প্রতিটা মানুষই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে: নাট্যশিল্পী আজাদ আবুল কালাম

খ্যাতিমান অভিনেতা ও নাট্য নির্মাতা তিনি। ছোট পর্দা, বড় পর্দা এবং মঞ্চ প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর সাবলীল বিচরণ। দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত এই শিল্পী নাটকে অবদানের জন্য পেয়েছেন অনেক পুরষ্কার ও সম্মাননা। কাজের ভেতরেই ভালো থাকেন তিনি। অবসর কাটাতে চান লেখালেখি করে। তিনি আজাদ আবুল কালাম। মনেরখবর পাঠকের মুখোমুখি হয়ে এবার তিনি জানাচ্ছেন তাঁর মনের কথা, ভালোলাগার কথা, ভালোবাসার কথা, নাটকের কথা, স্মৃতির কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মুহাম্মদ মামুন।

মনের খবর: কেমন আছেন?
আজাদ আবুল কালাম: এইতো আছি! যতক্ষণ পর্যন্ত কাজ করা যায়, সুস্থ থাকা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো আছি।

মনের খবর: ভালো থাকার থাকার জন্য কি করেন?
আজাদ আবুল কালাম: ভালো থাকার জন্য প্রথমত নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখি। তাছাড়া যারা আমরা থিয়েটার করি, টেলিভিশনে অভিনয় করি, নিজের জন্য বা টেলিভিশনের জন্য লেখালেখি করি তারা নিজেদের এর মাঝে ব্যস্ত রাখা এবং হালনাগাদ রাখার মাধ্যমেই ভালো থাকি।

মনের খবর: নাটক বা থিয়েটারের মাঝে ভালো থাকা যায় কিভাবে?
আজাদ আবুল কালাম: নাটক বা থিয়েটার প্রতিদিন একটা নতুন প্রত্যাশার জন্ম দেয়। শুধু নাটক বা থিয়েটারই নয়, সৃজনশীল কর্মের সাথে যারাই যুক্ত থাকে তারা একটা স্বপ্নের মাঝে বা কর্মের মাঝে থাকে এই কারণে যে প্রতিদিন নতুন কিছু সৃষ্টি হবে। এইযে সৃষ্টির সম্ভাবনা এটাই আসলে তার কাছে টনিকের মতো কাজ করে এবং এটাই তাকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

মনের খবর: এটা কি স্বপ্নের বাস্তবায়নের মতো কিছু?
আজাদ আবুল কালাম: না, আমাদের সব স্বপ্ন তো আর বাস্তবায়িত হয় না। মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, এরমধ্যে কেউ যদি কর্মী হয় উদ্যমী হয় তাহলে তার কিছু স্বপ্ন সে বাস্তবায়িত করতে পারে।

মনের খবর: আপনার স্বপ্নগুলো কেমন (ঘুমের স্বপ্ন)?
আজাদ আবুল কালাম: আমি আমার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি এ স্বপ্নটা আমি এখনও দেখি। তার কারণ হলো আমাদের জার্নালিজম ডিপার্টমেন্টে একটা পরীক্ষা আছে যার থিওরী ও প্র্যাক্টিক্যাল দুটোই আছে। আমার ফাইনালের সময় থিওরী পরীক্ষার পর আধঘন্টা বিরতিতে অন্য একটি জায়গায় প্র্যাক্টিক্যাল ছিল। কিন্তু আমি থিওরি শেষ করার পর প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। হয়তো এই কারণেই এখনও প্রায়ই আমি স্বপ্নে দেখি মার্স্টার্স পরীক্ষা দিচ্ছি।

