মানবিক সম্পর্ক বনাম ভার্চুয়াল জগৎ : ১

0
159

[int-intro] ভার্চুয়াল জগতের লাভ-ক্ষতি নিয়ে বিস্তর আলাপ হচ্ছে প্রতিনিয়তই। কিন্তু তাতে কি এর দৌরাত্ম্য কমছে? কমছে না। বরং ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বাড়ছে। হয়তো মা-বাবাকে স্নেহ করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সন্তান বায়বীয় চটকদার জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। সন্তানকে ঘুম পাড়িয়ে মা-বাবা হারিয়ে যাচ্ছে। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকাতে ভুলে গিয়ে স্বামী মেয়েবন্ধুর জমকালো প্রোফাইল পিকচারে আটকে যাচ্ছে, স্ত্রী গুণকীর্তনকারী ছেলেবন্ধুর লোভনীয় স্তুতিতে আত্মচ্যুত হচ্ছে- এর ভেতর আমাদের নিরেট পরিবারটি কোথায়! এরকম  ক্ষতিগ্রস্তদেরই একজন রাকা(ছদ্মনাম) মনের খবরের মুখোমুখি হয়ে জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন মনের খবরের বিশেষ প্রতিবেদক সাদিকা রুমন। [/int-intro]
[int-qs]আপনি কী করেন?[/int-qs]
[int-ans name=””]আপাতত কিছু করছি না।[/int-ans]
[int-qs]বিয়ে করেছেন কতদিন?[/int-qs]
[int-ans name=””]প্রায় ছয় বছর।[/int-ans]
[int-qs]সন্তান আছে?[/int-qs]
[int-ans name=””]হ্যাঁ আছে। একটা ছেলে। ওর বয়স ২ বছর।[/int-ans]
[int-quote]দাম্পত্য সম্পর্ক এম্নিতেই খুব জটিল। দীর্ঘ দিন একসাথে থাকতে গিয়ে একঘেয়ে হয়ে যায়। আর একঘেয়েমির রেশ ধরে অনেক সময় তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকে পড়ে। অন্য অনেক কারণেও এটা হয়। এই ঢুকে পড়ার বিষয়টিকে অনেক সহজ করেছে ভার্চুয়াল জগৎ। ভার্চুয়াল জগতের সম্পর্ককে অনেকে হয়তো অসততা বলে মনে করেন না। কিন্তু আমার কাছে এটা অসততা। অনেকে হয়তো ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলবেন। কিন্তু কতটা স্বাধীনতা! যা খুশি তাই করা কি স্বাধীনতা? কেউ যদি তাই মনে করেন তাহলে তার কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা উচিৎ না।[/int-quote]
[int-qs]স্বামীর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন?[/int-qs]
[int-ans name=””]একসাথে থাকতে গেলে তো একশ ভাগ মিল হয় না। সব মিলিয়ে মোটের ওপর ভালো-ই বলা যায়।[/int-ans]
[int-qs]কখনো মনোমালিন্য হয় না?[/int-qs]
[int-ans name=””]ঐ যে বললাম একসাথে থাকতে গেলে একশ ভাগ মিল কখনো হয় না। কিছু বিবাদ তো থাকবেই।[/int-ans]
[int-qs]তার মানে বড় রকমের কোনো বিবাদ তৈরি হয় না?[/int-qs]
[int-ans name=””]হয় নি এমন না। হয়েছে। তবে সংসারের প্রয়োজনে সেগুলো মিটিয়ে নিতে হয়। তবে তার জন্য আস্থা আর বিশ্বাস থাকাটা জরুরি।[/int-ans]
[int-qs]কী ধরনের বিবাদ?[/int-qs]
[int-ans name=””]আমার স্বামীর প্রতি অগাধ আস্থাটা হঠাৎ-ই হোচট খায়।[/int-ans]
[int-qs]তিনি কি বিশ্বাসভঙ্গ করেন?[/int-qs]
[int-ans name=””]অনেকটা তাই-ই। আসলে এখনকার সময়ে এরকম ক্রাইসিস হয়তো অনেককেই মোকাবেলা করতে হয়।[/int-ans]
[int-qs]কীরকম?[/int-qs]
[int-ans name=””]আমি আমার স্বামীর ওপর কখনো নজরদারি করি নি। সন্দেহ করার বিষয়গুলো আমার মনে ছিল না। যেকোনোভাবে হঠাৎ আমি জানতে পারি তার সাথে একটি মেয়ের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে।যদিও সেটা বাস্তব জগতের সম্পর্ক না, ফেসবুকে গড়ে ওঠা সম্পর্ক। কিন্তু আমি মানতে পারি না। প্রচণ্ড ধাক্কা খাই। আসলে এখনকার সময়টা তো ভার্চূয়াল আসক্তির তাই হয়তো এধরনের বিষয়গুলো খুব সহজেই ঘটে যায়।[/int-ans]
[int-qs]আপনার স্বামীর সাথে যে মেয়েটির ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল সেটা কি ভার্চূয়াল পরিচয়ের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠা সম্পর্ক?[/int-qs]
[int-ans name=””]হ্যাঁ। আমি বিষয়টা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। কারণ আমি সম্পর্কের ব্যাপারে খুব রক্ষণশীল। আমি খুব ভেঙে পড়ি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। ভাগ্য ভালো তখন আমার ছেলে জন্মেনি। তাহলে হয়তো ওর জীবনেও কোনো না কোনোভাবে এই বিপর্যয় প্রভাব রেখে যেত।[/int-ans]
