ছেলে ইয়াবা সেবন করে, কথা শোনে না

ছেলে ইয়াবা সেবন করে, কথা শোনে না

সমস্যা: আমার ছেলে প্রায় দুই বছর ধরে ইয়াবা সেবন করে। সে আমার কোনো কথা শোনে না। রাতে প্রায়ই বাসায় থাকে না। পড়াশোনা করে না, আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যাবহার করে না। এমতাবস্থায় আমার কী করণীয়? পরামর্শ দিলে কৃতজ্ঞ থাকব। -নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

সমাধান: যে কোনো নেশাই অন্যসব আনন্দকে ম্লান করে দেয়। মানুষটি আর অন্য কোনো কিছুতে ঠিকমতো মন বসাতে পারে না। দিনকে দিন নেশার বিষয়টিই তার কাছে মুখ্য হয়ে ওঠে। ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিকসহ প্রয়োজনীয় সব কাজের গুরুত্বই তার কাছে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। দিনে বা রাতের প্রায় সব সময়ই তার কাছে নেশা ও নেশাদ্রব্যের বিষয়ে বিভিন্ন চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে।

নেশা করা, নেশাদ্রব্য জোগাড় করা, নেশার সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, নেশার অর্থ জোগাড় করা- এসবের পেছনেই অধিকাংশ সময় ব্যয় করা হয়। একজন মানুষ ইচ্ছা করলেও তখন সে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম বা সাধারণ নিয়ম-কানুন আর ঠিক রাখতে পারে না। ইচ্ছা থাকলেও সে তখন স্বাভাবিক নিয়মগুলো মেনে চলতে পারে না। ধীরে ধীরে মেজাজও খিটখিটে হতে থাকে।

আপনার ছেলের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে থাকতে পারে। দুই বছর অনেক সময়। দুই বছর ধরে টানা নেশা করতে থাকলে এসব ঘটা খুব বেশি অস্বাভাবিক নয়। দিন দিন এসব সমস্যা বাড়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। প্রসঙ্গক্রমে আর একটি কথা এখানে বলে রাখি, নেশাকে নেহায়েতই একটি অভ্যাস না ভেবে এটিকে একটি রোগ ভাবতে চেষ্টা করুন এবং দ্রুত চিকিৎসার কথা ভাবুন।

আপনার ছেলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দ্রুত তাকে চিকিৎসার আওতায় আনুন। তা না হলে সমস্যা কিন্তু আরো বাড়তে থাকবে। রাগ-অভিমান না করে নিজেরাই তার সঙ্গে খোলামেলা আলাপ করুন। তার সমস্যার কথা শুনুন, তাকে আশ্বস্ত করুন। চিকিৎসার বিষয়ে বোঝান এবং দ্রুত চিকিৎসার আওতায় আনুন।

আপনি কোথায় থাকেন সেটা জানা গেল না। ঢাকায় থাকলে কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন। অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানও আছে, সেসব জায়গায়ও যোগাযোগ করতে পারেন। আপনার আশপাশের মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। একটি কথা মনে রাখবেন, এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যেখানে সঠিক চিকিৎসা হয় না। যদি হাসপাতাল বা নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করাতে হয়, তবে প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসক বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নেবেন।

আপনার লেখা থেকেই বোঝা গেল সে এখন একজন ছাত্র। সময়মতো যদি সঠিক পথে না আসে, তবে তার শিক্ষাজীবনও ব্যাহত হবে। আর পুরো ভবিষ্যৎই বরবাদ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং দেরি করা ঠিক হবে না। ওর সঙ্গে কথা বলুন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। নিজেও ভালো থাকার চেষ্টা করুন। প্রশ্ন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং সব সময় মনের খবরের সাথেই থাকবেন।

অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব

চেয়ারম্যান, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

Previous articleবয়সভেদে শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণে করণীয়
Next articleঅতিমাত্রায় ঘুমের প্রভাব ও করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here