মনের খবর: স্বপ্ন যদি নিয়ন্ত্রণ করা যেতো তাহলে কেমন স্বপ্ন দেখতে চাইতেন?
আজাদ আবুল কালাম: অবাস্তব স্বপ্নগুলোও কিন্তু মজাদার। কিছু স্বপ্ন তো আমার কাছে ফিকশনের মতো মনে হয়। কেউ আমায় তাড়া করছে অথবা বাসের হ্যান্ডেলে ধরেছি বাস ছেড়ে দিয়েছে কিন্তু আমি কিছুতেই বাসে উঠতে পারছি না। আর স্বপ্ন যদি নিয়ন্ত্রণ করা যেতো তাহলে হয়তো মানুষ এমন স্বপ্নগুলো দেখতে চাইতো। হয়তো দেখতে চাইবে মহাশুন্যে সে হাঁটছে অথবা মঙ্গল গ্রহে অথবা আরো দূরে। অথবা ভীনগ্রহে যদি কোনো বুদ্ধিমান সত্ত্বা থাকে তাহলে স্বপ্নে তার সাথে দেখা করতে চাইতে পারে। আবার এমনও হতে পারে স্বপ্ন নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হয়তো আমি স্বপ্নই দেখতে চাইবো না। একটা ফ্রেশ ঘুম তারপর জেগে বাস্তবসম্মত স্বপ্ন দেখতে চাই।

মনের খবর: অবসর পেলে কি করেন?
আজাদ আবুল কালাম: অবসর বলে কিছু চিনি বলে আমার মনে হয় না। অবসর কাটানোর মতো কোনো সুযোগ আসলে আমার হয়নি। কখনও কখনও বিশেষ উপলক্ষ্যে ছুটি হয় যেমন ঈদ উপলক্ষ্যে তখনও সামাজিকতা রক্ষা বলে একটা কাজ থেকেই যায়। ঘুরে বেড়ানোর জন্য ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটিও আমার জীবনে হাতে গোনা ২/৩ বার ঘটেছে। আর বেশিরভাগই হয়েছে কাজের সূত্রে। সে হিসেবে অবসর বলে কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। তবে মাঝে মাঝে অবসর কাটাই, কোনো কাজ করি না, একদম শুয়ে বসে কাটাই। ব্যাপারটি আমার বেশ মজা লাগে। তবে সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য নয়। যেমন কোনোদিন সিদ্ধান্ত নেই আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনোপ কাজই করব না।

মনের খবর: এক মাস পূর্ণ অবসর পেলে কি করবেন?
আজাদ আবুল কালাম: একেবারে পূর্ণ অবসর পেলে সেটা তো আমার জন্য ক্ষতিকর হবে। বলা যায় একরকম জেল জীবন হবে আমার জন্য। তারপরও যদি বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে হয় তাহলে চেষ্টা করব লেখালেখি করতে।

মনের খবর: মন খারাপ হয়??
আজাদ আবুল কালাম: হ্যাঁ, আমার তো অহরহ মন খারাপ হয়।

মনের খবর: কি কি কারণে মন খারাপ হয়?
আজাদ আবুল কালাম: আমার মন খারাপ হওয়ার জন্য খুব ছোট উপলক্ষ হলেই চলে। এই যেমন হয়তো কোনো রিক্সাওয়ালার সাথে দুর্বব্যবহার করেছি এবং হয়তো যৌক্তিক কারণেই করেছি। এরপর ঘটনা মিটে গেলে তখন মন খারাপ হয়, মনেহয় অযথাই দুর্ব্যবহার করলাম। আবার দেখা যায় যেখানে আমি কাজ করি সেখানে কারো ছোট্ট একটা কথা বা ছোট্ট একটা আচরণ অনেক সময় আমাকে ভাবিত করে বা মন খারাপ করায়। অবশ্য এটাও বুঝি আমার অভিজ্ঞতা আমার বয়স এসব মিলিয়ে এর থেকে আমার বেরিয়ে আসা উচিত, কিন্তু পারি না।

মনের খবর: রাগ হয়?
আজাদ আবুল কালাম: অন্যের দৃষ্টিতে আমি ভয়ানক রাগী।

মনের খবর: আর নিজের দৃষ্টিতে?
আজাদ আবুল কালাম: আমি সেভাবে রাগী নই। তবে হ্যাঁ স্টুপিড লেভেলের কিছু রাগ আমার আছে কিন্তু বয়সের সাথে সাথে সেটি কমে যাচ্ছে। আসলে দুই/একটি ঘটনার জন্য আমার রাগের ব্যাপারটি একটু লিজেন্ডের মতো হয়ে গেছে।

মনের খবর: রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য কি করেন?
আজাদ আবুল কালাম: রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য সেভাবে কিছু করি না। হতে পারে আমার অভিজ্ঞতাই আস্তে আস্তে এটিকে নিয়ন্ত্রণে এনে দিয়েছে। বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক ধরনের বোঝাপড়া আমি শিখে গেছি।

