এখনো আমি লুকিয়ে লুকিয়ে নেশা করি

প্রশ্ন: আমি আপনাদের মনের খবরের  একজন নিয়মিত পাঠক বলতে পারেন। যখন থেকে অনলাইনে এই পত্রিকাটি এসেছে তখন থেকেই প্রতিদিন এটা একবার অন্তত খুলে দেখি। নতুন নতুন বিষয় আমাকে আকৃষ্ট করে। আমার বন্ধুদেরকেও পড়তে বলি। আমার মতো আরো কয়েকজন এখন নিয়মিত পাঠক। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নিজেরাও আলোচনা করি।
আমার নিজের একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের কাছে প্রশ্ন করবো বলে ঠিক করে রেখেছিলাম। অপেক্ষা করছিলাম প্রশ্ন করার জন্য কোন বিভাগ আপনারা চালু করেন কিনা। এর মধ্যে একদিন একটা নোটিশও দেখলাম। পরে দেখলাম, কোনো উত্তর আসছে না। তাই আমিও আর প্রশ্ন করি নি। যাহোক আজ করছি। আমার যে বন্ধুরা আপনাদের পত্রিকাটি পড়ি তাদের মধ্যে কয়েকজন  নেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। প্রথম দিকে ফেনসিডিল খেতাম, পরের দিকে ইয়াবা। তবে আমি কখনো গাঁজা খাইনি। এর মাঝে আমাদের কেউ কেউ  চিকিৎসা নিয়ে নেশা ছেড়ে দিয়েছে। অন্যদের কাছে আমিও বলি নেশা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু সত্যি কথা হলো, আমি এখনো ছাড়িনি। আগের থেকে কম নিলেও, এখনো আমি লুকিয়ে লুকিয়ে নেশা করি। আমি জানি, ওদের মাঝে দুএকজন আছে তারাও নেশা ছাড়েনি। কিন্তু সামনা সামনি সবাই বলি আমরা নেশা করি না। নেশার কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে। আমি নিজেও নেশা ছাড়তে চাই। চেষ্টাও করি। প্রতিদিনই বলি আর নেশা করবো না। কিন্তু পারছি না।
আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি কয়েক বছর বিদেশে ছিলাম। ইউরোপের একটা দেশে ছিলাম। দেশে ফিরেছি, ২০০৭ সালে। এখন আমি একটা প্রাইভেট জব করছি। আমার বয়স ৩৫, বিবাহিত। আমার একটি মেয়ে আছে। আমার আবার চলে যাবার কথা ছিলো। কিন্তু যেতে পারি নি। নেশাও একটা ভয়, যদি গিয়ে আবার কোনো ঝামেলা হয়। তাই খুব বেশি চেষ্টাও করি না।
এমনিতে আমাকে দেখলে কেউ বোঝে না যে আমি নেশা করি। এখন আমি কিভাবে এই নেশা থেকে দূরে থাকতে পারি?
পরামর্শ: আপনি মনের খবরের নিয়তিম পাঠক জেনে ভালো লাগলো। পরবর্তীতে সুযোগ হলে জানাবেন, কেমন হচ্ছে মনের খবরের লেখা এবং অন্য বিষয়গুলো। আর কি কি থাকতে পারে, জানাতে পারেন। আমাদের কাছে প্রশ্ন করার জন্যও আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনি যেহেতু নিয়মিত পড়েন, তাহলে অবশ্যই আমাদের মাদকাসক্তি বিভাগটি আপনার চোখে পড়েছে। সেখানে নেশা বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দেওয়া আছে। দীর্ঘ দিন নেশা যারা করেন, তাদের চিন্তা-ভাবনা আচার-আচরণে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন ঘটে। একসময় চিন্তাশক্তিও লোপ পায়, বিবেক বোধ কমে আসে।
আপনি লিখেছেন, আপনাকে দেখে কেউ বোঝে না যে আপনি নেশা করেন। সুতরাং আপনার পরিবর্তনগুলো খুব সম্ভব বেশি হয়নি। তাছাড়া আপনি যেহেতু নিজে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং চাচ্ছেনও নেশা ছাড়তে আপনার জন্য অবশ্যই বিষয়টি অন্যদের থেকে সহজ হবে। আপনার বন্ধুদেরও ধন্যবাদ। যারা নেশা ছেড়েছেন এবং যারা চেষ্টা করছেন ছেড়ে দেবার জন্য। আপনার কাছ থেকে আরো কয়েকটি বিষয় জানার ছিলো। যেমন- আপনি কি পরিমাণে নেশা করেন, নেশা না করলে আপনার কী ধরনের কষ্ট হয়, আপনার নেশার বিষয়ে পরিবার অর্থাৎ আপনার স্ত্রী বা অন্যরা কতটুকু জানেন। তারা আপনাকে কতটুকু সাহায্য করবেন। এসব প্রত্যেকটি বিষয় নেশার চিকিৎসার জন্য জানা খুবই জরুরী।
মনে রাখবেন, নেশা করা বা নেশায় আসক্ত হওয়া একটি রোগ। এটিকে শুধু সাধারণ একটি অভ্যাস বা বদভ্যাস বলে বসে থাকলে চলবে না। সুতরাং বিষয়টি আরো দশটা রোগের গুরুত্ব দিয়েই চিকিৎসার আওতায় আনা উচিত। বরং এক্ষেত্রে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এমনি এমনি এই অভ্যাস ছাড়ানো সত্যিই কঠিন। আপনাকে অনুরোধ করবো, অবশ্যই আপনি একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা শুরু করুন।
আপনার ক্ষেত্রে হাসাপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন না হলেও, আরো বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যেমন- প্রয়োজনীয় ওষুধ, সাইকোথেরাপি এবং অন্যান্য সহযোগিতা। আপনার পরিবারের অন্যদের সহযোগিতাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আপনার সদিচ্ছাকে সাধুবাদ জানাই।
লুকিয়ে লুকিয়ে এসব করা থেকে একেবারে ছেড়ে দেওয়ার যে চিন্তা আপনি করেছেন সেটাকে গুরুত্ব দিন। কোনো কারণে সে ইচ্ছা যদি আবার কমে আসে বা পরিবর্তন হয়ে যায় সেটাও আপনার জন্য আরো বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে। সুতরাং দেরি করবেন না।

Previous articleমানসিক সুস্থতার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়েছেন বহু তারকা  
Next articleঅতিরিক্ত টুইটার ব্যবহারে হতে পারে মনোবৈকল্য
চেয়ারম্যান, মনোরোগবিদ্যাি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here