করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মনোবল বাড়াবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মনোবল বাড়াবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি

করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি আমাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিই তার মনোবল বৃদ্ধি করবে এবং তাকে দ্রুত সুস্থ হওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আসুন, মানসিকভাবে তাদের পাশে দাঁড়াই, পৃথিবী পুনরায় সুস্থ করে তুলি।

মনস্তত্ত্ববিদ গণের মতে, মানসিক শক্তি একজন ব্যক্তির যে কোন কঠিন রোগের সাথে লড়াই করার মূল শক্তি ও সামর্থ্য হয়ে ওঠে। তাছাড়া, একজন মানুষ যদি মানসিকভাবে দৃঢ় হন, তাহলে যে কোন রোগ থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। করোনা মহামারী বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপী হাহাকার সৃষ্টি করেছে।

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় এবং অসুরক্ষা আমাদের মনের মাঝে যেঁকে বসেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার এবং মৃত্যুবরণের খবর আমাদের যেমন দুশ্চিন্তা এবং উৎকণ্ঠার মাঝে ফেলেছে, তেমনি এই ভয় এবং উৎকণ্ঠা আমাদেরকে করে দিয়েছে একাকী এবং স্বার্থপর। যেহেতু রোগটি খুব বেশী সংক্রামক তাই সুরক্ষিত থাকার পূর্ব শর্ত হিসেবে আমাদের সামাজিক মেলামেশায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

এই সবকিছু সার্বিক ভাবে আমাদের সামাজিক জীবনকে চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং আমরা ধীরে ধীরে ভীষণ রকম স্বার্থপর মনোভাব সম্পন্ন হয়ে উঠেছি। আর আমাদের এই মনোভাব একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মনোবল অনেক কমিয়ে তার মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি করছে। যা আক্রান্ত ব্যক্তি তথা মানব সভ্যতার জন্য মোটেই শুভ লক্ষণ নয়।

এটা সঠিক যে বর্তমান সময়ে করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে আমাদেরকে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে এর মানে কখনোই এটা নয় যে আমরা একজন করোনা রোগীকে মানসিক ভাবে একাকী করে রাখবো। আমাদের এমন নেতিবাচক মনোভাব একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে যেমন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার মনোবল কমিয়ে দেয় তেমনি তার মাঝে একাকীত্ব, হতাশা, চরম ভয় এবং নেতিবাচক চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে।

এই মানসিক সমস্যাগুলো তার সুস্থ হয়ে ওঠাকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সেটিকে অনেক দীর্ঘস্থায়ী আকার প্রদান করে। তাই আমাদের উচিৎ করোনা থেকে তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে সেই প্রচেষ্টা করা। আর এটি শুধুমাত্র তখনই সম্ভব হবে যখন আমরা শারীরিক ভাবে নয় বরং মানসিকভাবে পাশে থেকে তাদের মনোবল বাড়ানোর প্রয়াস করবো।

আসুন জানা যাক কিভাবে আমরা এই কাজটি বেশ সহজেই করতে পারি। একজন করোনা পজিটিভ ব্যক্তির সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া প্রয়োজন। তার যেন কখনোই এটি মনে না হয় যে, করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে তিনি একা। দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকার জন্য তাকে এটি বুঝানো প্রয়োজন যে, দুশ্চিন্তা কখনোই রোগ থেকে মুক্তি দেবে না বরং এটি তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও দুর্বল করে দেবে।

তার মনে সাহস যোগাতে হবে যে, খুব স্বল্প চিকিৎসাতেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং এটি মোটেও কোন মরণব্যাধি নয়। সার্বিকভাবে তার মাঝে আশার সঞ্চার করতে হবে এবং এই বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে যে, তার অসুস্থতার সময়কালে আমরা সবাই তার পাশেই আছি এবং যে কোন প্রয়োজনে তিনি আমাদের তার পাশেই পাবেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, মানবিক আচার আচরণই আমাদের মানুষ নামের সার্থকতা প্রদান করে। করোনার মতো এই সংকটের সময়ে আমাদেরকে মানবিকতা ত্যাগ করলে চলবে না। আমাদেরকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একে অপরের পাশে থাকতে হবে, মনোবল বৃদ্ধি করে একে অপরের শক্তি হয়ে উঠতে হবে।

মানসিক শক্তিই একজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থতা ত্বরান্বিত করবে। তাই তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে বরং তাদের মনোবল বাড়িয়ে আমাদের সবাইকে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে।

Previous articleকরোনার তৃতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞগণ
Next articleঅটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুদের খাদ্য সচেতনা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here