মনের খবর: ঈর্ষা আছে?
আজাদ আবুল কালাম: সহজাত প্রবণতার মধ্যেই মানুষ হিংসা পেয়ে থাকে। তবে জন্মগতকাল থেকেই হোক অথবা শৈশবকাল থেকেই হোক এই ঈর্ষা ব্যাপারটি আমার মধ্যে একটু কম। এর একটা কারণ হতে পারে, এটার চর্চাটা ছোটবেলা থেকে আমাকে করানো হয়নি। যার কারণে সহজে আমি ঈর্ষান্মিত হই না। আমার মনেহয় কারো ভালো দেখে ঈর্ষান্মিত হওয়ার চাইতে নিজের সীমাবদ্ধতা নিয়ে ভাবাটা অনেক জরুরি। তবে যখন দেখি সঠিক লোকটি সঠিক স্থানে নেই বা কেউ যোগ্যতার চাইতে বেশি পেয়ে গেছে সেটা দেখলে রাগ হয়। অযোগ্যের ক্ষমতায়ন দেখলে বিরক্ত হই।

মনের খবর: আপনার দৃষ্টিতে জীবনের মানে কি?
আজাদ আবুল কালাম: কারো ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি বলে কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। মানুষ যে পরিবেশে থাকে যেভাবে বেড়ে উঠে সেখান থেকে নানা দৃষ্টিভঙ্গি তার উপর ভর করতে থাকে। মানবজাতির ইতিহাস এত বড় যে তার অনেক অভিজ্ঞতা আমরা বয়সের সাথে সাথে অর্জন করি। তারপরও জীবনের মানে যদি বলতে হয় বলবো, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ। প্রতিটা মানুষই একটা উদ্দেশ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে। আমার জীবনটা শুধু আমার জীবন নয়, আমার জীবনের সাথে আরো অনেকে জড়িত। আমার জীবনটা যতটুকু আমি বিশ্লেষণ করতে পারছি ততটাই আমার আনন্দ।

মনের খবর: স্মৃতিকাতরতা আছে?
আজাদ আবুল কালাম: আমি ভীষণভাবে স্মৃতিকাতর। বলতে পারেন স্মৃতিকাতরতা আমার খুব পছন্দের। কিছু স্মৃতি আমি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনে করতে পারি। এমনকি আমার মনেহয় সেই সময়ের স্পর্শ গন্ধ এগুলোও আমি অনুভব করতে পারি।

মনের খবর: কোন সময়ের স্মৃতিগুলো আপনাকে বেশি আলোড়িত করে?
আজাদ আবুল কালাম: শৈশব থেকে শুরু করে কৈশোর যৌবন প্রারম্ভের স্মৃতিগুলোতে বেশি আলোড়িত হই, নিকট অতীতের ঘটনাগুলো আমাকে সেভাবে স্মৃতিকাতর করে না। আমি যে পরিবেশে বড় হয়েছি, মামা বাড়ি দাদা বাড়ি অর্থাৎ গ্রাম কেন্দ্রিক যে সমাজ সেখানে অনেক অনেক মানুষ, বছর যাচ্ছে কেউ চলে যাচ্ছে তাদের স্মৃতিগুলো এখনও আমাকে আলোড়িত করে।

মনের খবর: প্রেমে পড়েছেন কখনও?
আজাদ আবুল কালাম: (হাসি) ছোটবেলায় ক্লাস এইটে পড়ার সময় এক মেয়ের প্রেমে পড়েছিলাম। তাকে কিন্তু কখনও বলতে পারিনি। সে বুঝতো কিনা জানিনা। তার একসময় বিয়ে হয়ে যায় এবং বিদেশ চলে যায়। ঐযে স্মৃতিকাতরতার কথা বললাম সেখানে এই প্রেমে পড়ার ব্যাপারটিও রোমন্থন করি। তার কথা আমার এখনও মনে হয়। আমি নিশ্চিত যে এত বছরের ব্যবধানে সে দেখতে নিশ্চই অন্যরকম হয়ে গেছে। তার কথা আমার এখনও মনে হয়। কোথায় তার জন্য অপেক্ষা করতাম, আমি জানতাম যে এই সময়টাতে এখানে তাকে দেখা যাবে।

