মানসিক সুস্থতার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়েছেন বহু তারকা  

0
49
ইউটিউবে সুপারম্যান নামেই পরিচিত লিলি সিং। ২০১০ সাল থেকে ভিডিও তৈরি শুরু করেন জনপ্রিয় কানাডিয়ান এই ইউটিউব তারকা এবং নেটিজেনদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার ইউটিউব চ্যানেলের বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা এক কোটি ৪৫ লাখ। কিন্তু গত সোমবার আকস্মিকভাবে ইউটিউব থেকে বিরতি নেয়ার ঘোষণা দেন এ তারকা। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মনোযোগ দিতেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা যায়।
লিলি সিং তার ইউটিউব চ্যানেলে সোমবার ‘শিগগিরই তোমাদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে’ শীর্ষক একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থেকে এভাবে বিরতি নেয়ার কারণ সম্পর্কে সেখানে তিনি বলেন, ভক্ত কিংবা ইউটিউবের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ইস্যুর কারণে বিরতি নেয়ার এ সিদ্ধান্ত নেননি তিনি। বরং ধারাবাহিকভাবে ভিডিও তৈরি এবং নতুন নতুন কনটেন্ট সৃষ্টি তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।
কেন বিরতি নিচ্ছেন তা ব্যাখ্যা করে তিনি আরো বলেন, ‘আমি মানসিক, শারীরিক, আবেগগত দিক ও আধ্যাত্মিকভাবে ক্লান্ত। আমি আট বছর ধরে ইউটিউবে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছি। বহু বছর ধরে আমি সপ্তাহে দুটি ভিডিও তৈরি করেছি। সেইসাথে দৈনিক ব্লগ লেখালেখি তো আছেই।’
লিলি তার ভিডিওতে জানান, তিনি তার বর্তমান কাজ নিয়ে সুখী নন। বিরতি নেয়ার অনেকগুলো কারণের মধ্যে মূল কারণ ছিল তার মানসিক স্বাস্থ্য। ‘আমি সুখী নই। আমি মনে করি না যে আমি সম্পূর্ণরূপে মানসিকভাবে সুস্থ,’ বলছিলেন তিনি।
শুধু লিলি সিং-ই নন, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সেলেনা গোমেজ, আরিয়ানা গ্রান্দে ও এড শিরানের মতো অনেক বড় বড় তারকাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। এমনকি, কিম কারদাশিয়ান – যিনি তার অনেকটা সময়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটান – প্যারিসে ডাকাতির শিকার হওয়ার পর কয়েকমাস ইনস্টাগ্রাম থেকে বিরতি নিয়েছিলেন।
ডায়ালেক্টিক্যাল বিহেভিয়র থেরাপি নিয়ে সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী সেলেন গোমেজ। ২৬ বছর বয়সী এ গায়িকা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ২৪ সেপ্টেম্বর এক প্রকার ঘোষণা দিয়েই তিনি তার মানসিক সুস্থতার উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিরতি নিয়েছিলেন।
সেলেনা গোমেজের সাবেক বয়ফ্রেন্ড ও কানাডিয়ান কণ্ঠশিল্পী জাস্টিন বিবার ২০১৬ সালে তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তার তখনকার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ভক্তকূলের অরুচিকর কমেন্টের জেরেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা যায়। পুরো এক বছর বিরতি নিয়েছিলেন তিনি।
বুলিং, হয়রানি ও অরুচিকর কমেন্টের মুখোমুখি হওয়া-সহ নানাবিধ কারণে, তারকারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিরতি নিয়ে থাকেন। এছাড়া, এটিও একটি পরিচিত সত্য যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্রাউজিংয়ের অনেক সময় ব্যয় হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায়, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত বেশি সময় কাটাই, তত বেশি বিরক্তিকর ও নিঃসঙ্গ হয়ে উঠি। শুধু তাই নয়, অত্যধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার আপনাকে বিষণ্নতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
তারকাদের পাশাপাশি আমাদের সকলেরই মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বিরতি নেয়া আবশ্যক। সেই সঙ্গে এটি অনুধাবন করাও  গুরুত্বপূর্ণ যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তির ফলে আমরা আমাদের জীবনকে ক্লান্তিকর/বিরক্তিকর করে তুলছি।
যদিও মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতায় কতক্ষণ অনলাইন ব্যবহার করা উচিত তার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। তবে ৩০ মিনিটেরও কম সময় অনলাইন ব্যবহার আপনার সামগ্রিক কল্যাণ বয়ে আনবে বলেই মনে করছেন গবেষকরা।
অনুবাদ করেছেন: আছিয়া নিশি
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া 
Previous articleসিজোফ্রেনিয়া নিয়ে বৃহ:বার রাতে মনের খবর ফেসবুক লাইভ
Next articleএখনো আমি লুকিয়ে লুকিয়ে নেশা করি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here