শিশুদের মনে করোনার প্রভাব বেশী

শিশুদের মনে করোনার প্রভাব বেশী

সব বয়সী মানুষই করোনা মহামারীর ফলে মানসিক ভাবে অবসন্ন জীবন যাপন করছে। তবে শিশুদের উপর এই প্রভাব সব থেকে বেশী।

মহামারী চলাকালীন সময়ে সব বয়সী মানুষের জীবনই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।  দীর্ঘদিন ধরে আমরা স্বাভাবিক ভাবে বাইরে যেতে পারছি না। আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যঘাত ঘটছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধুদের সাথে মেলামেশা বা বেড়াতে যাওয়া, সব কিছুই বন্ধ রয়েছে।

এমনকি পার্ক, শপিংমল বা বিনোদনমূলক স্থান সব কিছু লক ডাউন চলাকালীন সময়ে বন্ধ রাখা হয়েছে। আর সামাজিক জীবনে নেমে আসা এই বিপর্যয় ধীরে ধীরে আমাদের মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলেছে। অন্যান্য বয়সের মানুষের মত শিশুদের জীবনেও একই অচলাবস্থা নেমে এসেছে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়েছে। ঘরের ভেতর তাদের একাকী সময় কাটছে।

শিশুরা খেলাধুলা করতে বাইরে যেতে পারছে না। বন্ধুদের সাথে মিশতে পারছে না। এই সামগ্রিক অবস্থা তাদের মানসিক অবস্থাকে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আর এই প্রভাব বড়দের তুলনায় শিশুদের অনেকটাই বেশী। এর কারণ হল শিশুরা অপেক্ষাকৃত অধিক কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়ে থাকে।

শিশুদের মন যেমন কোমল হয় তেমনি তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এই বয়সেই সব থেকে বেশী হয়ে থাকে। অপরিপক্ব মনে অস্বাভাবিক যে কোন অবস্থার প্রভাব সব থেকে বেশী পড়ে। করোনা তাদের একদম একাকী করে দিয়েছে।

সাধারণত শিশুরা সম বয়সীদের সাথে সহজে মিশতে ও ভাব বিনিময় করতে পারে। তাদের মানসিক বিকাশে এই স্বাভাবিক মেলামেশা ও ভাব বিনিময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশুরা যেহেতু এখন সব সময় ঘরের মধ্যেই সময় কাটাচ্ছে এবং তাদের মনের কথা সব সময় সবাইকে খুলে বলতে পারছে না।

কারণ শিশুরা তাদের সম বয়সীদের সাথে যেভাবে মিশতে পারে, পিতা মাতা কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সেভাবে পারে না। তাই দীর্ঘদিন ধরে এই ভাব আদান প্রদানের গ্যাপ তাদের মানসিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করছে।

তাছাড়া করোনা মহামারী নিয়ে বড়দের মাঝে শঙ্কা এবং সুরক্ষা নিয়ে যে ভয় রয়েছে সেটিও বাসার পরিবেশকে অস্বাভাবিক করে তুলেছে, যার প্রভাব শিশুদের উপর পড়ছে। এই অস্বাভাবিক পরিবেশ শিশুদেরকেও মানসিক অবসাদ, ভয় ভীতি, একাকীত্ব, হতাশাসহ নানা ধরণের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত করছে।

সারাক্ষণ টেলিভিশন দেখা, গেম খেলা এসব কাজের মাঝে যেন শিশুদের শৈশবটা আটকে গেছে। আর এই সব কিছুই তাদের মানসিক অবস্থার উপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। যা তাদের বিভিন্ন মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে তাদের মানসিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করছে।

বড়দের ভালো মন্দ বোঝার বা নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেবার মত সক্ষমতা থাকলেও শিশুরা তাদের চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি অনুসারেই আচরণ করে এবং তাদের মনের উপর পরিবেশের প্রভাব অনেক বেশী।

তাই করোনা কালে এই অস্বাভাবিক অবস্থার প্রভাব শিশুদেরকে সব থেকে বেশী মানসিকভাবে বিশৃঙ্খল করে তুলছে। শিশুদের মানসিক বিকাশে করোনার এই প্রভাব কমাতে আমাদের সবার সচেষ্ট হতে হবে। তাদের মনকে প্রফুল্ল রাখতে যথা সম্ভব প্রয়াস করতে হবে। অর্থাৎ করোনাকালে শিশুদের মানসিক অবস্থাকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleমনের খবর টিভিতে মৃগীরোগ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার
Next articleমানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিয়ে সমাজে যত ভুল ভ্রান্তি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here