মনের খবর: নাট্যশিল্পী না হলে কি হতেন?
আজাদ আবুল কালাম: এটা বলা আসলে কঠিন। আমাদের দেশে ঘটনাচক্রে অনেককিছু হয়। বাবা মায়ের স্বপ্ন থাকে এক রকম ছেলে হয় আরেক রকম। একটা সময় বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হব, আবার যখন ইন্টার পরিক্ষার পর আর্মিতে পরীক্ষা দিলাম তখন বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে আর্মি অফিসার হবে, আবার আমার মা-ই বললেন দরকার নেই। আমি আসলে জানতাম না যে আমি কি হব। এই না জানার মাঝেই ইন্টারের পর থিয়েটারে যোগ দেই। পড়াশোন শেষ করার পর ইউনিসেফে আমার চাকুরি হয়, চাকুরির শর্ত ছিল প্রথম দুই বছর সারা বাংলাদেশে কাজ করতে হবে। তখন আমার মাথায় আসলো তাহলে বিকেলে আমি কি করব, চাকুরি নিলে তো আমি রিহার্সেলে যেতে পারবো না। চাকুরিটা আমার আর নেয়া হলো না। ভীষণ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলাম আমি। আমার এমন কিছু একটা চাই যাতে এখানে থাকতে পারি আমি। তারপর এই থিয়াটারের কারণেই টিভিতে অভিনয় করা বা নাটক লেখা শুরু করলাম। আমি নিজে কখনও ভাবিনি যে আমি কি হব, কিন্তু আমাকে নিয়ে যে যা স্বপ্ন দেখেছিল তাঁদের স্বপ্নগুলোর মৃত্যু হয়েছে এবং এক সময় মেনে নিয়েছে।

মনের খবর: মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন কখনও?
আজাদ আবুল কালাম: মানসিক রোগে আক্রান্ত হইনি, তবে কয়েকবার অবসাদগ্রস্থ হয়েছি। কয়েকবার আমাকে কর্মহীনতায় পেয়ে বসেছে। এটাকেও এক প্রকার মানসিক অসুস্থতার মতোই বলা যায়।

মনের খবর: আবহমান বাংলার নাট্যচর্চার ইতিহাস হাজার বছরের হওয়ার পরও বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নাট্যচর্চার অবস্থান ততটা জোরালো নয় কেন?
আজাদ আবুল কালাম: এটা ঠিক যে বাংলাদেশের থিয়েটার এখনও ঐ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। যেহেতু থিয়েটার চর্চাটা এখনও প্রফেশনাল জায়গা হয়ে উঠেনি তাই দেশে যত নাট্যচর্চা হচ্ছে তার খুবই ক্ষুদ্রাংশ হচ্ছে মোটামুটি মানের। এখনও ভাঙ্গা গড়ার একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের থিয়েটার চলছে। আমাদের দেশের সবচাইতে বড় যে পরিচালক বা অভিনেতা সেও আসলে একটা ওয়ার্কশপের মধ্যে আছে। তার একটা কারণ হচ্ছে আমাদের শিক্ষাটার ধারাবাহিকতা নেই। আমাদের শেখাটা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। এটা সত্য এখানকার নাট্যচর্চার ইতিহাস আড়াই হাজার বছরের পুরানো, তবে এটার কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না। যার ফলে কোনো স্কুল তৈরি হয়নি। যেমন, পালা গান। পালা গান এত শক্তিশালী একটা জিনিষ, কিন্তু এটার জন্য কোনো স্কুল তৈরি হয়নি যেখান থেকে পালা গান শেখানো যেতে পারে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু চর্চা হলেও তার পরিমাণটা এতোই কম যে সেটা ইনস্টিটিউটের মতো দাঁড়াতে পারেনি। আমার মতে এই ধারাবাহিকতার অভাবেই বিশ্ব দরবারে সেভাবে স্থান করে নিতে পারিনি।

