মধ্যবয়সী মন

কেস স্টাডি ১  – শায়লা আহমেদ (ছদ্মনাম), ৪৫ বছরে পা দিয়েছেন। স্বামী ভাল চাকুরী করেন, দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। সারাজীবন শায়লা তাঁর ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া, স্কুলে কোচিং এ আনা নেয়া, রান্নাবান্না আর সংসারের কাজে কর্মে সময় কোথা দিয়ে চলে গেছে টেরই পান নি। এখন মেয়ে ইউনিভার্সিটি তে আর ছেলে কলেজে পড়ে, তাঁরা নিজের পড়া, বন্ধু বান্ধব, মোবাইল, কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত। স্বামী সারাদিন থাকেন অফিসে, রাত করে ফেরেন। ব্যস্ত শায়লার এখন আর সময় কাটে না। আয়নায় দেখেন, কপালের ওপরের বেশ কিছু চুল পেকে গেছে, চামড়ায় দেখা দিয়েছে বলিরেখা। শায়লার মনে হয় কেউ তাকে গুরুত্ব দেয়না। ইদানীং শায়লার মন থাকে বিক্ষিপ্ত, খিটখিটে।

কেস স্টাডি ২ – রিনা চৌধুরী (ছদ্মনাম), ৪৮ বছর বয়স, বেসরকারি চাকরী করেন। ছেলে দেশের বাইরে পড়াশোনা করছে, স্বামী ব্যবসা করেন। ইদানীং রিনার বারবার মনে হচ্ছে ক্যারিয়ারে তিনি আরও উপরে উঠতে পারতেন। অতীতের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে আফসোস হচ্ছে, মনে হচ্ছে এ জীবনে কিছুই তো করা হল না। গত কয়েক বছর ধরে রিনার ওজনও বেড়ে যাচ্ছে। ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, সেই সাথে হাই প্রেশার। প্রতিদিন অনেকগুলো ওষুধ খেতে হয়। হাসিখুশি রিনাকে আজকাল বিমর্ষ দেখায়। রিনা প্রায়ই ভাবেন একদিন দুম করে চাকরিটা ছেড়ে দেবেন।

মধ্যবয়সী নারীদের ভেতর এই ধরনের সমস্যাগুলো প্রায়ই দেখা যায়। সাধারণভাবে মধ্য বয়সের এসব লক্ষণ গুলো ‘মিডলাইফ ক্রাইসিস’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। যদিও ‘মিডলাইফ ক্রাইসিস’ এর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্ক আছে কিন্তু এই ৪৫-৬৪ বছর বয়সে অনেকেই যে কিছু সংকটের ভেতর দিয়ে যান, এটা সত্যি। মধ্যবয়সে পরিবর্তন আসে শরীরে, মনে এবং সামাজিক অবস্থানে। নানারকম অসুখ-বিসুখ বাসা বাঁধে, ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা দিতে শুরু করে। তারুণ্যসুলভ চঞ্চলতা কমে আসে, কিন্তু বার্ধক্যের স্থবিরতা একে বলা চলেনা। সম্পর্কের সমীকরণ পালটে যায়, অনেক কাছের মানুষ দূরে চলে যান। কাজ অথবা ক্যারিয়ার নিয়ে অসন্তুষ্টি তৈরি হয়। এই বয়সে মানুষ চাওয়া পাওয়ার হিসেব মেলাতে শুরু করে, ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি হাতড়ায়। মনে হয়ত কখনো দানা বাঁধে অভিমান, ক্ষোভ, অনুশোচনা আবার কখনো উদ্দীপনা। এ সময়ে ঝোঁকের বশে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কেউ, হয়ত জড়িয়ে পড়েন প্রশ্নবিদ্ধ সম্পর্কে। বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্যাগুলো সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারেন কিন্তু কেউ কেউ হয়ে পড়েন খুব বিষণ্ণ। নারীদের ভেতর বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত হবার প্রবণতা পুরুষের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

এই সময়টা মোকাবেলা করার জন্য কিছু উপযোগী পরামর্শ:
 স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখুন, নিয়মিত চেক আপ করান।
 প্রতিদিন হাঁটা অথবা ব্যায়ামের অভ্যাস করুন। মন ও শরীর দুটোই চাঙ্গা থাকবে।
 পুরনো বন্ধু-বান্ধব দের সাথে যোগাযোগ করুন, মাঝে মাঝে মন খুলে আড্ডা দিন।
 ঝোঁকের বশে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। বড় সিদ্ধান্তের আগে পরিবারের সদস্যদের সাথে আলাপ করুন।
 ভুলে যাওয়া কোনো শখ (গান গাওয়া, ছবি আঁকা অথবা সেলাই) এর চর্চা শুরু করুন আরেকবার।
 সবকিছুর পরেও যদি বেশিরভাগ সময় মন বিষণ্ণ থাকে, একজন মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে হাঁটা
Next articleভালো থাকতে বেহালা বাজাই: নুরুজ্জামান বাদশা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here