শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি: অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব এর সাক্ষাৎকার

0
142
যৌন হয়রানি
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি কিংবা নির্যাতনের খবর আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত মর্যাদা সম্পূর্ণ জায়গাতে যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো ঘৃণিত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীরা নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের জন্য আইনি ব্যবস্থা ও মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আর এসব বিষয় নিয়ে মনের খবরের সাথে কথা বলেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটির চেয়ারপার্সন এবং ফ্যাকাল্টি অব হিউম্যানিটিস অ্যান্ড সোশ্যাল সয়েন্স এর অ্যাসোসিয়েট ডীন অধ্যাপক ড.ফারহানা হেলাল মেহতাব। 

মনের খবর: অনলাইনে যৌন হয়রানির অনেক ঘটনার কথা আমরা বিভিন্ন সময়ে জেনেছি। বর্তমান করেনা পরিস্থিতিতে অনলাইনে ক্লাশ হওয়াতে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে বেশি সময় দিতে হচ্ছে। এই সুযোগে অনলাইনে যৌন হয়রানীর মাত্রা বেড়েছে কিনা?
অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব: অনলাইনে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে,তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যদি ঘটে থাকতো তাহলে পত্র পত্রিকাগুলোতেে দেখা যেত। অনলাইনে যৌন হয়রানির ব্যাপারটা বরাবর যেমনটা হয়ে আসছিল তেমনটাই হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহামারীর সময়ে এটা যে বেড়েছে, তেমনটা আমরা দেখছি না। বিশ্ববিদ্যালয় গুলো খোলা থাকা অবস্থায় কিছু কিছু ঘটনা আমরা পেয়েছি কিন্তু অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছে এমনটা আমাদের কাছে এখনো আসেনি।

মনের খবর: যৌন হয়রানি ক্ষেত্রে আপনাদের কাছে অভিযোগ আসার হার কেমন?
অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব: আমি আমার প্রতিষ্ঠানের কথাটাই বলতে পারি, আমাদের কাছে আসা অভিযোগগুলো জিরো টলারেন্সে দেখানো হয়। সেটা যে পর্যায়ের উচ্চপদস্থ লোক হোক না কেন। জিরো টলারেন্সের মাধ্যমে আমরা সমাধান করি। ছোট ছোট যে সমস্যাগুলো ঘটে থাকে সেগুলো ডিপার্টমেন্ট পর্যায়ে সমাধান হয়ে যায়। একবারে কমপ্লেইন কমিটি পর্যন্ত আসার প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের প্রতিষ্ঠানে জিরো টলারেন্সের ব্যাপারটা ব্যাপকভাবে দেখানো হয়।

মনের খবর: যৌন হয়রানি প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সেলিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন?
অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব: এটা ভীষণ রকমের গুরুত্বপূর্ণ। ভয় পেয়ে হোক বা আতংকিত হয়ে হোক আমাদের প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েদের যৌন হয়রানির ব্যাপারে লিপ্ত থাকতে দেখা যায় না। তাদের ওভাবেই কাউন্সিলিং করানো হয়, ছেলেমেয়েদের ভুল গুলো ধরিয়ে দেয়া হয়, তা নাহলে ছাত্রত্ব বাদ যাবে। কাউন্সেলিং প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এক একটা ছেলেমেয়ে আসে এক এক জায়গা থেকে। কেউ কেউ গ্রাম থেকে আসে বা একটি ছেলে বয়েজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিলো, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মেয়েদের সাথে ক্লাস করতে গিয়ে কিছু একটা বলে ফেললো বা মন্তব্য করলো তখন যদি ছেলে মেয়েরা আমাদের কাছে আসে, সেটার থেকে আমি যেটা মনে করি বা সব সময় বলি prevention is better than cure। একটা ঘটনা ঘটে গেলে আমরা শাস্তি দিই,সমাধান করি। তার চেয়ে ঘটনাটা যাতে না ঘটে সে হিসেব মতে যদি আমি ছেলেমেয়েদের মানসিকভাবে গড়ে দিতে পারি তাহলে সেটাতো অনেক সুন্দর একটা ব্যাপার।

