বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস- ২০১৭ পালিত

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস- ২০১৭’। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিলো “এক মিনিট সময় নিন, একটি জীবন বদলে দিন”। এ উপলক্ষে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও সোসাইটি ফর সুইসাইড প্রিভেনশন বাংলাদেশ (এসএসপিবি) এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের কনফারেন্স হলে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে বক্তাগণ বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে আত্মহত্যার পরিস্থিতি ও তার মোকাবেলা বিষয়ক বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের মূল প্রেজেন্টেশনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বে সবচাইতে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে গায়ানাতে। বাংলাদেশেও প্রতিদিন গড়ে ২৮টির মতো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায় এদেশের ৬৫ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে যার ৯০ শতাংশই নারী।’
বক্তাগণ যৌতুক পারিবারিক নির্যাতন, আত্মহত্যার উপকরণের সহজলভ্যতা, বিষণ্ণতা, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, দ্রুত নগরায়ণ, পরিবারতন্ত্রের বিলুপ্তি ইত্যাদি বিষয়াবলী এদেশে আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, আত্মহত্যার উপকরণের সহজলভ্যতা হ্রাস, দৃঢ় পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে বক্তাগণ উল্লেখ করেন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক প্রফেসর ডা. মোহিত কামাল তাঁর বক্তব্যে আত্মহত্যার সংবাদ প্রচারে মিডিয়ার ভূমিকা কেমন হবে সে বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে আবেগ মিশ্রিত বিভিন্ন বাক্যমালা তুলে ধরা হয় যা অন্যকে আত্মহত্যা করতে অনুপ্রাণিত করতে পারে।’ এছাড়াও তিনি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দানকারী নার্সদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যেসব রোগীরা আত্মহত্যা প্রবণ হয়ে থাকে তাদের দিকে সার্বক্ষণিক দৃষ্টি রাখার জন্য।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. ফারুক আলম আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটা ধর্মেই আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং আত্মহত্যাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া মানুষের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি আত্মহত্যা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ এছাড়া জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে সার্বক্ষণিক টেলিফোন সহযোগিতার কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেটি সকলকে ভেবে দেখতে বলেন।
প্রফেসর ডা. খসরু পারভেজ আত্মহত্যা প্রতিরোধে পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি শিশুরা বেশিরভাগ সময়ই একাকী বড় হচ্ছে, কিশোর ও তরুণদের মধ্যে ইন্টারনেট ও ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেশি বেড়ে যাওয়ায় বাস্তব জীবনে তারা একাকীত্ব বরণ করছে এবং প্রয়োজনীয় মূহুর্তে তাঁদের পাশে থাকার মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে যেগুলো আত্মহত্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক।’
প্রফেসর ডা. মহাদেব চন্দ্র মণ্ডল মানুষের সমসাময়িক সমস্যাবলীকে আত্মহত্যার একটি কারণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা বর্তমানে দ্রুত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। যার কারণে সম্ভাবনা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে সমস্যা। একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে মানুষের প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে যা এক ধরণের মানসিক চাপ তৈরি করছে।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ডা. ফারুক আলমের সভাপতিত্বে ও উক্ত ইন্সটিটিউটের রেসিডেন্ট সাইকিয়াট্রি ডা. ফাতেমা মারিয়া খানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারটিতে মনোরোগ চিকিৎসক, ছাত্র, নার্স, আত্মহত্যা প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদক, মনেরখবর.কম


লক্ষ্য করুন– মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক খবর বা প্রেস রিলিজও আমাদের পাঠাতে পারেন। বৈজ্ঞানিক সেমিনার, বিশেষ ওয়ার্কশপ, সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক যে কোনো খবর পাঠাতে news@www.monerkhabor.com এই ইমেইলটি ব্যবহার করতে পারেন আপনারা।

Previous articleআজ বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস
Next articleসিলেটে বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস- ২০১৭ উপলক্ষে বৈজ্ঞানিক সেমিনার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here