মনের খবর: দেশের নাট্যচর্চার বর্তমান পরিস্থিতি কি?
আজাদ আবুল কালাম: এখন যেটা আছে অনেকে নানা ধরনের কাজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু শুধু চেষ্টা করলেই তো হবে না। বিশ্বমানের কাজ করার জন্য যে সাপোর্টগুলো দরকার বা যে ট্রেনিংগুলো দরকার সেগুলো তো সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব জায়গায় আপনি কাজ করতে চান বা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চান সেগুলোও পাওয়া যাচ্ছে না।

মনের খবর: দেশের নাট্যচর্চাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তৈরির ব্যাপারে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?
আজাদ আবুল কালাম: পরামর্শ দিতে পারছি না কারণ আমি নিজেই শেখার মধ্যে আছি। তবে হ্যাঁ, চোখ কান খোলা রাখা, নিজেকে অনেক বেশি সমসাময়িক রাখা যে বিশ্ব দরবারের কোথায় কি হচ্ছে, কে কি দিয়ে কি করছে। আবার শুধু এটা ভাবলে চলবে না যে বিশ্বখ্যাত নাট্যকার বা নাট্য নির্মাতাকে ফলো করলেই আমি বিশ্ব মানের নাটক তৈরি করতে পারবো। আমার ক্ষেত্রটি আমার নিজেরই আবিষ্কার করতে হবে। আমাকে দেখতে হবে আমার কোন জিনিষটা দিয়ে বিশ্ব দরবারে উপস্থিত হতে পারি। থিয়েটার আসলে জাতির সাথে সম্পৃক্ত। বঙ্গোপসাগরের তীরে অধিক জনসংখ্যার ছোট্ট দেশটির পরিচয় আমি কতটুকু উপস্থাপন করতে পারছি সেটা আমাদের দেখতে হবে। অবশ্য এরকম জায়গায় যাওয়ার জন্য আমাদের আরো সময় লাগবে।

মনের খবর: থিয়েটারে মানসিক শক্তির প্রভাব কোথায়?
আজাদ আবুল কালাম: থিয়েটারে মানসিক শক্তির প্রভাব তো ভীষণ রকম। এটা মূলত ইন্টেলেকচুয়ালদের কাজ। থিয়েটারে যারা কাজ করবে তাদের বিজ্ঞানীদের মতো হতে হবে। অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা এবং সারাক্ষণ নতুন কিছু আবিষ্কারের চিন্তার মধ্যে দিয়ে তাকে যেতে হবে। এখানে ভালো কিছু করতে চাইলে তাকে সব সময় একটা প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য। মানসিক শক্তি তো এখানে আবশ্যিক। থিয়েটার আবার অনেক সময় থেরাপি হিসবে কাজ করতে পারে। আমাদের এখানে গত ব্যাচে একটা অটিস্টিক ছেলে এসেছিল। পরে ছেলেটির মা বলছিল ছয় মাসে ওর নাকি অনেক উন্নতি হয়েছে। পরে আমরা ওকে আমাদের দলে নিয়ে নিয়েছি। আসতে আসতে যদি মানুষের সাথে যোগাযোগের স্কিলটা বাড়ে তাহলে ওর জন্যও ভালো ওর ফ্যামিলির জন্যও ভালো।

মনের খবর: ডিফরেন্টলি এবল একটি ছেলেকে শেখানোর অভিজ্ঞতাটি আপনার কেমন?
আজাদ আবুল কালাম: এখানে আমার অভিজ্ঞতা খুবই ছোট। তবে এতটুকু বলতে পারি, এখানে প্রচন্ড রকম ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেয়ার একটা বিষয় আছে। ছেলেটিতো আসলে সম্পুর্ণ সুস্থ। হয়তো ওর জেনেটিক কোডের কোথাও ছোট্ট একটা পরিবর্তন আছে যার কারণে আমাদের থেকে ওর যোগাযোগ প্রক্রিয়াটা ভিন্ন।

মনের খবর: মনেরখবরে সময় দেয়ার জন্য পাঠকদের পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আজাদ আবুল কালাম: ধন্যবাদ মনেরখবর পাঠদেরকেও।

Previous articleমানসিক রোগ নিয়ে ধারণা, ভুল ধারণা এবং বিবিধঃ (পর্ব – ৯)
Next articleভালোবাসার ভ্রান্ত বিশ্বাস

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here