স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীরা অধিক মানসিক সংকটে!

সাম্প্রতিক জরীপ দেখায় যে, যুক্তরাজ্যের স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করা ২৫% শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যায় ভোগে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, তাদের এই সাত বছরের কোর্সের কঠোর পরিশ্রম ও উদ্বিগ্নতা এই সমস্যার জন্য দায়ী।
এই জরীপে দেখা গেছে, কোর্স চলাকালীন প্রতি তিন জনে একজন নারী শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করেছে।
এখানে দেখানো হয়েছে, যুক্তরাজ্যে স্থাপত্য নিয়ে পড়াশোনা করা এক চতুর্থাংশ শিক্ষার্থী  মানসিক সমস্যার জন্য চিকিৎসা নিয়েছে এবং বাকী এক চতুর্থাংশ মনে করে যে, ভবিষ্যতে তাদেরকেও মানসিক  চিকিৎসা  নিতে হতে পারে। কেননা, তাদের সাত বছরের দীর্ঘ কোর্সের ফলে তাদের ঋণের পরিমাণ বেড়ে কয়েকগুণ হয়ে যাবে। আরেকটি কারণ হল তাদের কাজের প্রচন্ড চাপ, যার দরুণ দেখা যায়, বেশ কয়েক রাত তাদের না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়।
Architects নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কোর্সের তুলনায় স্থাপত্যকে কম মূল্য দেয়া হয়। যার ফলে কর্মক্ষেত্রেও তাদের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। মানসিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসা গ্রহণের সংখ্যায় পুরুষের তুলনায় নারীরা এগিয়ে। জরিপের প্রতি তিন জনে একজন নারী এ সমস্যায় আক্রান্ত। ২৯ শতাংশ নারী মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয় যেখানে ২৩ শতাংশ পুরুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত। ৪৪৭ জন অংশগ্রহণকারীর মাঝে ৯০% বলেন যে, কোনো কোনো কাজে তাদের রাতভর জেগে থাকতে হয়। যাদের মাঝে এক তৃতীয়াংশ স্বীকার করে নেয় যে, এরকম রাত জেগে কাজ তাদের প্রায়ই করতে হয়।
আন্ডারগ্রাজুয়েটের এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী বলে যে, কোর্স শেষ করার পর তদের ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩০০০০ ইউএস ডলার। কিন্তু তাদের কাজের চর্চার জন্য এখনো বিনামূল্যেই করতে হয়। জরীপে অংশ নেয়া অনেকের মাথার চুল পর্যন্ত উঠে গেছে এই দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতার কারণে। একজন অংশগ্রহণকারীর দুই বন্ধু আত্মহত্যা করেছে, যদিও, Architectural Journal এ এই তথ্য উঠে আসেনি। আরেকজন শিক্ষার্থী লিখেছে যে, “আমি প্রচন্ড আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি এবং আমার নিজের উপর থেকে সব আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।” আরেকজন অভিযোগ করে বলেন, “এতে করে নিজের কোর্সের উপর ভোগান্তি বাড়ানো হয় মাত্র।”
Anthony Seldon যিনি University of Buckingham এর ভাইস চ্যান্সেলর এবং মানসিক স্বাস্থ্যের একজন ক্যাম্পেইনার তিনি বলেন,”বৃটেনে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা একটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। যারা স্থাপত্য নিয়ে পড়ে তাদের
অবস্থা আরো খারাপ। তাদের কোর্স অনেক বড় এবং পর্যাপ্ত টাকা আয় করতে তাদের অনেক সময় লেগে যায়।” পড়াশোনা শেষ করার আগেই অনেকে তাদের প্রাক্টিসের জন্য ডাকলেও তার বিনিময়ে কোনো টাকা দেয়া হয় না।
Kingston University এর স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের কোর্স ডিরেক্টর  Timothy Smith বলেছেন, “অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশে পার্টটাইম চাকুরী করার চেষ্টা করলেও এতে করে তাদের উপর চাপ আরো বেড়ে যায়।”
Nam Kha Tran যিনি Sheffield School of Architecture এর ছাত্র, তার মানসিক সমস্যা নিয়ে বলেন, এটি হল তাদের পুরো প্রজন্মের জন্য সমস্যা।”  Royal Institute of British Architecture এর প্রেসিডেন্ট Jane Duncan স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়া এই শিক্ষার্থীদের এই সমস্যার কথা মেনে নেন এবং তাদের সাহায্য নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা এখন আর একা নয়।
তথ্যসূত্র- দ্যা গার্ডিয়ান
(https://www.theguardian.com/education/2016/jul/28/uk-architecture-students-mental-health-problem-architects-journal-survey)
আব্দুল্লাহ আল মামুন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম
বিশেষ দ্রষ্টব্য-
গত ২৭ নভেম্বর “প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষার্থীরা অধিক মানসিক সংকটে!” এ সংবাদটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু মূল সংবাদটি ছিলো স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থীদের উপর। তথ্যসূত্র মোতাবেক সংবাদটি পরিমার্জন এবং ছবি পরিবর্তন করা হলো। অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের জন্য মনেরখবর টিম সকলের কাছে আন্তরিক ক্ষমাপ্রার্থী।

Previous articleআপনি কিছুটা উদ্বেগপ্রবণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী
Next articleসেক্স্যুয়াল পারফরম্যান্স এ্যাংজাইটি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here