মানসিক স্বাস্থ্যসেবা এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র

0
143

মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংগঠনটি নিপীড়িত ও তৃণমূল পর্যায়ের মানুষদের আইনি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি দিয়ে থাকে কাউন্সেলিং সেবা। আসক-এর কাউন্সেলিং সেবার কার্যক্রম নিয়ে মনেরখবর.কম-এর বিশেষ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র মূলত কী নিয়ে কাজ করে থাকে?
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের আইনগত সহায়তা দিয়ে থাকে। সমন্বিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা, স্বল্পমেয়াদী আশ্রয় ও মনোসামাজিক কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আসক কর্মজীবী শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও আইনগত সহায়তা দিয়ে থাকে।
কীভাবে আপনারা কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে থাকেন?
আসক ১৮টি ইউনিটের মাধ্যমে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রয়োজনীয়তা নিরূপন করে আসক এর বিভিন্ন প্রোগামে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দ কাউন্সেলিং সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সেবাগ্রহীতাদের রেফার করে থাকেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য আসক এর বিভিন্ন প্রোগামে নিয়োজিত কর্মীদেরকে মানসিক স্বাস্থ্য ও কাউন্সেলিং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্য আলোচনা, ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে যাতে তারা সেবাগ্রহীতাদের কাউন্সেলিং সেবার জন্য রেফার করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারেন। যারা ইতিপূর্বে আসকের সেবা গ্রহণ করেছেন তারাও অন্যদেরকে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণের জন্য রেফার করে থাকেন। আসক’র কিছু নেটওয়ার্কিং সংস্থা রয়েছে যেমন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, তেজগাঁও থানা; চার্চ অব বাংলাদেশ; সেখানে আমাদের কাউন্সেলর সপ্তাহে একদিন গিয়ে তাদের সেবা গ্রহীতাদের কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়, মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ব্লাস্ট, ফ্যামিলি ফর চিলড্রেন, নিজেরা করি এরকম বিভিন্ন সংস্থা থেকেও রেফার করা হয় । এছাড়া সেবাগ্রহীতারা নিজেরা কাউন্সেলিং সেবার প্রয়োজন অনুভব করে আসক এ যোগাযোগ করেন ও কাউন্সেলিং সেবা নিয়ে থাকেন।
কাউন্সেলিং সেবাগুলো কী ধরনের হয়?
পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘন ও নির্যাতনের ঘটনার শিকার ব্যক্তিবর্গ আসক এ আইনগত সেবা নিতে আসেন। নির্যাতনের ঘটনার শিকার ব্যক্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তাদেরকে কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করা হয়। পারস্পরিক ও আন্তব্যক্তিক সম্পর্কের সমস্যার ক্ষেত্রেও আসক কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে থাকে। আসক এ সাধারণত ট্রমা, মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতা, বিষন্নতা, অমূলক ভয়-ভীতি, জীবনের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ মনোভাব, হীনমন্যতা, দ্বন্দ্ব, আত্মহত্যার প্রবণতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগতা এ সমস্যা গুলো নিয়ে কাজ করা হয়ে থাকে।
কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করতে গিয়ে সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে যদি এমন কোনো লক্ষণ বা সমস্যা দেখা যায় যে কারণে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ ও চিকিৎসা দরকার হয়, তখন কাউন্সেলর তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট অথবা তাদের পরিচিত মনোচিকিৎসকের কাছে রেফার করেন।
এছাড়াও সেবাগ্রহীতাদের অন্য কোনো সেবার প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী/সংস্থায় রেফার করা হয়।
সাধারণের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার ব্যাপারে কিছু করে থাকেন কি?
