করোনায় বাড়িতে থাকাকালে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় করণীয়

0
19
করোনায় বাড়িতে থাকাকালে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় করণীয়
করোনায় বাড়িতে থাকাকালে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতায় করণীয়
বিশ্ব মহামারি প্রতিরোধের চেষ্টায় বহু মানুষ নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। একটানা ঘরে অবস্থান করা এবং চারপাশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এই অবস্থায় তাদের জন্য কিছু সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

কোভিড-১৯-এর বৈশ্বিক মহামারির এই সময়ে ঘরে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতিতে একটানা ঘরে অবস্থানকালে তাই এসব ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার শঙ্কা রয়েছে।

মহামারির সময়ে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে তাতে বিভিন্ন দেশের বিপর্যস্ত জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরেও চাপ বাড়বে।

তাই সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বেচ্ছা গৃহকোণে নির্বাসনের সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে সবল থাকার কিছু সাধারণ অথচ গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থ থাকা নিঃসন্দেহে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে, ভাইরাস পরিস্থিতি, নিজের কর্মসংস্থান, আয়, পরিবার-পরিজনের সুরক্ষা নিয়ে সারাক্ষণ উদ্বেগ কাজ করতে পারে আপনার মাঝে। এই অবস্থায় স্বাভাবিক ঘুম আসবেনা অনেকের।

ঘরে মজুদ শুকনো এবং সংরক্ষিত খাবার থেকেও পাওয়া যাবে না প্রয়োজনীয় পুষ্টি। কিন্তু একটু সতর্ক হলেই এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলা সম্ভব। খবর টাইমসের।

নজর দিন পুষ্টিমান বিচারে

মন্টানা স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্যপ্রাণ এবং পুষ্টি বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপিকা কারমেন বাইকার শ্যাঙ্কস। তার মতে, বাড়িতে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে খাদ্য মজুদের সময়েই পুষ্টিমান অনুসারে বাজার করা উচিৎ। শুধু শুকনো এবং ক্যানজাত খাবার না কিনে বরং আগে থেকেই একটি পরিকল্পনা করতে হবে।

আপনার প্রয়োজনীয় সংরক্ষিত খাদ্য অবশ্যই কিনবেন, তবে সঠিক জিনিষ কেনার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এভাবে আপনি অতি-ক্রয়ের প্রবণতা এড়িয়ে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য পণ্যদ্রব্যের মান সহনশীল রাখতে সাহায্য করতে পারবেন।

প্রথমেই আপনার ঘরে যেসব জিনিষ যথেষ্ট মজুদ আছে তার একটি তালিকা করুন। এরপর ওই তালিকার ওপর ভিত্তি করে শর্করা, আমিষ এবং কৃষিজাত দ্রব্য (দুধ, ডিম, সবজি ইত্যাদি)  সম্বলিত একটি দৈনিক খাদ্য  তালিকা তৈরি করুন।

সিংহভাগ মানুষ এখন শর্করা জাতীয় শস্য এবং ক্যানজাত খাদ্য বেশি কিনছেন। কিন্তু অধ্যাপিকা শ্যাঙ্কসের মতে, আপনার এলাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের বাজারহাট খোলা থাকতে থাকতেই আপনি দৈনিক ভিত্তিতে শাকসবজি খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।

শাকসবজি ধুয়ে ও কেটে তা ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। মিষ্টি আলু, ব্রকলি এবং বাঁধাকপি, গাজর এধরনের সবজির আদর্শ উদাহরণ।

হিমায়িত ও ক্যানজাত খাদ্য কিনতে হলে সেগুলোতে যেন চর্বি, লবণ এবং চিনির পরিমাণ কম থাকে সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রতিবার পরিবেশনে পাঁচ গ্রামের চেয়ে কম চিনিযুক্ত সংরক্ষিত খাদ্য কিনুন। আর একইভাবে লবণের মাত্রাও পরিবেশনা প্রতি ২০০ গ্রামের সমান বা কম হওয়া ভালো। চর্বির ক্ষেত্রে সীমারেখা ১ দশমিক ৫ গ্রাম।

