মানসিক রোগের সঙ্গে অন্য রোগের চিকিৎসার পার্থক্য

0
317
মানসিক রোগের সঙ্গে অন্য রোগের চিকিৎসার পার্থক্য
যদিও মন এবং শরীর একে অপরের পরিপূরক তথাপি মানসিক রোগ ও শারীরিক রোগ এবং এর চিকিৎসায় যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। রোগের ইতিহাস থেকে শুরু করে চিকিৎসা-পদ্ধতি সবকিছুতেই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই মনের অসুখ নির্ণয় এবং এর চিকিৎসা-পদ্ধতি অনেকটাই আলাদা।

প্রথমেই দেখি রোগীর ইতিহাস নিয়ে কিছু পার্থক্য:

  • শারীরিক রোগে সব রোগের পারিবারিক ইতিহাস না থাকলেও বেশিরভাগ মানসিক রোগেরই পারিবারিক ইতিহাস থাকে যেমন বিষণ্ণতা, বাইপোলার ‍মুড ডিজঅর্ডার, শুচিবাই, দুশ্চিন্তা রোগ ইত্যাদি।
  • শারীরিক রোগের ক্ষেত্রে রোগীর পেশা, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা খব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে কারণ এসব বিষয় অনেক সময় মানসিক রোগের কারণের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত থাকতে পারে।
  • এছাড়া রোগীর মূল্যবোধ, বিশ্বাস, ছোটোবড়ো সবার সঙ্গে আচরণ মানসিক রোগের ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্ব বহন করে শারীরিক রোগে এই বিষয়গুলো ততটা গুরুত্ব বহন করে না।
  • এছাড়া মাদকের ইতিহাস মানসিক রোগীদের ক্ষেত্রে যত গভীরভাবে নেয়া হয় শারীরিক রোগে তত বিশদভাবে নেয়া হয় না।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে পার্থক্য
বেশিরভাগ শারীরিক রোগই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা গেলেও মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এর উল্টোটা দেখা যায়। খুব কম মানসিক রোগই, বলা চলে কোনো মানসিক রোগই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পুরোপুরি নির্ণয় করা যায় না।

মানসিক রোগ নির্ণয় বেশিরভাগই রোগীর ইতিহাস এবং রোগীর বর্তমান মানসিক অবস্থা যাকে বলা হয় মেন্টাল স্ট্যাটাস পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়ে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে রোগী নিজে থেকে কোনো ইতিহাস দিতে পারে না, নিজের অসুবিধার কথা বলতে পারে না, সেক্ষেত্রে রোগীর আত্মীয় স্বজনের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করেও রোগ নির্ণয় করতে হয়।

চিকিৎসা পদ্ধতির পার্থক্য
মানসিক রোগের চিকিৎসা একটি দলগত প্রচেষ্টা যাকে বলা হয়ে থাকে বায়ো-সাইকো সোশ্যাল বা মনো-জৈবিক-সামাজিক পদ্ধতি।

শারীরিক রোগের ক্ষেত্রে ওষধের ভূমিকা বেশি হলেও ‚ মানসিক রোগীদের জন্য ওষুধ একমাত্র চিকিৎসাপদ্ধতি নয়। ওষুধের পাশাপাশি সাইকোথেরাপি বিশাল ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে ওষুধ ও সাইকোথেরাপির সমন্বিত চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো ফলাফল লাভ করা যায়। প্রতিটি রোগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাইকোথেরাপি রয়েছে।সাইকোথেরাপির মাধ্যমে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে রোগীর অবাস্তব ও ভ্রান্ত চিন্তা-ভাবনা পরিবর্তন করে ইতিবাচক ও যুক্তিসংগত চিন্তা আনতে সাহায্য করেন। চিকিৎসক রোগীকে তার সমস্যা খুলে বলতে সাহায্য করেন।

এছাড়াও আরো কিছু চিকিৎসা-পদ্ধতি রয়েছে যা শারীরিক রোগের চিকিৎসা থেকে একেবারেই ভিন্ন যেমন ইলেক্ট্রোকনভালসীব থেরাপি যা মানসিক রোগ চিকিৎসায় জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা নামে পরিচিত। কারণ তীব্র বিষণ্ণতা, যেখানে ওষুধে দ্রুত ফল পাওয়া যায় না, রোগীর আহার বন্ধ হওয়া, সিজোফ্রেনিয়া প্রভৃতি রোগে এ চিকিৎসা দ্রুত কার্যকরী।

সমাজে ভালোভাবে পুনর্বাসনের জন্য সোশ্যাল ওয়ার্কারের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ মানসিক রোগে আক্রান্ত হলে এর প্রভাব সামাজিক জীবনেও পড়ে। ওষুধ এবং সাইকোথেরাপির পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করলে সামাজিকতা বাড়ে, যা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

মানসিক রোগের মতো এর চিকিৎসা-পদ্ধতি নিয়েও মানুষের মনে নানা কুসংস্কার ও বিভ্রান্তি কাজ করে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে শরীরের মতো মনের রোগেরও যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন রয়েছে। দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুধ শারীরিক রোগেই নয় মানসিক রোগেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ বিলম্বিত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শারীরিক রোগের মতো মানসিক রোগকেও জটিল করে তোলে।

সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleক্লেপটোম্যানিয়া: বিখ্যাতদের তুচ্ছ চুরির বাতিক
Next articleহ্যানস শেলি: `স্ট্রেস’ ধারণার প্রবর্তক এক মনীষী
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, আদ-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here