নারী ক্রীড়াবিদদের সন্তানের দেখাশোনা

0
42
নারী ক্রীড়াবিদদের সন্তানের দেখাশোনা

যদি আমাকে বলা হয় পৃথিবীতে সব থেকে ভীতিকর কাজ কোনটি, তাহলে নিঃসন্দেহে উত্তরটি হবে ঢাকা শহরের কোনো রাস্তায় একজন নারীর একা চলাচল করা, এটা জরুরি নয় যে সেটি অন্ধকারে হতে হবে। একটি আলো ঝলমলে দিনেও এটি একটি শক্ত কাজ। এই পুরুষশাসিত সমাজে একজন নারীকে যেকোনো পেশায় অত্যন্ত কঠোর মন্তব্যের শিকার হতে হয়, এখানে অন্যান্য সব নারীদের প্রতিই অধিকাংশ মানুষের মনে এক ধরনের নারীবিদ্বেষী মনোভাব বিরাজ করে। খেলাধুলা আমাদের দেশে প্রচলিত পেশা নয়, এমনকি পুরুষের জন্যও নয়। যেহেতু এটি অন্যান্য স্থিতিশীল বেতনের ডেস্ক-পেশার মতো লাভজনক নয়। তাছাড়া, খেলাধুলা একটি অপবাদপূর্ণ পেশা। তাই নারী এবং খেলাধুলা একত্রিত হলে প্রথম থেকেই অসংখ্য বাধার সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের দেশে পুরুষ খেলোয়াড়দের তুলনায় পেশাদার নারী খেলোয়াড়দের সংখ্যা অনেক কম। অনেক নারী খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে বেছে নেয় না। স্বল্প সংখ্যক নারী যারা খেলাধুলাকে জীবিকা হিসেবে বেছে নেয় তাদেরকে গোটা পেশাগত জীবনে পর্বত সমান প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই একজন নারী খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে সন্তানদের খেয়াল রাখা তার থেকে অনেক বেশি কিছু দাবি করে এবং তার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতার সর্বোচ্চ পরীক্ষা নেয়। খেলাধুলা একটি শারীরিক পেশা এবং খেলোয়াড়দেরকে প্রশিক্ষণের সময় তাদের শারীরিক সক্ষমতার প্রান্তসীমায় ঠেলে দেওয়া হয়। একজন মা হিসেবে এটি অনেক কঠিন হতে পারে। একটি সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণের দিন শেষে সন্তানদের দেখাশোনা করা এবং তাদের চাহিদার প্রতি মনোযোগী হওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে উঠতে পারে। খেলোয়াড়দের তাদের প্রাত্যহিক প্রশিক্ষণসূচি তাদের সন্তানদের চাহিদা পূরণের জন্য পরিবর্তন করতে হয়। এমনকি একজন মা যিনি পেশাজীবী নন তার পক্ষেও সন্তানের দেখাশোনা করা সহজ নয়। বর্তমানে দূষণ বৃদ্ধি এবং সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শিশুরা সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই একজন পেশাদার নারী খেলোয়াড়কে সন্তানদের সময় দেওয়ার জন্য তার প্রাত্যহিক সূচিতে অনেক অনেক পরিবর্তন আনতে হয়।

এমন অনেক সফল খেলোয়াড়ের উদাহরণ রয়েছে যারা মা। যেমন- ব্যাডমিন্টন কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস বা ১০০ মিটার শেলি অ্যান ফ্রেসার যিনি দোহায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে নিজের বিজয় তাঁর ছেলের সঙ্গে উদযাপন করেছেন।

এই বিশ্বে একজন পেশাজীবী মা হওয়া অত্যন্ত শ্রমসাধ্য এবং খেলাধুলার মতো পেশা হলে সেটি আরো বেশি শক্ত। দীর্ঘ সময়, মানসিক ও শারীরিক পীড়া এবং বলা বাহুল্য এই সমাজের অসহায়তা ও অমর্যাদা একজন নারীর সক্ষমতার সর্বোচ্চ পরীক্ষা নেয়। অনেক নারী খেলোয়াড় একটি বড়ো দ্বন্দ্বে ভোগেন তাদের পেশাটি ধরে রাখবেন নাকি তার পরিবারকে সময় দিতে পেশায় ইতি টানবেন এবং সবাই দু-দিক সামলানোর এই কাজটি করতে পারেন না। একজন খেলোয়াড় মায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের সহায়তা ও সমর্থন। পরিবারের সহায়তা একজন খেলোয়াড়ের জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি একজন নারী খেলোয়াড়ের জন্য আরো বড়ো ভূমিকা পালন করে যিনি একজন মা এবং যিনি তার স্বপ্ন অন্বেষণ করতে উৎসাহী।

ডা. জুরদি আদম

ফেইজ বি, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৫ম সংখ্যায় প্রকাশিত।   

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous article‘সংকটকালীন সাংবাদিকতা : ট্রমা ও সাংবাদিকের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ শীর্ষক ওয়েবিনার
Next articleক্ষমাশীল মানসিকতা জীবনকে সহজ ও আনন্দময় করে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here