হ্যাঁ, কাউন্সেলিং-এর বিষয়টা তো আমাদের দেশে সর্বস্তরের মানুষ খুব একটা জানেন না এমনকি এক ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে যে কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি শুধুমাত্র মানসিকভাবে অসুস্থদের জন্য প্রযোজ্য। তাই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ডাক্তার, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য আমাদের বেশকিছু কর্মসূচি রয়েছে।
আমাদের কিছু সচেতনতামূলক ও এডভোকেসি প্রোগ্রাম রয়েছে যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য প্রদান, মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার গুরুত্ব, মানসিক সমস্যায় মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা এবং এক্ষেত্রে কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি সেবা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করা হয়ে থাকে। টিভি, বেতার ও প্রিন্ট মিডিয়াতে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এসকল সচেতনতামূলক কার্যক্রমে শারীরিক অসুস্থতার মত মানসিক অসুস্থতাও যে গুরুত্বপূর্ণ এবং এরজন্য যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা হয়। মানসিক সমস্যা লুকিয়ে না রেখে বরং মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রারম্ভিক পর্যায়ে এর প্রতি মনোযোগী হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ মানসিক রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে এ ব্যাপারেও তথ্য দেয়া হয়।
দ্বিতীয়ত, আমাদের কিছু প্রশিক্ষণ রয়েছে যার মাধ্যমে ব্যক্তি নিজের চিন্তা চেতনা ও আচরণের ব্যাপারে সচেতন হন, নিজের ও অন্যের ব্যক্তিত্ত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন, ফলপ্রসূ যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকা ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হন। প্রশিক্ষণগুলোতে মানসিক চাপ, রাগ, দ্বন্দ্ব এ বিষয় গুলো নিয়ন্ত্রণ না করে তার ব্যবস্থাপনার উপর গুরুতারোপ করা হয় এবং অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনার কৌশল শেখানো হয়।
এছাড়াও অতীতের বিভিন্ন দুঃখজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে মানুষের মধ্যে যে অনুভূতি গুলো বর্তমান জীবনকে তথা সম্পর্কগুলোকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে, মনের অজান্তেই নিজের ভাল থাকাকে প্রভাবিত করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য নিজের শক্তিগুলোকে ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠার জন্য এবং সুসম্পর্ক তৈরিতে থেরাপি সেশন ভূমিকা রাখে।
কী ধরনের বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ করিয়ে থাকেন?
আসক মূলতঃ তিন ধরনের প্রশিক্ষণ করে থাকে যা বিভিন্ন মেয়াদে হয়ে থাকে। যেমন-
আত্মসচেতনতা ও আত্ম উন্নয়ন মূলক যেমন-
আত্ম সচেতনতা
ফলপ্রসূ যোগাযোগ
মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা
রাগ ব্যবস্থাপনা
সিদ্ধান্ত গ্রহণ
বার্ণ আউট ব্যবস্থাপনা
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের নিজস্ব কাজের ক্ষেত্রে সহায়ক যেমন,
পারস্পারিক যোগাযোগ ও শোনার দক্ষতা
কাউন্সেলিং বিষয়ক মৌলিক দক্ষতা
ট্রানজ্যাকশনাল অ্যানালাইসিস
আমাদের এ প্রশিক্ষণ সমূহে তাত্ত্বিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি পর্যাপ্ত ব্যবহারিক বিষয় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে যাতে একজন তার নিজস্ব বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে এবং ব্যক্তিত্বকে বিশ্লেষন করে উপলব্ধির মাধ্যমে নিজেকে জানতে পারেন। একইসাথে পারস্পরিক যোগাযোগ ও কাউন্সেলিং বিষয়ের মৌলিক দক্ষতাগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে শিখতে পারেন, পরবর্তীতে এই দক্ষতাগুলো নিজেদের কর্মক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।
কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি পেশাজীবীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আসক কী করছে?
কাউন্সেলিং বিষয়টিকে বাংলাদেশে পরিচিত করা এবং পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আসক-এর অগ্রগণ্য ভূমিকা রয়েছে। আসকের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য খুরশিদ ইরফান আহমেদ কাউন্সেলিং বিষয়টির গোড়াপত্তন করেন। একজন মানুষকে ন্যায় বিচার পাওয়া এবং ক্ষমতায়নের জন্য আইনগত সেবার পাশাপাশি মনোসামাজিক সেবা প্রদান খুবই জরুরি এই উপলদ্ধি থেকে আসক কার্যক্রমে কাউন্সেলিংকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সে সময় বাংলাদেশে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা সরকারি/বেসরকারি উদ্যোগে কাউন্সেলিং বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। সংগত কারণেই ১৯৯৭ সাল থেকে ভারত, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া, লন্ডন থেকে আগত আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে স্বল্পমেয়াদী কোর্স শুরু করা হয়। ক্রমান্বয়ে কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি বিষয়ে ডিপ্লোমা ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত পেশাজীবীবৃন্দ এ প্রশিক্ষণ সমূহে অংশগ্রহণ করছেন। এ পর্যন্ত দুই হাজারেরও বেশি ব্যক্তি আসক পরিচালিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আওতায় এসেছেন।
বিশেষায়িত ট্রেনিংগুলো মূলত কি কি বিষয়ের উপর হয়ে থাকে?
