভুগছে বা তার বিহেভিয়ারেল ডিজঅর্ডার ঘটেছে।

কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার কিশোরদের একটি অন্যতম মানসিক রোগ। সাধারণত ১৫ বা তার কম বয়সী ছেলে মেয়েরা এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। প্রায় অনেক শিশুর পিতা-মাতা এই সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারে না। তবে মোট জনগোষ্ঠীর শতকরা ১ ভাগই এই সমস্যায় আক্রান্ত।

বিহেভিয়াল ডিজঅর্ডার বা কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার নানা কারণে হতে পারে। এর নির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো,

বংশগতি মানসিক রোগের বাহক হতে পারে। জেনেটিক্যালী মানসিক রোগের প্রবাহ কিছু ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়।

একটি শিশুর বেড়ে উঠার জন্য তার আশেপাশের পরিবেশ অনেকাংশে প্রভাব বিস্তার করে। অস্বাভাবিক পারিবারিক পরিবেশ, দাম্পত্য কলহ, পিতা-মাতা বা অন্য প্রতিবেশীর মানসিক চাপ ও নির্যাতন ইত্যাদি যদি শিশু প্রত্যক্ষ করে শিশুর মানসিক বা আচরণগত সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

শিশুরা যা দেখে তাই কপি করে অবজারভেশন লার্নিং হিসাবে নেয়। তাই পরিবার বা সমাজে অস্বাভাবিক পরিবেশ শিশুর আচরণগত সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা যায়।

প্রযুক্তির এই যুগে শিশুদের অত্যাধিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দেওয়া বা প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পরা শিশুদের আচরণগত সমস্যা হতে পারে। প্রযুক্তির এডিশনে শিশুর মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে যা আচরণে প্রতিফলিত হয়।

অনেক পিতা-মাতা ব্যস্ততার কারণে শিশুকে সময় দিতে পারে না। মেইড সারভেন্টদের কাছেই বেড়ে উঠা আর একাকীত্ব শিশুর মানসিক সমস্যার অন্যতম কারণ আর শিশুর মানসিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ বিহেভিয়ারেল ডিজঅর্ডার।

শিশুর সহপাঠী বা খেলার সাথী কেমন, কাদের সাথে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে তদারকি না করা। যার দরুণ অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার ফলস্বরুপ এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পারিবারিক দৈন্যদষা শিশুর চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে শিশুর মানসিক অবস্থার প্রভাব বিস্তার করে। সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা না নেওয়া বা শিশুকে সময় না দেওয়ার ফলে এই সমস্যা হতে পারে।

শিশুর চিত্তবিনোদনের অভাবে এবং প্রতিদিনের একই খাদ্য তালিকা ও একই রূটিনে একঘেয়েমি চলে আসা। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এবং তা শিশুর আচরণগত ডিজঅর্ডার ঘটাতে পারে।

শিশুর আচরণগত সমস্যা থেকে উত্তোলেনের উপায় বা করণীয়-

শিশুর আচরণগত দিক ঠিক রাখতে শিশুর পরিবারকে সবুরের সহিত মোকাবিলা করতে হবে এবং সময় প্রদর্শন করতে হবে।

শিশুর মানসিক অবস্থা বুঝতে শিশুর সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করতে হবে যাতে শিশুর সুবিধা অসুবিধা সম্পর্কে জানা যায়।
শিশুকে কোনভাবেই বকাবকি বা মারধর করা যাবে না। মনে রাখতে হবে শিশু যাতে তার পিতা-মাতার উপর সন্তুষ্টি ও পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি জ্ঞাপন করে।

শিশুর ভুল ত্রুটিগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে তার ভুলটি নেতিবাচক ভাবার যথার্থ কারণ থাকে এবং তাকে বুঝাতে হবে।

শিশুকে তার ভুল বুঝার সময় দিতে হবে এবং ভালো কাজ করার উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ক্ষমার মতো মহৎ কাজটি লালন করা শিখাতে হবে।

শিশু যদি কোন অপরাধ করে ফেলে তাহলে তাকে বুঝাতে হবে কোনটা তার করা উচিৎ আর কোনটা উচিৎ নয়।

সর্বোপরি একটি শিশুর সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশের জন্য তার পরিবারের সাথে তার পরিবেশ তথা সমাজের পরিবেশ প্রভাব বিস্তার করে তাই শিশুর উত্তম শিক্ষা ও আচরণগত দিক ভালো রাখতে সকলকে সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে- আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।

সুত্রঃ ইন্টারনেট

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

 

 

Previous articleঘন ঘন মন পরিবর্তন হয়
Next article শিশুদের অমনোযোগিতার রোগে করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here