পরিবার শৃঙ্খল নাকি শৃঙ্খলা

পরিবার হলো মানুষের প্রথম স্কুুল। ছোট অবস্থায় কিংবা বড় অবস্থায় সকল সময়ে পরিবারকে কেন্দ্র করেই মানুষ ঘুরতে থাকে। পরিবারের সঙ্গে পারস্পারিক বোঝাপড়া দেওয়া-নেওয়া প্রতিনিয়ত চলতে থাকে। তবে সময়ের সাথে সাথে একেক জনের ভূমিকা পরিবর্তন হতে থাকে।
একজন মানুষ ছোট অবস্থায় ছেলে বা মেয়ে, মধ্য বয়সে স্বামী বা স্ত্রী, মা বা বাবা, তারপর দাদা বা দাদি। এভাবেই জীবন ঘুরতে থাকে পরিবারের মধ্যে।
তারুণ্য আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এসময় পরিবারের ভূমিকা তরুণদের প্রতি পরিবর্তন হয় বা হওয়া দরকার। আবার বেড়ে ওঠার অংশ হিসেবে পরিবারের প্রতি তরুণদেরও তাদের ভূমিকা পরিবর্তিত হতে থাকে। এসময় বন্ধুদেরকে বেশি আপন মনে হয় তরুণদের কাছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের গঠন পরিবর্তিত হচ্ছে। বড় পরিবার ভেঙে ছোট পরিবার হচ্ছে। আবার একক পরিবার থেকে শুধু পিতা বা শুধু মাতা নিয়ে পরিবারের সংখ্যা দিনে বাড়ছে। আমাদের দেশে এখনকার তুলনায় আগে অনেক যৌথ পরিবার ছিল। এখন আস্তে আস্তে একক পরিবার বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে শুধু পিতা বা একা মাতা নিয়ে পরিবারের সংখ্যাও বাড়ছে। পরিবারের গঠন, পরিবারের নিয়ম এই ‍দুইটি বিষয়ের ওপরই ওই পরিবারে তরুণদের গড়ে ওঠা নির্ভর করে। তারুণ্য জীবনের বেশ গুরুত্বপর্ণ সময়। এসময়ে তরুণরা নিজেদের আলাদা ব্যক্তি হিসাবে চিন্তা করে। এ জন্য তাদের স্বাধীনতা প্রয়োজন। আবার অতিরিক্ত স্বাধীনতা তরুণদের জীবনকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নামাতে পারে। কারণ তরুণরা বিপদজনক কাজে লিপ্ত হতে চিন্তা ভাবনা করে না। ‍সুতরাং ফলাফল হিসাবে কালের গর্ভে হারিয়ে যেতে থাকে। কারণ সংকটজনক অবস্থা থেকে বের হওয়ার পরিপক্কতা থাকে না। আদর্শগতভাবে তরুণ বয়সে স্বাধীনতা যেমন প্রয়োজন তেমনি তাদের নিজেদেরও কাজের দায়িত্ব নেওয়াও প্রয়োজন।
এটা আবার নির্ভর করে সমাজ ব্যবস্থা, দেশের অর্থনৈতিক নিয়ম কানুন, ওই সমাজের কালচার ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। উন্নত দেশের সঙ্গে এই জায়গায় উন্নয়নশীল দেশের পার্থক্য বিদ্যমান। পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের যেমন স্বাধীনতা প্রয়োজন তেমনি তাদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। পশ্চিমা কালচারে স্বাধীনতা বেশি পায় তেমনি তাদের কাজের দায়িত্বও তারা নিতে পারে, যেটা তাদের সমাজিক ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তারা মানিয়ে নিতে পারে। আমাদের দেশে পশ্চিমাদের মতো স্বাধীনতা বিপদজনক হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে পশ্চিমা দেশে এক ধরনের প্যারেন্টিং সফল বহন করে আবার উন্নয়নশীল দেশে অন্য ধরনের প্যারেন্টিং সুফল পাওয়া যায়। আমাদের এই কালচারে দেখা গেছে যেসব পরিবারের কাঠামোগত নিয়ম-কানুন বিদ্যমান, তাদের তরুণদের বেড়ে ওঠা ভালোভাবেই এগিয়ে যায়। আবার পশ্চিমা দেশে দেখা গেছে কাঠামোগত নিয়ম কানুন ও স্বাধীনতার সুন্দর ভারসাম্য যে পরিবারে আছে তাদের বেড়ে ওঠা ভালো হয়।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে পশ্চিমা দেশেও অবাধ স্বাধীনতা ভালো ফলাফল আনেনি। চীনে টাইগার প্যারেন্টিং শব্দটি বেশ পরিচিত এবং এরকম তরুণদের বেড়ে ওঠা অন্যদের তুলনায় ভালো। শ্রীলঙ্কা ও তামিলদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বাবা-মা বাচ্চাদের খুব বেশি যত্ন করে। আমাদের দেশেও এমনটা দেখা যায়। যদিও কোনটা ভালো সেটা বলার জন্য গবেষণার দরকার।
তরুণরা নিজের স্বকীয়তার ওপর দাঁড়িয়ে সমাজকে দেখার চেষ্টা করে। মনে রাখা দরকার যে- বাস্তব অভিজ্ঞতা, জ্ঞান কম থাকায় তাদের ভুল করার সম্ভাবনা বেশি। ভুল করেও বেশি। সুতরাং পরিবারের অভিভাবকদের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা দরকার। তরুণরা কাজে ব্যর্থ হলে হতাশ হয়ে ফেরত এলে তারা যেন পরিবার থেকে যথেষ্ট সহায়তা পায়।
অতিরিক্ত নিয়ম-কানুন তরুণদের জীবনকে দেখতে বুঝতে চলতে বাধা দেয় যেটা কিনা তাদের জন্য প্রয়োজনীয়। অতিরিক্ত স্বাধীনতা কোনো সমাজেই ভালো ফলাফল আনেনি। তরুণরা না বুঝে সহজেই ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেমে যায়। বেশিরভাগ সময়েই সেটা আর কাটিয়ে উঠতে পারে না। সেজন্য একটা ভারসাম্যময় সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ যেটা কাঠামোগত নিয়ম ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সমন্বয় হিসেবে বিন্যস্ত থকাবে। তবে বিপদের সময় পাশে থাকা খবু জরুরি।

Previous articleমানসিক হতাশা থেকেই মেসিদের ড্র
Next articleমনোযোগের অভাব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here