অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুদের খাদ্য সচেতনা

অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুদের খাদ্য সচেতনা

শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পুষ্টির প্রয়োজন। এই পুষ্টি একজন সুস্থ্য শিশুর যেমন প্রয়োজন ঠিক তেমনি একজন অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুরও প্রয়োজন। অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুর খাবারের দিকে অভিভাবকদের বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার (এএসডি) একটি জটিল স্নায়বিক বিকাশসংক্রান্ত রোগ। এতে সামাজিক সম্পর্কে সমস্যা, কথা বলার প্রতিবন্ধকতা এবং সীমাবদ্ধ, পুনরাবৃত্তিমূলক ও একই ধরনের আচরণ দেখা যায়। এএসডি সাধারণত শৈশবে শুরু হয় এবং বড় হওয়া পর্যন্ত থাকে।

অটিজম বৈশিষ্ট্যসংবলিত শিশুদের খাদ্যাভ্যাস তাদের ভালো থাকায় কোনো প্রভাব ফেলে কি না, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণায় দেখা গেছে, এ সমস্যায় মস্তিষ্কের সেরোটোনিন বা অন্যান্য নিউরোট্রান্সমিটার অস্বাভাবিক মাত্রায় থাকতে পারে।

অটিজম বৈশিষ্ট্যসংবলিত শিশুদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি এ গবেষণাগুলোয়। তবে এ ধরণের শিশুরা অনেক অস্বাভাবিক আচরণ করে। তাদের খাওয়ানো, বিশেষ করে নিজে নিজে খাবার খাওয়ার দক্ষতা গড়ে তুলতে বেগ পেতে হয়।

অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এই শিশুদের সম্ভব হলে গ্লুটিন ও কেজিনযুক্ত খাবার বর্জন করা ভালো। গ্লুটিন খাবারের মধ্যে গম, যব, বার্লি, রাই, ইস্ট ইত্যাদি অন্যতম। আর কেজিনযুক্ত খাবারের মধ্যে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার অন্যতম। এসব খাবার অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুদের ত্রুটিপূর্ণ পাচন, শোষণ ও বিপাক ঘটাতে পারে। ফলে শিশুর মধ্যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। সয়া সসযুক্ত খাবার ও টেস্টিং সল্টযুক্ত খাবারও শিশুর অস্থিরতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ।

অটিস্টিক শিশুর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়লে তাদের মধ্যে হাইপারঅ্যাকটিভিটি বা অস্থিরতার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই তাদের খাবারে সরাসরি অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি না থাকাই ভালো। অনেক অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুর থাইরক্সিন হরমোনের নিঃসরণ কম থাকে। ফলে হাইপোথায়রয়েডিজম দেখা দেয়। ফলে কথায় অস্পষ্টতা ও স্নায়বিক দুর্বলতা হতে পারে। থায়রয়েড হরমোন তৈরির জন্য সামুদ্রিক মাছ, আয়োডিনযুক্ত লবণ খাওয়া উচিত।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুর খাদ্যে যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন এ থাকলে দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি চোখে চোখ রেখে কথা বলার সক্ষমতা তৈরি হয়। ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে মাতৃদুগ্ধ, কডলিভার অয়েল, ছোট মাছ, গাজর, পাকা পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, কলিজা, ডিম, পালংশাক, পাকা আম ইত্যাদি অন্যতম। ভিটামিন এ-এর পাশাপাশি ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি ও ম্যাগনেশিয়াম খেলে শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়বে।

অভিভাবক বা অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে একটা ডায়েরিতে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো টুকে রাখতে পারেন। যেদিন শিশু খুব বেশি অস্থির আচরণ করে, সেদিন সে নতুন কোনো খাবার খেয়েছে কি না, তা লিখে রাখুন। কোনো খাবার অতিরিক্ত খেলে তাও লিখে রাখুন। এতে পরবর্তী সময়ে সাবধান হতে পারবেন।

অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুকে একটা গোটা ডিম এক দিন পরপর দিয়ে দেখুন কোনো সমস্যা হয় কি না। সব ঠিক থাকলে প্রতিদিন ডিম খাওয়ান। চকলেট, চিপস, ডিপ ফ্রাই খাবার এড়িয়ে চলুন।

অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুর শরীরে সিসা, ক্রোমিয়াম, ল্যাকটেট অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কতটুকু, তা চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিন। এগুলোর সঙ্গেও শিশুর অস্থিরতা ও আচরণের সম্পর্ক আছে।

মনে রাখতে হবে, শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পুষ্টির প্রয়োজন। কাজেই অটিস্টিক বা অটিজম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুদের খাবার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো নিয়ে একজন অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। এর পাশাপাশি শিশুকে নিজের খাবার নিজে খাওয়ার প্রশিক্ষণ দিন ধীরে ধীরে।

Previous articleকরোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মনোবল বাড়াবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
Next articleযৌন দুর্বলতায় মুক্তির ‍উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here