শ্যাঙ্কস বলেন, ঘরে বসে একই ধরনের খাবার খেতে খেতে শুধু শারীরিক দুর্বলতা নয় বরং মানসিকভাবেও একঘেয়েমি এবং অবসাদে ভুগছেন অনেক মানুষ। খাদ্য এবং পুষ্টির বৈচিত্র্য এই সমস্যা সমাধানের উপায়। পাশাপাশি এসব নিয়ে আপনি নিজেকে ব্যস্ত রাখার সুযোগটাও পাচ্ছেন।

 ক্লান্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন

পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য ক্লান্তি এবং উদ্বেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আর পর্যাপ্ত ঘুম সুস্বাস্থ্যের প্রধান শর্ত।

যোগব্যয়াম এবং ধ্যান এসব নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। সঠিকভাবে যোগ ব্যয়াম করার টিপস অনলাইন ক্লাস থেকেও সহজেই পেতে পারেন।

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জেমি গোল্ড বলেন, অতিরিক্ত প্রযুক্তি নির্ভর বিনোদন অনেক সময় অবসাদ তৈরি করতে পারে। নিজের ঘরের একটি অংশকে এই ধরনের যোগাযোগ প্রযুক্তির বাইরে রাখুন। তবে সেখানে ধ্যানের উপযোগী মৃদু সঙ্গীতের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

এই বিশেষজ্ঞ অতিরিক্ত সংবাদ শোনা এবং সেই সংক্রান্ত উদ্বেগ থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দেন।

পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা

গবেষণায় দেখা গেছে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্লাস্টিক এবং ইস্পাত তলে ৭২ ঘণ্টা জীবিত থাকতে পারে। কার্ডবোর্ড এবং দস্তার তৈরি বস্তু পৃষ্ঠে থাকতে পারে ২৪ ঘণ্টা।

তাই সর্বদা নিজের বাড়ির দরজার হাতল, মেঝে, সিঁড়ির রেইলিং পরিষ্কার করুন। গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত বেশিরভাগ পরিষ্কারক কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কতটা কার্যকরী তা এখনও জানা যায়নি। তবে করোনা গোত্রের অন্যান্য ভাইরাস নির্মূলে এসব পণ্য ইতোপূর্বে কার্যকর হয়েছে। তাই আশা করা যায় করোনা প্রতিরোধেও এরা সফল হবে।

এই বিষয়ে পারিবারিক ও সামাজিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. জেনিফার লি মাঝেই মাঝেই নিজের হাত মোছার তোয়ালেগুলোকেও ভালো করে পরিষ্কার করার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও, ঘরের বাইরে থেকে আসার পর নিজের জুতা এবং কোটও একইভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

সামাজিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চললে এক্ষেত্রে খুব বেশি নিজের হাত ধোয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

স্বাস্থ্য সেবা

ডা. জেনিফার লি ভাইরাস প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কাজে চিকিৎসকের কাজে যাওয়া কমাতে বলেছেন। নিয়মিত দাঁত পরীক্ষা এর একটি উদাহরণ।

এই অবস্থায় সত্যি সত্যি যদি আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে অবশ্যই নিয়মিত চিকিৎসা নিতে পারেন। কিন্তু যদি মনে করেন আপনার কোভিড-১৯ তে সংক্রমণ হয়েছে তাহলে অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

ডা. লি বলেন, আমি মনে করি স্বাস্থ্য নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগে ভোগার চাইতে বরং কর্তৃপক্ষের দেওয়া সতর্ক থাকার গাইডলাইন মেনে চলাটাই বেশি কার্যকর উপায়।

Previous articleসারাক্ষণ করোনার খবর দেখবেন না
Next articleদুঃশ্চিন্তামুক্ত থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়-ডা. রমেন্দ্র কুমার সিংহ রয়েল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here