আসক পরিচালিত বিশেষায়িত কোর্স সমূহের মধ্যে ট্রানজ্যাকশনাল অ্যানালাইসিস অন্যতম। এক বছর ব্যাপী ডিপ্লোমা কোর্সের শুরু হয় এর প্রারম্ভিক কোর্স ট্রানজেকশনাল এনালাইসিস-১০১ এর মাধ্যমে। এই কোর্সটি আত্মসচেতনতা ও উন্নয়নের কাজ করে, মানুষ নিজেদের সম্পর্কে জানতে পারেন এবং যে কেউ এই কোর্স করতে পারেন। তবে কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি, শিক্ষা ও সাংগঠনিক উন্নয়ণ ক্ষেত্র সমূহে এই তত্ত্বের পেশাগত ব্যবহারের জন্য ডিপ্লোমা থেকে বিশেষায়িত কোর্স শুরু হয়। বাংলাদেশে চলমান এ তত্ত্বের পরবর্তী উচ্চতর কোর্স হল সার্টিফাইড ট্রানজ্যাকশনাল অ্যানালিস্ট (সি টি এ)। এ পর্যন্ত ৬০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫২জন পেশাজীবী ডিপ্লোমা কোর্সে উত্তীর্ন হয়েছেন যার মধ্যে ৪৩ জন সি টি এ কোর্সে অধ্যয়নরত আছেন। এরপরের কোর্স দুটো হল প্রভিশনাল টিচিং এন্ড সুপারভাইজিং ট্রানজ্যাকশনাল অ্যানালিস্ট (পি টি এস টি এ) এবং টিচিং এন্ড সুপারভাইজিং ট্রানজ্যাকশনাল অ্যানালিস্ট (টি এস টি এ)। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং এন্ড সার্টিফিকেশন কাউন্সিল (টি এন্ড সি সি) কর্তৃক এই সার্টিফিকেট কোর্স সমূহের পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
এ ছাড়াও বিশেষায়িত কোর্সের ক্ষেত্রে নিউরো-লিংগুয়েস্টিক প্রোগ্রামিং (এন এল পি), সাইকোড্রামা, কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (সি বি টি) ন্যারেটিভ থেরাপি, উল্লেখযোগ্য।
কারা এসব ট্রেনিং করিয়ে থাকে?
ট্রানজ্যাকশনাল অ্যানালাইসিস বিষয়ে এই সার্টিফিকেট কোর্স সমূহ পরিচালনার জন্য একজন প্রশিক্ষককে কমপক্ষে পি টি এস টি এ ডিগ্রীপ্রাপ্ত হতে হয়। ভারতের আশা কাউন্সেলিং এন্ড ট্রেনিং সার্ভিস থেকে আগত প্রশিক্ষকবৃন্দ আসকের সাথে যৌথভাবে এই কোর্সগুলো পরিচালনা করে থাকেন।
এছাড়াও পেশাগত কাজের প্রয়োজনের ধরন বুঝে আসক দেশি/বিদেশি বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষক এর সহযোগিতায় বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ আয়োজন করে থাকে।
কাউন্সেলিং বিষয়ে দক্ষ প্রশিক্ষক বাংলাদেশে খুবই অপ্রতুল।
আসক কাদের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে?
নিয়মিত কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন ধাপে প্রশিক্ষণ আয়োজন ও পরিচালনা করে থাকে। সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকার প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক সহ ঢাকাস্থ কিছু স্কুলের শিক্ষকদের জন্য উপরোল্লিখিত প্রশিক্ষণ সমূহ পরিচালনা করা হয়। শারীরিক ও মানসিক শাস্তি আরোপের বদলে ব্যক্তিত্ব, একক সামর্থ্য ও আচরণ বুঝে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের দক্ষতা উন্নয়ন এ প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য। এ ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্র সহ ব্যক্তিগত মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা দক্ষতার উন্নয়ণের জন্যও কাজ করা হয় কারণ মানসিক চাপের ব্যবস্থাপনা করা না হলে বিভিন্ন ক্ষতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে; এমনকি শিক্ষার্থীদের উপর শারীরিক ও মানসিক শাস্তি আরোপের ঘটনাও ঘটে অনেক ক্ষেত্রে।
এখানে কাজ করতে গিয়ে আমাদের একটা বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেহেতু অনেক ছোট বয়স থেকেই শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয়, তাদেরকেই শিক্ষার্থীরা রোল মডেল হিসাবে দেখে তাই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন তথ্য ও কৌশল শিক্ষার্থী পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। যার ফলে একটি জায়গা থেকে আমরা আমাদের কাজগুলো অনেক বড় একটা পরিসরে ছড়িয়ে দিতে পারছি।
শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য এবং বিশেষ চাহিদার ভিত্তিতে আসক পরিচালিত ড্রপ ইন সেন্টারের কর্মজীবী শিশুদের ও তাদের অভিভাবকদেরকে নিয়ে কর্মশালা ও থেরাপি সেশনের আয়োজন করা হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে যারা যেখানে কাজ করছেন তাদের সাথে নেটওয়ার্কিং এর ভিত্তিতে আসক তথ্য আদান প্রদান এবং পারষ্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করছে। এখানে যেমন বিশ্ববিদ্যালগুলো রয়েছে তেমনি রয়েছে বিভিন্ন হাসপাতাল, এনজিও বা অন্যান্য সংগঠন।
যদি কেউ কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপিকে পেশা হিসাবে নিতে চান তাহলে কি করা যেতে পারে?
কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি পেশায় নিজেকে তৈরি করার জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, সুপারভিশন এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন অর্থাৎ তার নিজের কাউন্সেলিং জরুরি। প্রশিক্ষণ এবং সুপারভিশন এর বিষয়টিকে ব্যবস্থা থাকলেও পারসোনাল গ্রোথ বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রে কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। একজন মানুষ হিসাবে কাউন্সেলর বা সাইকোথেরাপিস্ট এর নিজের জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি থাকে যেগুলো একজন সেবাগ্রহীতার সাথে কাজ করার সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে মনের অজান্তেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সুপারভিশনের মাধ্যমে কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি প্রক্রিয়াগত নির্দেশনা পেলেও ব্যক্তিত্বের সমস্যা গুলিকে অনুধাবন করা যায় না।
কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি কোর্স বিষয়ে সচেতনতা না থাকার কারণে অনেকেই মনে করেন মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রীপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি সেবা দিতে পারেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রীপ্রাপ্ত না হলে তাদেরকে এই কোর্সের জন্য সুযোগ দেয় না। অথচ সারা বিশ্বে এমন কোনো বিধান নাই। যে কোনো বিষয়ে পড়াশুনা করে সুনির্দিষ্ট কাঠামো ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, সুপারভিশন, পারসোনাল গ্রোথ গ্রহণ এবং পরীক্ষা পদ্ধতির প্রক্রিয়ায় উত্তীর্ণ হয়ে একজন ব্যক্তি এই পেশা গ্রহণ করতে পারেন। তবে উন্নত অনেক দেশে কাউন্সেলর বা সাইকোথেরাপিস্ট কাজ করার জন্য নির্ধারিত লাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থা থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। যদিও দক্ষিণ এশিয়ার দেশে এখন পর্যন্ত কোনো লাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থা নাই।
ঢাকার বাইরেও আপনাদের কাজ হয়?
কাউন্সেলিং বিষয়ক নিয়মিত কার্যক্রম এখন পর্যন্ত ঢাকা ভিত্তিক। তবে বিভিন্ন সংস্থা তাদের কর্মী বা সেবা গ্রহীতাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের আমন্ত্রণ জানান, সে ক্ষেত্রে আমরা ঢাকার বাইরে গিয়েও প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে থাকি।
এক্ষেত্রে আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
আসকের কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপি বিষয়ে সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলিং ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত বর্তমান কার্যক্রমকে আমরা এগিয়ে নিতে চাই। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা ও উন্নয়নের জন্য অনেক বেশি কাজ করা দরকার সেই তুলনায় আসকের সামর্থ্য খুবই সীমিত। এজন্য নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমরা অনেকের মধ্যে সচেতনতা, জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নের কাজ করতে আগ্রহী। স্কুলের শিশুদের সাথে আমরা একটি সচেতনতা ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সংযোজন করতে চাই যাতে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়ার কৌশল শিখতে পারে, নিজের ভাল থাকার ক্ষেত্রে পুরোপুরি অন্যের ভরসায় না থেকে নিজের দায়িত্বটুকু পালন করতে পারে, সেল্ফ হেল্প গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে মানসিক চাপ বা সমস্যার ক্ষেত্রে পিয়ার সাপোর্ট দেয়ার দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং সর্বোপরি প্রয়োজনে শিক্ষক, অভিভাবক এবং পেশাজীবীর সহায়তা নিয়ে সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ এরাই বাংলাদেশের ভবিষ্যত যারা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হবে।
আরও টিচার্স ট্রেনিং কলেজে কাজ করার ইচ্ছা আছে কিন্তু তার জন্য দরকার আরও জনবল ও অর্থায়ন, যা বর্তমানে আমাদের নেই।
ধন্যবাদ আপনাদের মনেরখবর.কম-এর পাঠকদের সময় দেয়ার জন্য।
ধন্যবাদ মনেরখবর.কম-এর পাঠদেরও।

Previous articleগণমাধ্যমে সন্ত্রাসী হামলার স্থির ও ভিডিওচিত্র প্রচার মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি করে!
Next articleঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here