মনের খবর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ক কমিটি কতটা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে মনে করেন?
অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব: হাইকোর্টের একটা নির্দেশনা ছিল, প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির প্রতিরোধ বিষয়ক একটা কমিটি থাকতে হবে। তবে সেই কমিটির প্রধান থাকতে হবে একজন নারী এবং অন্যান্য সদস্যরাও বেশিরভাগ নারী থাকতে হবে, যাতে মেয়েরা সহজে তাদের সমস্যাগুলো খোলামেলা ভাবে বলতে পারে। অনেক প্রতিষ্ঠানই এটা করেনি, তবে ড্যাফোডিলে প্রথম থেকেই এই ব্যবস্থাটা করা হয়। এছাড়া আমাদের সাইকোলজি সাপোর্ট সেন্টার, মেডিকেল সাপোর্ট সেন্টার আছে। প্রতি সেমিস্টারে ওয়ার্কশপ হচ্ছে, আমাদের ড্যাফোডিলে অনেক বড় করে প্যারেন্টস ডে হয়, ওয়ার্কশপে ডিটেইলস বলা হয়। যৌন হয়রানির শিকার হলে কোথায় যেতে হবে, কি করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে গেছে তারপরেও কোথায় কিভাবে জিডি করতে হবে এসব শেখানো হয় ছেলেমেয়েদের।

মনের খবর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা অনলাইনে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে করণীয় কি?
অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথমেই দায়িত্ব কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে সব বুঝিয়ে দেয়া, তাদের বুঝানো ছেলে বা মেয়ে আলাদা কিছু নয়, সবাই সবার সহপাঠী। আমাদের প্রতিষ্ঠানে যেটা হয়, কোন ছাত্র দ্বারা যদি হয়রানির শিকার হয়, তার শিক্ষক এডভাইজার আছেন, সবারই একজন থাকেন। প্রথমেই তার কাছে বলা হয়, সে চেষ্টা করবে সমাধান করবে, যদি না হয় পরে ডিপার্টমেন্টের হেডের সাহায্য নিবে। যদি কমপ্লেইন আরো গুরুতর হয় তখন কমপ্লেইন কমিটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তবে প্রথমেই যেটা করা উচিত, প্রথম সেমিস্টারেই ছেলেমেয়েদের মানসিকভাবে গড়ে দেয়া উচিত, দ্বিতীয়ত প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েদের সাথে শিক্ষকদের পজিটিভলি কথাবার্তা বলা উচিত। ছেলেমেয়েরা যাতে ফিল করে তাদের একটা মেন্টালি সাপোর্ট আছে। শেষ ব্যাপারটা হলো গুরুতর কিছু হলে কমপ্লেইন কমিটিতো আছেই।

মনের খবর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতনে শিকার হওয়া নারীদের আইনি সহযোগিতার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়?
অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব: আইনি সহযোগিতার জন্যতো অনেক পদক্ষেপই আছে। যদিও আমাদের প্রতিষ্ঠানে এরকম ঘটেনি, যদি এরকম ঘটে তাহলে প্রথমে কেসটা ফাইল করা, তারপর উভয় পক্ষকে ডাকা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে যদি মনে হয় কথা বলে সমাধান করা যাবে, সেটা করে দেয়া, আর যদি ব্যাপারটা গুরুতর হয়ে থাকে, তদন্ত কমিটি গঠন করে যে ফলাফল বের হয়ে আসবে সেটার উপর ভিত্তি করে সে পরিমান শাস্তি দেয়া। আর ওয়ার্কশপ সেমিনারের মাধ্যমে তো আমরা এসব ব্যাপারে বলেই আসছি।

মনের খবর: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন এর মত ব্যাপারটায় কতটা গুরুত্ব সহকারে ব্যবস্থা নেয়া হয়?
অধ্যাপক ড. ফারহানা হেলাল মেহতাব:  প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানেই গুরুত্বসহকারে ব্যাবস্থা নিতে হবে। একটি তদন্ত কমিটি থাকতে হবে। আর সেই কমিটি প্রধান যিনি তাকে অবশ্যই একজন নারী হতে হবে। নারী হওয়া যতোটা জরুরি আইন সম্পর্কে ও তাকে জানতে হবে।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন: সৈয়দা মুমতাহিনাহ্ সোনিয়া

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleযৌনজীবনকে বিপর্যস্ত করে যেসব মানসিক বাধা
Next articleকোভিড -১৯: মানসিক রোগীরা সবচেয়ে বেশি আঘাতগ্রস্ত হতে পারে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here