শিশুদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা কি ?

ফ্রান্সে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৬৬ শতাংশকে টিকার একটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। ছবিঃ ইন্টারনেট

সারাদেশে গত ১২ই সেপ্টেম্বর একযোগে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে তবে নির্মূল হয়নি। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা চিন্তিত তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে। অভিভাবকরা চান শিশুদের জন্য টিকার সুবিধা। সারা বিশ্বে এ নিয়ে আলোচনা চলছে ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে তার আগ্রহের কথা বলেছেন। আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করার কথা।

যুক্তরাজ্য সরকার আগেই ১৫ বছর বেশি বয়সীদেরও টিকা দেয়। তারা এখন এই বয়সসীমা ১২ বছর করছে। এছাড়া আগেই অল্প কিছু দেশে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু করেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনও বিষয়টি অনুমোদন না করলেও আর এ বিষয়ে দেশে দেশে দেখা যাচ্ছে আলাদা নীতি ও কৌশল।

যুক্তরাজ্যের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তরা যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের টিকার একটি করে ডোজ শিশুদের দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

মে মাসে ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। এরপর থেকে ইউরোপেরা বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

ডেনমার্ক ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী এবং স্পেন ১২ থেকে ১৯ বছর বয়সীসহ তাদের প্রায় সব শিশুকে টিকার অন্তত একটি করে ডোজ দিয়েছে।

ফ্রান্সে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৬৬ শতাংশকে টিকার একটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। দেশটিতে দ্রততার সঙ্গে এগিয়ে চলা এই টিকাদান কর্মসূচিতে ইতোমধ্যে ৫২ শতাংশ শিশু টিকার দুটি ডোজই পেয়েছে।

 

ইউরোপিয়ান মেডিসিন্স এজেন্সি (ইএমএ) ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ফাইজারের টিকা দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে । ছবিঃ ইন্টারনেট

দেশটিতে আগামী অক্টোবরে মধ্যে ‘হেলথ পাসের’ বয়স সীমা বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর পর্যন্ত করা হচ্ছে। যার ফলে সিনেমা, মিউজিয়াম, রেস্তোরাঁ এবং শপিং সেন্টারের মত বদ্ধ জায়গায় যেতে হলে কিশোর এবং তরুণদের টিকার সনদ কিংবা কোভিড নেগেটিভ থাকার প্রমাণ দিতে হবে।

গত জুনে জার্মানির বৈজ্ঞানিকরা সুপারিশ করেছেন, শারীরিকি অসুস্থতা থাকলেই কেবল ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের টিকা দেওয়া উচিত। কিন্তু করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের বিস্তারের মধ্যে গত অগাস্টে বয়সসীমা বাড়িয়ে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকা দেওয়া শুরু করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্কুল কর্তৃপক্ষ ১২ বছর ও তার বেশি বয়সীদের ক্লাসে অংশ নিতে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। অভিভাবকরা অবশ্য এর বিরোধিতা করেছেন।

ইতোমধ্যে ৬ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে লস এঞ্জেলস কর্তৃপক্ষ। নিউ ইয়র্কে অবশ্য শিক্ষার্থীদের টিকা না দিয়ে স্কুলের সব কর্মীর টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের পক্ষ থেকেও কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ওপর টিকার পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সীদের ওপর টিকা পরীক্ষার ফলাফল তথ্যসহ পাওয়ার আশা করছে কোম্পানিটি। ৬ মাস থেকে ৪ বছর বয়সীদের ওপর টিকা পরীক্ষার ফল এ বছরের শেষ নাগাদ পাওয়া যেতে পারে।

গত জুনে ৩ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের জন্য ওষুধ কোম্পানি সিনোভ্যাকের টিকার অনুমোদন দিয়েছে চীন। তারাই প্রথম এত কম বয়সী শিশুদের জন্য টিকার অনুমোদন দিয়েছে।

এ বছরের মধ্যে ১৪০ কোটি জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার একটি খসড়া লক্ষ্য ঠিক করেছে চীন। ১৮ বছরের কম বয়সীদের বড় অংশকে টিকা না দিতে পারলে এ লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

চীনে টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক না হলেও স্থানীয় কিছু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিবারের সব সদস্যের দুই ডোজ টিকা দেওয়া না থাকলে শিক্ষার্থীরা এই পর্বে স্কুলে ফিরতে পারবে না।

বিশ্বের মধ্যে ভারতেই কিশোর বয়সীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইউনিসেফের আনুমানিক হিসেব অনুযায়ী, সে সংখ্যা ২৫ কোটি ৩০ লাখ।

সাম্প্রতিক ‘ন্যাশনাল সেরোলজিক্যাল সার্ভের’ তথ্য অনুযায়ী, মহামারী শুরুর পর থেকে ৬০ শতাংশ শিশু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকিতে পড়েছে এবং আক্রান্ত হয়ে তাদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতাও গড়ে উঠেছে।

গত অগাস্টে স্থানীয় কোম্পানি ‘জাইডাস ক্যাডিলা’র তৈরি নতুন একটি টিকা ১২ বছর বা তার বেশি বয়সীদের জন্য জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ভারতের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ভারতে এটাই শিশুদের টিকার প্রথম অনুমোদন।

তিন ডোজের এই টিকা দিতে গতানুগতিক পদ্ধতির লম্বা সূচের সিরিঞ্জের পরিবর্তে ফার্মাজেট নিডল ফ্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। জাইডাস ক্যাডিলা জানিয়েছে, শিগগিরই তারা ২ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ওপর এ টিকার পরীক্ষা চালাতে চায়।

ভারতের স্বাস্থ্য উপদেষ্টারা জানিয়েছেন, গুরুতর শারীরিক সমস্যা রয়েছে এমন ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের আগামী অক্টোবর থেকে টিকা দেওয়া শুরু হতে পারে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হলেই কেবল তার ব্যাপ্তি বাড়ানো হবে।

বাংলাদেশও তাকিয়ে আছে বাকি দেশদের দিকে। তাদের কৌশল আর ফলাফল দেখে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। তবে এখনো প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেয়া শেষ হয়নি। টিকার স্বল্পতা সংকট শেষ না হলে সহসা শিশুরা টিকা পাচ্ছে না। সরকারের টিকার যে পাইপলাইন সেই অনু্যায়ী শিশুদের টিকা পেতে আগামী বছরের প্রথমার্ধ বা মাঝে। অন্তত এই সময়ের আগে যে মিলবে না তা অন্তত বলা যায়।

 

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleঅর্ধনগ্ন পুরুষ দেখলেই যৌনতা আমাকে গ্রাস করে
Next articleপেশায় কল্পনা-ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা ও প্রয়োগ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here