মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করে গড়ে ওঠে ছেলেদের মনস্তত্ত্ব

0
70

পুরুষদের যেনও মন বলতে কিছুই নেই। কারো সামনে কান্না করা কিংবা ব্যথিত হয়েও থাকতে নাই পুরুষদের। পুরুলষ মানেই শক্ত, অবিচল একজন মানুষ। বর্তমান যুগে এমনটাই ভাবা হয় পুরুষদের।

কিশোর কিংবা যুবক কখনো না কখনো সম্মুখীন হয়েছেন এরকম কথার – ‘মেয়েদের মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদিস না তো’, ‘বি আ ম্যান’, ‘ছেলে মানুষের কি এত অল্পতে ব্যথা পেলে চলে?’, ‘রান্নাঘরে কী? তুমি যাও গাড়ি নিয়ে খেলো, বোনের পুতুল ধরবে না’, ‘এই নীল জামা তোমার, গোলাপি ফ্রক বোনের’, ‘প্রেমিকা গেছে তো কী হইছে? আরও আসবে। এ রকম করতেছিস কেন? তোর যে অবস্থা, তুই বরং শাড়ি চুরি পরে ঘুরে বেড়া, যত্তসব’…

বেড়ে ওঠার সময় এগুলোর একটা কথাও শোনেননি, এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর এভাবে বেড়ে ওঠার কারণে বড় হয়েও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলাটাকে পুরুষেরা দুর্বলতা মনে করেন। ফলে পুরুষের মনের খোঁজ আর রাখা হয় না।

 

অথচ প্রত্যেক মানুষের দুঃখ আছে। কোনো না কোনো কষ্ট থাকে, যেটা ঝেড়ে ফেলে প্রত্যেকে উঠে দাঁড়াতে চান, সামনে এগোতে চান। আবার তার ভারে সেই মানুষ দিন দিন নুয়ে পড়েন, তাঁর জীবনযাপনে চলে আসে ক্লান্তি। তবে মেয়েরা যত সহজে তাঁদের কষ্ট প্রকাশ করতে পারেন; পারিবারিক, সামাজিক, সংস্কৃতিক কারণে ছেলেরা সেটা পারেন না। নানান গৎবাঁধা গণ্ডির মধ্যে আটকে থেকে, নিজেদের ‘পুরুষ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে অনুভূতি প্রকাশে আর স্বচ্ছন্দ থাকেন না ছেলেরা। ফলে একধরনের যোগাযোগহীনতার ভেতর ভেঙে পড়ে পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য।

শারীরিক সুস্থতা নিয়ে সবাই যতটুকু সচেতন, মানসিক স্বাস্থ্য ততটাই অবহেলিত। আর পুরুষের মানসিক স্বাস্থ্য আরও বেশি করে অবহেলিত।

মানসিক স্বাস্থ্য বলতে সাধারণত আমরা বুঝি, প্রত্যেক মানুষের নিজের সম্ভাব্য কর্মশক্তি সম্পর্কে ধারণা থাকা, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের হরেক রকম চাপের সঙ্গে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারা, সঠিকভাবে কাজ করতে পারা ও আবেগ সুস্থভাবে প্রকাশ করতে পারা। এবার আশপাশে তাকিয়ে দেখুন, আপনার চেনাজানা কজন পুরুষ মানসিক সুস্থতার এ ধাপগুলো পেরোতে পারবেন?

যদি কেউ মন খারাপ ভাব, হতাশা ঠিকমতো প্রকাশ করতে না পারেন, তাহলে সেটা অন্য কোনো না কোনোভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়বেই। আর সেটা স্বাস্থ্যকর না-ও হতে পারে। যদি মনের স্বাস্থ্য ভালো না থাকে, তাহলে তার আঁচ শরীরেও পড়ে। শরীরও বিদ্রোহ জানিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর শরীরের অসুখ যদিওবা আমরা টের পাই, নিজের বা অন্যের মনের অসুখ টের পাওয়া যায় না। সেভাবে কান পেতে শোনার চেষ্টাও আমরা করি না। আবার বিভিন্ন সামাজিক কারণে ছেলেদের মনস্তত্ত্ব গড়ে ওঠে মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করেই।

এসব কারণে অনেক ছেলেই মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত, নেশাগ্রস্ত হয়ে ওঠে কিংবা আত্মহত্যার দিকেও ঝুঁকে পড়েন। মানসিকভাবে অসুস্থ একজন যেমন নিজেকে শেষ করে দেন, তেমনি শেষ করে দিতে পারেন তাঁর পরিবার আর কাছের মানুষকেও। তবু নিজেদের মানসিক সুস্থতা নিয়ে সচেতন নন ছেলেরা। আবেগ, অনুভূতির প্রকাশ মানেই এই সমাজে ছোট হয়ে যাওয়া।

মেয়েদের মতো স্বভাব—এসব অবান্তর বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সে জন্য প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার আছে। না হলে ফল যে মারাত্মক হতে পারে, তার উদাহরণ আশপাশেই ভূরি ভূরি আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বব্যাপী নারীদের তুলনায় দ্বিগুণসংখ্যক পুরুষ আত্মহত্যা করেন। মনকে বুঝে সামলাতে না পারা এর একটা বড় কারণ। আর এভাবেই সমাজের ছাঁচে বাঁধা পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির মারাত্মক শিকার পুরুষেরাই।

নিজেকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখার প্রধান দায়িত্ব আপনারই। তাই মানসিক রোগ যেন বাসা না বাঁধে, সময় থাকতে সেদিকে সচেতন হতে হবে। আপনি পুরুষ, এটা মনে করার আগে মনে করতে হবে, আপনি একজন মানুষ। কখনোই নিজের আবেগ নিজের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখবেন না, এতে মানুষ আগ্রাসী হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে আপনারও আবেগের প্রকাশ করতে হবে, মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। একজন ছেলে হিসেবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় আপনার নিজেরই কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে:

• যথাসম্ভব ইতিবাচক মনোভাব রাখুন।
• ব্যায়াম করুন।
• অন্যদের সঙ্গে মনের কথা ভাগ করে নিন, অন্যদের কথাও শুনুন।
• আট ঘণ্টা ঘুমান। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান। নির্দিষ্ট সময়ে উঠুন।
• ধ্যানের মাধ্যমে মনের অস্থিরতা দূর করা যায়।
• প্রয়োজনে পেশাদার কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নিন।
মানসিক স্বাস্থ্য কোনো হাসিঠাট্টার বিষয় নয়। লৈঙ্গিক, সামাজিক, আর্থিক পরিচয় আর অবস্থাননির্বিশেষে সবার মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র: হেলথলাইন, হাফপোস্ট

 

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous article৫ লক্ষণে বুঝে নিন, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কি না
Next articleসবসময় খুব কনফিউশনে থাকা হয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here