[int-qs]সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠেন কীভাবে?[/int-qs]
[int-ans name=””]আমার স্বামী প্রচণ্ড অপরাধবোধে ভুগতে থাকে। আমি ব্যাপারটাকে একটা দুর্ঘটনা হিসেবে নেই। আমার মন বলে এই আকস্মিক ব্যাপারটা সে কাটিয়ে উঠতে পারবে। সুস্থির হতে সময় লাগলেও আমি তার ওপর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। প্রথম প্রথম পারতাম না। খুব সামান্যতেই ভেতরে সংশয় কাজ করতো। কিন্তু ধীরে ধীরে আমি এটা থেকে বেরিয়ে আসি। কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি সহজ না হলে সেও সহজ হবে না। আমার ভাবনা ভুল ছিল না।[/int-ans]
[int-qs]এরকম একটা আঘাত পাওয়ার পরও আপনি এই সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখলেন?[/int-qs]
[int-ans name=””]হ্যাঁ। কারণ আমি আমার স্বামীকে যতটুকু চিনি তাতে আমার মনে হয় নি বার বার সে এমন করবে। ব্যাপারটা দুর্ঘটনাই। সম্পর্ক ছিন্ন করা আমার কাছে সমাধান মনে হয় নি। আমি যদি এমন বুঝতাম সে ভেতর থেকেই এরকম, কখনো বদলাবে না তাহলে হয়তে অন্যভাবে ভাবতাম।[/int-ans]
[int-qs]ভার্চুয়াল যুগে সম্পর্কগুলোও বদলে যাচ্ছে। আপনি নিজেই তার শিকার। এই বদলকে আপনি কীভাবে দেখেন?[/int-qs]
[int-ans name=””]দাম্পত্য সম্পর্ক এম্নিতেই খুব জটিল। দীর্ঘ দিন একসাথে থাকতে গিয়ে একঘেয়ে হয়ে যায়। আর একঘেয়েমির রেশ ধরে অনেক সময় তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকে পড়ে। অন্য অনেক কারণেও এটা হয়। এই ঢুকে পড়ার বিষয়টিকে অনেক সহজ করেছে ভার্চুয়াল জগৎ। ভার্চুয়াল জগতের সম্পর্ককে অনেকে হয়তো অসততা বলে মনে করেন না। কিন্তু আমার কাছে এটা অসততা। অনেকে হয়তো ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বলবেন। কিন্তু কতটা স্বাধীনতা! যা খুশি তাই করা কি স্বাধীনতা? কেউ যদি তাই মনে করেন তাহলে তার কোনো সম্পর্কে আবদ্ধ থাকা উচিৎ না। এমন যারা করেন তারা বেশির ভাগ-ই একটা সামাজিক সম্পর্কের সুবিধা নিয়ে গোপনে অন্য সম্পর্ক তৈরি করেন। মানে সামাজিকতাও বজায় রাখেন, স্বেচ্ছাচারিতাও করেন। এই বদলগুলোকে আমি কিছুতেই পজিটিভ ভাবে দেখি না। যাদের সন্তান-সন্ততি আছে তাদের ক্ষেত্রে এইসব স্বেচ্ছাচারিতার প্রভাব আরো ভয়ংকর বলে আমার মনে হয়। অন্যসব ক্ষেত্র বাদ দিলাম সম্পর্রকের ক্ষেত্রে আমরা যত বেশি অসৎ হচ্ছি সমাজটাও তত বেশি অস্থির হচ্ছে।[/int-ans]
[int-qs]এই অস্থিরতার কি পরিবর্তন সম্ভব?[/int-qs]
[int-ans name=””]সবাই যদি আগুনের আঁচটা টের পান তাহলেই সম্ভব। না হলে নয়। ঘর মানে ঘর। ঘর মানে স্বজনদের মুখ। এই জায়গাটুকুকে পবিত্র জ্ঞান করে যদি আমরা সচেতনভাবে সেটা রক্ষা করার চেষ্টা করি তাহলে অনেক কিছু সম্ভব। স্ত্রী বা স্বামীর কাছে পরস্পরের সাথে কথা বলার চেয়ে যদি ভার্চূয়াল বন্ধুর সাথে আঙুল চালিয়ে কথা বলা বেশি গুরুত্ব পায়, সন্তানকে সময় দেয়ার চেয়ে যদি ফেসবুকে লাইক পাওয়ার জন্য বেশি অস্থির হই তাহলে সম্ভব না। আমরা যদি নিজেরাই নিজেদের স্বার্থ বুঝতে না পারি তাহলে কেমন করে পরিবর্তন সম্ভব![/int-ans]
এই কথাগুলো একজন নারীর জীবন দিয়ে উপলব্ধি করা অনুভূতি। নারী পুরুষ নির্বিশেষে হয়তো আরো অনেকে এরকম যন্ত্রনাকর অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন বা গেছেন। শুধু সামাজিকতা বা লৌকিক মানসম্মান আহত হবে ভেবে মুখ ফুটে প্রকাশ করেন না। আমরাও কি ধরে নেব পরিবর্তন সম্ভব না। নাকি নিজেদের ওপর আস্থা রেখে আশাবাদী হব? আসুন না রক্ত মাংসের সামাজিক সম্পর্কগুলোকে ভার্চুয়াল সম্পর্কের থাবা থেকে রক্ষা করি।

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ডাটাবেস তৈরি
Next articleআমারা অনেক সময় যৌনরোগ ও যৌন বাহিত রোগকে গুলিয়ে ফেলি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here