ন‌িজে‌কে নি‌জে ‌ ভালবাসুন, ন‌ি‌জের প্র‌তি যত্নশীল হ‌োন

সমস্যা:
আমি
হুমাইরা। আমার কিছু সমস্যা হয়ছোট ছোট বিষয়গুলোতে খুব প্রতিক্রিয়া করে ফেলি। ভীষণ রাগ হয়, আর সামলাতে পারি না, অথচ ব্যাপারটা ছোট থাকে। কিছুই ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে মনে হয়, অন্ধকার ঘরে চুপ করে বসে থাকি। ফোন এবং সব ধরনের যোগাযোগ অফ করে ফেললে ভালো লাগবে এমন মনে হয়। আমার সবসময় মনে হয়, আমাকে কেউ ভালোবাসে না, আম্মু আব্বুও না। আসলেই এগুলো কোনো প্রবলেম? কেন হয় এইসব? এইসব থেকে মুক্তি কীভাবে পেতে পারি?
পরামর্শ:  
ধন্যবাদ হুমাইরা, আপনার অনুভুতিগুলো জানানোর জন্য এবং আপনার প্রশ্নের জন্য।
আপনার দেয়া বিবৃতি পর্যালোচনা করে জানতে পারলাম, আপনি খুব কঠিন সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, খুব খারাপ সময় পার করছেন। সেজন্য আমি আন্তরিকভাবে সমবেদনা প্রকাশ করছি।
আমি যতটুকু বুঝতে পারছি, আপনার সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আপনার বিশ্বাসকেউ আমাকে ভালোবাসে না, আম্মুআব্বু না আপনার সমস্ত হতাশা, উদ্বেগ এবং রাগের কারণ এই বিশ্বাস(nonfunctional belief)। পাশাপাশি এক ধরণের অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতাবোধও আপনাকে আঁকড়ে ধরেছে। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন। ছোটখাট ব্যাপারে রিয়েক্ট করছেন। সমাজ এবং সংসার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার চিন্তাও মাথায় আসছে।
আপনি জানতে চেয়েছেন, এটা কোনো সমস্যা কিনা। যেহেতু আপনার এই বিশ্বাস আপনার অনুভূতি এবং আচরণকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে, আপনার দৈনন্দিন জীবন, সামাজিক জীবন, পারিবারিক জীবনের উপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে ,তাই অবশ্যই এটি সমস্যা। মাদার তেরেসা বলেছেন“The most terrible poverty is loneliness, and the feeling of being unloved”.
একজন শিশুর জন্মের পর থেকে শুরু করে প্রাকশৈশব, শৈশবে তার মাবাবা এবং অন্যান্য প্রধান পরিচর্যাকারী যদি তার সাথে নিরাপদ দৃঢ় বন্ধন তৈরি করতে না পারেন অর্থাৎ insecure attachment তৈরি হয়, বাবামা যদি neglectful অথবা inconsistent অথবা harsh parenting style সন্তান প্রতিপালন করেন, মাবাবা যদি বিবাহ বিচ্ছেদে যান এবং সন্তানকে তাদের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেন, তাহলে ধরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে। আবার সবকিছু ঠিক থাকার পরও কারো মনগড়া, কাল্পণিক (imaginary) বিশ্বাস থেকেও ধরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে। নিজের প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাবোধ না থাকলে, নিজেকে তুচ্ছ মনে হলে, কোনো কারণে নিজেকে ক্ষমা করতে না পারলে, অবচেতন মনের অমীমাংসিত দ্বন্দ্ব থেকেও ধরণের সমস্যা তৈরি হতে পারে। গভীর আবেগীয় এবং প্রেমময় সম্পর্কে থাকার পর জীবন থেকে কেউ হারিয়ে গেলে এমন হতে পারে।
তবে আশাহত হবেন না। আপনার এ ধরণের বিশ্বাসের মূলে যে কারণ রয়েছে তা খুঁজে দেখুন। বড় কোনো বিপর্যয় ঘটার আগেই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে এই non-functional belief থেকে বের হয়ে আসুন। পাশাপাশি Tab. Sertraline 25 mg সকালে টা করে / সপ্তাহ খান।
পরিশেষে বলবো, নিজেকে নিজে ভালোবাসুন, নিজের প্রতি যত্নশীল হোন, কোনো কিছু প্রত্যাশা না করে অন্যকে ভালবাসতে শিখুন। মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জীবনকে পরিচালিত করুন। হতে পারে কোনো একদিন সমস্ত পৃথিবী আপনাকে ভালোবাসবে।
পরামর্শ দিচ্ছেন,
ডা. সাইফুন নাহার সুমি


দৃষ্টি আকর্ষণ- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে question@www.monerkhabor.com এই ইমেলের মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন।

Previous articleঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠ এশিয়ান সিবিটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত
Next articleভালোবাসাকে উস্কে দেওয়ার জন্য গান প্রয়োজন: শহীদুল্লাহ ফরায়জী
সহকারি অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here